২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি ভারতে করোনাভাইরাস টিকাকরণ (Covid Vaccination)শুরু হয়েছিল। চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি থেকে ১৫-১৮ বছর বয়সীদের টিকাকরণ শুরু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩ কোটিরও বেশি শিশু কোভিড টিকা (Covid Vaccine) পেয়েছে। বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ একটি নির্দিষ্ট বয়সের বাচ্চাদের কোভিড টিকা দেওয়া শুরু করেছে। ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA) আরও এক ধাপ এগিয়েছে। তারা ১২-১৫ বছর বয়সী শিশুদের বুস্টার ডোজ দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে। এছাড়াও, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ডোজের মধ্যবর্তী ব্যবধান পাঁচ মাস পর্যন্ত কমিয়েছে। আসুন এই প্রতিবেদনে আমরা জেনে নিই বিশ্বে শিশুদের জন্য উপলব্ধ সমস্ত করোনাভাইরাস টিকাগুলি সম্পর্কে।
advertisement
ভারতে অনুমোদিত কোভিড টিকা: বর্তমানে, ভারত প্রায় পাঁচটি কোভিড টিকা অনুমোদন করেছে। সেগুলি হল-ভারত বায়োটেকের (Bharat Biotech) কোভ্যাক্সিন (Covaxin), জাইডাস ক্যাডিলার (Zydus Cadila) জাইকোভ-ডি (ZyCoV-D), সেরাম ইনস্টিটিউটের (Serum Institute) কোভোভ্যাক্স (Covovax), বায়োলজিক্যাল-ই (Biological E)-র আরবিডি (RBD) এবং জনসন অ্যান্ড জনসন (Johnson & Johnson) এবং অ্যাড 26COV.2S টিকা। যাই হোক, আপাতত ভারতে শিশুদের জন্য উপলব্ধ একমাত্র টিকা হল ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন। এটি ১২-১৮ বছর বয়সীদের জন্য জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যদিও জইডাস ক্যাডিলার জাইকোভ-ডি টিকা ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়ার (DCGI) কাছ থেকে ২০ অগাস্ট জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পেয়েছে। তবে এটি এখনও দেশে চালু করা হয়নি। এটি আসলে ১২-১৮ বছর বয়সীদের দেওয়ার জন্য অনুমোদিত প্রথম টিকা।
আরও পড়ুন- করোনা মোকাবিলায় ফের চ্যালেঞ্জ, নয়া ভ্যারিয়ান্ট Flurona নিয়ে কী জানা যাচ্ছে?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশগুলিতে: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (USA) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) অন্তর্ভুক্ত দেশগুলিতে ফাইজার-বায়োএনটেক-এর (Pfizer-BioNTech) কোভিড টিকা শিশুদের দেওয়া হচ্ছে। ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সি ফাইজার-বায়োএনটেকের লো-ডোজ টিকা ৫-১১ বছর বয়সীদের জন্য ব্যবহার করার অনুমোদন দিয়েছে। ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনও (FDA) শিশুদের জন্য ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। ৫-১৮ বছর বয়সীদের এই টিকা দেওয়া হচ্ছে।
মডার্নার টিকা: সুইৎজারল্যান্ড ১২-১৫ বছর বয়সীদের জন্য ফাইজার (Pfizer) এবং মডার্না (Moderna)-র টিকার অনুমোদন দিয়েছে। ইতালি ১২-১৭ বছর বয়সীদের জন্য মডার্না-র টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে।
চিনের সিনোফার্ম এবং সিনোভাক টিকা: বিশ্ব স্বাস্থ্য় সংস্থা জানিয়েছে যে চিনের (China) সিনোফার্ম (Sinopharm) এবং সিনোভ্যাক (Sinovac) টিকা ওমিক্রন প্রজাতি থেকে গুরুতর অসুস্থতা, হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর বিরুদ্ধে কিছুটা সুরক্ষা প্রদান করতে পারে। এক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি হ্রাস সত্ত্বেও টিকা কিছুটা সুরক্ষা দেয়। চিনে ৩ বছর বা তার বেশি শিশুদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়া ৬ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য সিনোভাক অনুমোদন করেছে। আর্জেন্টিনা (Argentina) ৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের সিনোফার্ম টিকা দিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের দিকে তাকালে বাহরাইন (Bahrain) ৩-১১ বছর বয়সী শিশুদের জন্য সিনোফার্ম টিকা দেওয়ার জন্য অনুমোদন দিয়েছে।
আরও পড়ুন- সন্তানকে কি কোভিড টিকা দেওয়া উচিত? টিকার সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী কী?
কিউবার আবদালা এবং সোবেরনা টিকা: গত সেপ্টেম্বরে কিউবা (Cuba) ২-১০ বছর বয়সী শিশুদের জন্য টিকাকরণ শুরু করে। কারণ ওই দেশে ডেল্টা প্রজাতির (Delta Variant) কারণে সংক্রমণ মারাত্মক আকার নিয়েছিল। কিউবা দু'টি স্বদেশি টিকা তৈরি করেছে। সেগুলি হল আবদালা (Abdala) এবং সোবেরানা (Soberana)। দু'টি টিকাই তিন ডোজের। আবদালা ও সোবেরানা নিরাপদ এবং কার্যকর বলে দাবি করেছে দেশটি। নভেম্বরের শুরুতে ভেনেজুয়েলা (Venezuela) বলেছিল যে তারা ২-১১ বছর বয়সীদের কিউবার সোবেরানা টিকা দিচ্ছে।
সন্তানের টিকাকরণ নিয়ে বাবা-মায়েদের কি দ্বিধা রয়েছে?
যখন কোভিড (Covid-19) বা অন্য কোনও রোগের বিরুদ্ধে টিকা নেওয়ার কথা আসে, তখন অনেক অভিভাবক দ্বিধায় থাকে। তারা তাদের বাচ্চাদের এমন রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসার ধারণায় বিশ্বাস করে না যার সম্পর্কে তাদের সীমিত জ্ঞান রয়েছে। তারা যুক্তি দেয় যে তাদের বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিকের সংস্পর্শে না এনে প্রাকৃতিকভাবে অনাক্রম্যতা তৈরি করা ভালো। এছাড়াও, অনেক অভিভাবক ধর্মীয় মতাদর্শের ভিত্তিতে, টিকার কার্যকারিতা এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবের ভয়ে সন্তানদের টিকাকরণ করায় না।
সন্তানের টিকাকরণ করানো কি উচিত?
বর্তমানে কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বাচ্চাদের টিকা দেওয়া সর্বোত্তম উপায়। কোভিড টিকা (Vaccine) নিলেই ভাইরাসের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে না। তবে ঝুঁকি অবশ্যই কমে, সংক্রমণ তীব্রতার সম্ভাবনা হ্রাস করে এবং হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি হ্রাস করে। এছাড়াও করোনাভাইরাস ক্রমাগত নিজেকে পরিবর্তন করছে, যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং স্বাস্থ্যের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। টিকা ১০০ শতাংশ সুরক্ষা প্রদান নাও করতে পারে, তবে এটি গুরুতর সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে পারে; হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে পারে। ডেল্টা (Delta Variant) প্রজাতির কারণে সৃষ্ট করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এটা প্রমাণ করেছে যে শিশুরা ভাইরাসের একমাত্র বাহক নয়, যেমনটা আগে বিশ্বাস করা হয়েছিল। শিশুদের মধ্যেও গুরুতর উপসর্গ দেখা দিতে পারে, তারাও সংক্রমণ পরবর্তী জটিলতায় ভুগতে পারে। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে সন্তানকে অবশ্যই টিকা দেওয়া জরুরি।
টিকার সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী হতে পারে?
বাচ্চাদের জন্য অনুমোদিত টিকাগুলির কার্যকারিতা এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side Effects) কঠোরভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। তার পরেই, সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া (Drugs Controller General of India) দ্বারা অনুমোদিত হয়েছে। সুতরাং, এর কার্যকারিতা এবং এর সঙ্গে জড়িত জটিলতা সম্পর্কে চিন্তা করার দরকার নেই। ক্লিনিকাল ট্রায়াল থেকে জানা গিয়েছে যে টিকা গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না। জ্বর, ইনজেকশন নেওয়ার জায়গায় ব্যথা, লাল হয়ে যাওয়া, তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব, শরীরে ব্যথা এবং ক্লান্তির মতো সামান্য অস্বস্তি হতে পারে, যা কয়েকদিনের মধ্যেই চলে যায়। টিকা নেওয়ার পরে এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো দেখা দেওয়া আসলে এটির লক্ষণ যে বাচ্চার শরীর ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করছে।