২০২০ সালের ২৩ মার্চ কোভিড অতিমারীর কারণে আন্তর্জাতিক অসামরিক বিমান চলাচলে প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।সেই নিষেধাজ্ঞা পরবর্তী সময়ে বহুবার বাড়ানো হয়। এছাড়াও করোনা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে দ্বিপাক্ষিক বিমান চলাচলের অনুমতি দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে 'বায়ো বাবল ব্যবস্থাপনা' চুক্তি (Air Bubble Agreement) স্বাক্ষর করে ভারত। এই দেশগুলি থেকে ভারতে ও ভারত থেকে ওই দেশগুলিতে শর্ত সাপেক্ষে বিমান চলাচল শুরু হয়েছিল। তবে ২৭ মার্চের সময়সীমার পরে ওই চুক্তির সীমা আর বাড়ানো হবে না।
advertisement
পরিষেবা প্রাথমিকভাবে গত বছরের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে পুনরায় চালু করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, কিন্তু ওমিক্রন (Omicron) সংক্রমণ সেই পরিকল্পনায় জল ঢেলে দেয়। কিন্তু দেশে সংক্রমণ কমে যাওয়ার কারণে সরকার আবারও পরিষেবা চালু করতে তৎপর হয়েছে। প্রথমত, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক (MoHFW) ৮২টি দেশকে তালিকাভুক্ত করেছে যেখানে টিকা গ্রহণের জন্য পারস্পরিক ব্যবস্থা রয়েছে। এই দেশগুলি থেকে আসা যাত্রীদের কোয়ারান্টিনে থাকতে হবে না, তবে স্ব-পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে। এছাড়াও, টিকা নেওয়া থাকলে আরটি-পিসিআর টেস্টের (RT-PCR Test) প্রয়োজনীয়তাও দূর করা হয়েছে।
আরও পড়ুন : চুরি গেল রুপোর বাঁশি ও বহুমূল্য অলঙ্কার, মন্দিরে দুঃসাহসিক চুরি ঘিরে চাঞ্চল্য নবদ্বীপে
এয়ারলাইনের জন্য এর গুরুত্ব কী?
ইন্ডিগো (IndiGo): ইন্ডিগো সর্বদা আন্তর্জাতিকভাবে পরিষেবা বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা বলেছে। যদিও অতিমারী শুরু আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে এই বিমান সংস্থার মোট নির্ধারিত প্রস্থানের মাত্র ৮.৮৩ আন্তর্জাতিক রুটে ছিল। যদিও ইন্ডিগো দ্রুত তার সমগ্র আন্তর্জাতিক পোর্টফোলিও পুনরায় চালু করতে সক্ষম নাও হতে পারে। তুর্কি, এয়ার ফ্রান্স-কেএলএম এবং আমেরিকান এয়ারলাইন্সের মতো এই সংস্থাটি ধর্মীয় পর্যটনে ফোকাস করে। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রার টিকিট বিক্রি বাড়বে।
স্পাইসজেট (SpiceJet): অনেকেই মনে করেছিলেন যে এয়ারলাইনটি কোভিড-কালে তলানিতে নেমে যাবে, কিন্তু ব্যাপ্তি না বাড়লেও এটি তাদের ব্যবসা ধরে রেখেছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অতীতে স্পাইসজেটের কোনও ঝুঁকিপূর্ণ নেটওয়ার্ক ছিল না। এই সংস্থার মোট যাত্রী পরিবহন ক্ষমতার প্রায় এক-চতুর্থাংশই আন্তর্জাতিক রুটের। যদি সংস্থাটি তার বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক ফ্লাইট আবারও শুরু করে তাহলে হার আরও বাড়তে পারে। এমিরেটস বিমান সংস্থার চুক্তি এবং রাস আল খাইমাহতে হাব তৈরির ঘোষণা করেছিল স্পাইসজেট। যার কোনওটিই প্রাক-অতিমারীতে বাস্তবায়িত করেনি। এই ঘোষণাগুলি দিনের আলো দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কি না তা আগামীদিনে জানা যাবে।
আরও পড়ুন : অবশেষে পোষ্যকে নিয়েই যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে নিজের বাড়িতে ফিরলেন শাহরুখ
এয়ার ইন্ডিয়া এবং এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস (Air India and Air India Express): এয়ার ইন্ডিয়ার মালিকানা গিয়েছে টাটা গোষ্ঠীর হাতে। যদি কোনও বিমানসংস্থা ভাল ব্যবসা করতে পারে, সেটা হবে এয়ার ইন্ডিয়া। এয়ার ইন্ডিয়ার মোট যাত্রী পরিবহন ক্ষমতার ৬৯.৯ শতাংশ হল আন্তর্জাতিক রুটের। যা মোট বিমান পরিষেবার ২৫.৬ শতাংশ।
রিলিফ ফ্লাইট, 'বন্দে ভারত মিশন'-র অধীনে এয়ার ইন্ডিয়া এবং এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস একচেটিয়া পরিষেবা দিয়েছিল। প্রতিযোগিতার অভাব, নন-স্টপ ফ্লাইটের পক্ষে নিয়ম এবং সর্বোচ্চ ক্ষমতা স্থাপনের অর্থ হল যে এয়ারলাইনটি এই সময়ে সেরা। তবে সেই দৌড় শেষ হয়ে যেতে পারে, কারণ যাত্রীদের বুক করার জন্য আরও বেশি পছন্দ রয়েছে এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিমান সংস্থাগুলি ভারতে পুরোদমে ফিরে আসছে।
ভিস্তারা (Vistara): অতিমারির সময়েই এয়ারলাইনটি আন্তর্জাতিক রুটে বড় বিমান চালানো শুরু করেছিল। যদিও পরিষেবা চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। সংস্থাটি বোয়িং ৭৮৭ বিমান হাতে পাওয়ার পরপরই বিশ্বব্যাপী লকডাউন শুরু হয়ে যায়। এখন যখন সবকিছু আস্তে আস্তে খুলে যাচ্ছে তখন এর ব্যবসাও প্রসারিত হতে পারে।
আরও পড়ুন : বানের জলে ভেসে গিয়েছে বইখাতা, কীভাবে মাধ্যমিক দিচ্ছে এই চার কিশোর? জানলে হতবাক হয়ে যাবেন
গোফার্স্ট (GoFIRST): আন্তর্জাতিক রুটে এই সংস্থার সীমিত উপস্থিতি রয়েছে। এয়ারলাইনটি একটি বিক্রয় নেটওয়ার্কে বিনিয়োগ করেছিল এবং অতিমারীর আগে ব্যবসা বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা করেছিল। আইপিও আনার পরিকল্পনাও ছিল এই সংস্থার। যাত্রী টানার জন্য এই বিমান সংস্থাটি নিশ্চয় কিছু পরিকল্পনা নিয়ে আসবে এবার।
পর্যটন ও ব্যবসায় ব্যাপক প্রভাব: অতিমারির কারণে বিমান পরিষেবা, ভ্রমণ এবং হসপিটালিটি ইকোসিস্টেম সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ভারতের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলি আগের চেয়ে বেশি ছিল। গত ত্রৈমাসিকে ইন্ডিগো এবং স্পাইসজেট, উভয় সংস্থা মুনাফার মুখ দেখেছে। পর্যটকরা ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত প্রতিটি সম্ভাব্য জায়গায় ভিড় করছেন। মালদ্বীপ সব বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পর এয়ারলাইন এবং হোটেল ব্যবসার উন্নতি দেখা গিয়েছে। ভারতেও সবকিছু খুলে দেওয়া উচিত যাতে আন্তর্জাতিক পর্যটকরা আকৃষ্ট হতে পারে। যদিও এটি তেলের দামের উর্ধ্বগতি, টাকার পতন এবং যুদ্ধ পরিস্থিতি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।