কিন্তু কী এই 'বিষের বড়ি' যা নিয়ে ঝড় উঠেছে গোটা বিশ্বের শিল্প মহলে?
এই বিষয়ে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে এই বিষের বড়ি হল একটি বাড়তি অর্থনৈতিক বোঝা। বিশ্বের যে কোনও শিল্পপতি যদি অন্য কোনও সংস্থাকে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে টেকওভার করতে চান তাহলে তাঁর সামনে দেওয়া হয় একাধিক আর্থিক শর্ত। এমনকী শর্ত প্রদানকারীরা আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া বা রুগ্নপ্রায় সংস্থাগুলির পক্ষে দাঁড়িয়ে টেক ওভার করা ওই সংস্থার ওপর আর্থিক শর্তগুলি চাপিয়ে দেয়। যাতে ওই সংস্থা আর্থিক শর্ত মেনে ওই রুগ্নপ্রায় কোম্পানিকে টেক ওভার করতে না পারে। এককথায় বলতে গেলে এটি একটি আর্থিক ডিভাইস যার জোরে কোম্পানিগুলি কয়েক দশক ধরে তাদের এই কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে গোটা বিশ্ব জুড়ে। এমনকা প্রতিটি বিষের বড়ির উপাদান ভিন্ন হয়। কিন্তু সেগুলি সবই এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে কর্পোরেট বোর্ডগুলিকে আরও বেশি পরিমান মূলধন বিনিয়োগ করে তবেই বাজারের যে কোনও কোম্পানিকে টেকওভার করতে হয়।
advertisement
আরও পড়ুন : বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী! বাংলার বিশ্ববঙ্গ সম্মেলনে 'সর্ববৃহৎ' প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছে ব্রিটেন
এত নাম থাকতে বিষের বড়ি-ই বা কেন? তা আসলে কী?
এ বিষয়ে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এটি একটি অর্থনৈতিক কৌশল। যে কৌশলটি প্রথম ১৯৮০-র দশকে জনপ্রিয় হয়েছিল যখন কার্ল আইকানের (Carl Icahn) মতো শিল্পপতিকে ব্যবসায়িকভাবে এই বিষের বড়ি নামের কৌশল প্রয়োগ করে আটকে রাখার প্রচেষ্টা করা হয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ট্যুইটার পেজে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এই অর্থনৈতিক কৌশল অর্থাৎ বিষের বড়ি প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, এটি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কাছে আরও তথ্য সরবরাহ করবে। সুদুর মার্কিন মুলুকের সান ফ্রান্সিসকো কোম্পানিগুলোর যৌথ প্রয়াসে এই পরিকল্পনাটি বিষয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বলা হয়েছে, একজন শেয়ারহোল্ডারকে ১৫ শতাংশ বা তার বেশি শেয়ার জমা করতে হবে, যেখানে আমেরিকান স্টক এক্সচেঞ্জ অর্থাৎ শেয়ার বাজারে ওলন মাস্কের শেয়ার রয়েছে মাত্র ৯ শতাংশ।
আরও পড়ুন : আজ বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি রাজ্যের এই জেলাগুলিতে, কলকাতায় বৃষ্টির সম্ভাবনা কবে ?
শেষ পর্যন্ত তাহলে 'বিষের বড়ি' কি একটি অর্থনৈতিক চক্রান্ত?
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এটি কোনও চক্রান্ত নয়। এটি একাধিক কোম্পানির দ্বারা সম্মিলিত একটি অর্থনৈতিক কৌশল মাত্র। অবাঞ্ছিত দখল বা টেকওভারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতেই এই সম্মিলিত প্রচেষ্টা জারি রয়েছে বহুকাল আগে থেকেই। এমনকী বিশেষজ্ঞরা বলেছেন এই বিষের বড়ি অর্থাৎ অর্থনৈতিক কৌশলগুলি প্রায়শই আরও আলোচনার দরজা খুলে দেয়। প্রকৃত পক্ষে, এই কৌশলটির মাধ্যমে দুটি কোম্পানির মধ্যে টেকওভারের চুক্তিকে আরও প্রসারিত ও গঠনমূলক করে তোলা হয় এবং ওই চুক্তিটির উচ্চ মূল্য বোর্ডের কাছে বোধগম্য হয়। যার ফলে ওই কোম্পানিটি বিক্রি হওয়ার সময়ে যাবতীয় তথ্য প্রত্যেকের কাছে আরও স্বচ্ছ হয়ে ওঠে।
সাম্প্রতিক ট্যুইটার পেজে বিষের বড়ি নিয়ে এলন মাস্কের প্রতিক্রিয়া কী?
এ বিষয়ে তাঁর ট্যুইটার পেজে পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন টেসলার কর্ণধার এলন মাস্ক। বর্তমানে তাঁর ট্যুইটার পেজে ফলোয়ারের সংখ্যা ৮২ মিলিয়ন। তিনি বলেছেন, এই অর্থনৈতিক মারপ্যাঁচ বা কৌশলের বিরুদ্ধে তিনি শেষ পর্যন্ত আদালতের দরজায় যেতেও কসুর করবেন না। এই বিষয়ে আলোকপাত করে এলন মাস্ক সরাসরি বলেছেন, বর্তমানে ৪৩ মিলিয়ন টাকার অঙ্কের বিড ট্যুইটারে তার জন্য সেরা এবং চূড়ান্ত অফার। তবে ট্যুইটারে স্টক এক্সচেঞ্জে সম্মিলিত কোম্পানিগুলোর তরফ থেকে বিষের বড়ি নামের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ২৬৫ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর চূড়ান্ত নিষ্পত্তি এখনও হয়নি, শেষ পর্যন্ত এলন মাস্ক কী করেন সেটাই এখন দেখার!