দীর্ঘ পথ-চলার মাঝে গান শুনলে বেশ মনটাও ভালো হয়ে যায়। আর সেই কারণেই বহির্জগতের অবান্তর অবাঞ্ছিত শব্দ যাতে হেডফোনের মধ্যে দিয়ে কানে প্রবেশ করতে না পারে, তার জন্য উন্নত মানের হেডফোন বা ইয়ার বাডের দরকার।
বিশেষ ভাবে তৈরি করা হেডফোনগুলির (headphone) জন্য অ্যাকটিভ নয়েজ ক্যানসেলেশনের (Active Noise Cancellation) মতো একটি মানদণ্ড সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। যেমন কর্ণকুহরে প্রবেশের সময় হেডফোনের শব্দ-রোধী ব্যবস্থা কতটুকু কার্যকর, তা-ও নির্ভর করে উপযুক্ত শব্দের প্রক্ষেপণের উপর।
advertisement
বিশেষ করে আধুনিক হেডফোনগুলি পর্যাপ্ত ফিচার নিয়ে বাজারে এসেছে। যার মধ্যে দীর্ঘ সময়ের সক্রিয় ব্যাটারি, ব্লুটুথ, টাচ্ বাটন, সেন্সর-সহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির নানান ব্যবস্থা রয়েছে।
আধুনিক মানের হেডফোন গুলিতে পরিবেশ প্রকৃতি থেকে আগত বিভিন্ন রকম শব্দ ফিল্টারের মতো আটকে যাবে, কেবল মাত্র হেডফোন বা ইয়ারফোনে আধুনিক প্রযুক্তির বা উন্নতমানের শব্দ শোনা যাবে। অর্থাৎ শ্রোতা-দর্শক হেডফোন লাগিয়ে কানে যা শুনতে চাইছেন, তা-ই কেবল শুনবেন।
আবার আমরা এ-ও জানি যে, হেডফোন দিয়ে গান শোনা শ্রবণশক্তি নষ্টের কারণ হতে পারে। শব্দ দূষণে যেমন শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনি হেডফোনের কারণেও একই সমস্যা হয়ে থাকে। ২০১০ সালের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, ৮০ শতাংশ কিশোরী তাদের মিউজিক ডিভাইসে হেডফোন লাগিয়ে গান শোনার ফলে শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাসের শিকার হয়েছেন।
উচ্চশব্দে গান শুনলে কানের ক্ষতি হতে পারে, তাই সর্বদা শব্দের মাত্রা কমিয়ে শোনা উচিত। আর এই ব্যাপারে সদা-সচেতন থাকতে হবে। আবার কানের জন্য নিরাপদ কিংবা অন্তত শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাসের মতো সমস্যা কমাতে পারে, এমন বিশেষ ধরনের হেডফোনও রয়েছে বর্তমান বাজারে।
বিভিন্ন ধরনের হেডফোন এবং ইয়ারবাড বা ইয়ারফোন পাওয়া যায়। যেমন– ব্লুটুথ (bluetooth) প্রযুক্তির ছোট্ট ইয়ারবাড থেকে শুরু করে নয়েজ ক্যানসেলিং প্রযুক্তির বড় হেডফোন। তবে হেডফোন বা ইয়ারফোনে ইয়ারবাড (ফোমের মতো অংশ) থাকুক আর না-থাকুক,কানে সেটির ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত। শব্দ বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় এনভায়রনমেন্টাল নয়েজ ক্যান্সেলেশন পদ্ধতি।
এনভায়রনমেন্টাল নয়েজ ক্যানসেলেশন (ENC) এর জন্য ক্রেতারা সাধারণত হেডফোন, ইয়ার ফোন বা উন্নতমানের ইয়ার বাডের সন্ধান করে থাকেন। হেডফোন এবং ইয়ারবাডে পরিবেশগত গোলমাল ক্যানসেলেশন সম্পর্কে বেশির ভাগ আধুনিক ইয়ারফোন এবং হেডফোনে স্পেসিফিকেশন তুলনা করার সময় ক্রেতারা প্রায়শই এনভায়রনমেন্টাল নয়েজ ক্যানসেলেশন (ENC) নামে একটি বৈশিষ্ট্য দেখতে পান।কিন্তু এই বৈশিষ্ট্যটি আসলে কী?
একটি ভালো অডিও অভিজ্ঞতা প্রদানের জন্য ENC যে কোনও বাহ্যিক শব্দকে ব্লক করে। এটি শব্দের মান উন্নত করতে এবং কানের সুরক্ষাতেও সাহায্য করে। এখানে, আমরা আলোচনা করব কী ভাবে এই হেডফোন কাজ করে এবং কেন এক জন ব্যবহারকারীর এটিই ব্যবহার করা উচিত।
এনভায়রনমেন্টাল নয়েজ ক্যান্সেলেশন ইয়ারফোন দুই ধরনের হয়। অ্যাক্টিভ এনভায়রনমেন্টাল নয়েজ ক্যান্সেলেশন এবং প্যাসিভ এনভায়রনমেন্টাল নয়েজ ক্যান্সেলেশনের মাধ্যমে শব্দের ভারসাম্য বজায় থাকে। সাধারণত প্যাসিভ এনভায়রনমেন্টাল নয়েজ ক্যানসেলেশনের তুলনায় অ্যাক্টিভ এনভায়রনমেন্টাল নয়েজ ক্যানসেলেশন বেশি কার্যকরী।
আরও পড়ুন- বড় পরিবর্তন আসছে জি-মেলে! ৮ তারিখ থেকে পাল্টে যাবে আপনার জি-মেল
অ্যাক্টিভ এনভায়রনমেন্টাল নয়েজ ক্যান্সেলেশন কী?
বাজার থেকে উন্নত মানের আধুনিক হেডফোন কেনার সময় ক্রেতা সব সময় ভালো ইয়ারফোনের খোঁজ করে থাকেন। বিদেশ থেকে আমদানি করা এবং এই দেশের উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করা বিভিন্ন হেডফোনগুলি ইতিমধ্যেই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
ডলবি ডিজিটাল শব্দ-সহ আধুনিক পদ্ধতির শব্দ প্রক্ষেপণের জন্য হেডফোনের মাধ্যমে শব্দের স্বচ্ছ শ্রবণই হলো এই পদ্ধতি। শব্দের তরঙ্গজনিত যাবতীয় সমস্যার সমাধান ঘটিয়ে বাইরের শব্দকে ছাঁকনির মতো ছেঁকে কর্ণকুহরে প্রবেশ করায়। প্রকৃত শব্দ টিউনিংয়ের মাধ্যমে শুনতে পান শ্রোতা।
অ্যাক্টিভ নয়েজ ক্যানসেলেশনের গুরুত্ব কী?
উৎকৃষ্ট মানের হেডফোন বা ইয়ারফোনই কেবলমাত্র পারে ৪০ ডেসিবেলের মত বিভিন্ন যান্ত্রিক শব্দ-সহ একাধিক বাইরের শব্দকে রোধ করতে।
আরও পড়ুন- দামি ফোন, বড় ফিচার্স এবার মিলছে জলের দামে, ৩৩৯৯ টাকা কিনুন স্মার্টফোন
যে সমস্ত শব্দ সব সময় রাস্তা ঘাটে শোনা যাচ্ছে, যেমন– মানুষের কোলাহল, মোটর গাড়ির আওয়াজ, সবই রোধ করতে পারে এই উন্নত মানের হেডফোন বা ইয়ারফোন।
এর সমস্যাগুলো কী?
এর কিছু সমস্যাও রয়েছে। যেমন– এই উন্নত প্রযুক্তির হেডফোন বা ইয়ারফোন গাড়ির তীব্র শব্দকে রোধ করতে পারে না। ৮০ ডেসিবেলের উপর শব্দকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। যদিও রেলগাড়ি এবং প্লেনের শব্দকে রোধ করতে পারে এই হেডফোনগুলি।
অত্যাধুনিক কর্মক্ষমতা থাকায় দ্রুত ব্যাটারির কার্যক্ষমতাও শেষ হয়ে যায়। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, নিখুঁত সুরের মূ্র্ছনা এই হেডফোনে যথার্থ ভাবে আসে না। যদিও এর মধ্যে অন-অফ পদ্ধতিতে কিছুটা হলেও শব্দ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
যদিও দেখা যায় যে, প্যাসিভ এনভায়রনমেন্টাল নয়েজ ক্যান্সলেশনে পদ্ধতি থেকে বেশ কিছুটা পিছিয়েই রয়েছে এই ধরনের ইয়ারফোন। অর্থাৎ অ্যাক্টিভ এনভায়রনমেন্টাল নয়েজ ক্যান্সেলেশন। অত্যধিক কর্মক্ষমতা থাকায় এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে, যেমন– নিখুঁত শব্দ গ্রহণ করতে পারে না হেডফোনের এই পদ্ধতি।
প্যাসিভ এনভায়রনমেন্টাল নয়েজ ক্যান্সেলেশনের পদ্ধতিতে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। চর্মবান্ধব রবারের তৈরি প্যাড এবং স্পঞ্জের জন্য নিখুঁত শব্দ শোনা যায়। নয়েজ ক্যানসেলিং প্রযুক্তির হেডফোনের স্পিকার অংশ ফোম এবং অন্যান্য উপদানের আস্তরণ দিয়ে ঢাকা থাকে, যাতে হেডফোন কানে থাকা অবস্থায় তা বাইরের কোলাহল প্রতিরোধ করতে পারে।
যে সব হেডফোনে এই সুরক্ষা ব্যবস্থা নেই, সেই সব হেডফোনের স্পিকার এবং কানের পর্দা খুব কাছাকাছি অবস্থান করায় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যদি ইতিমধ্যে শ্রবণসংক্রান্ত সমস্যা থাকে, তা হলে নয়েজ ক্যানসেলিং হেডফোন ব্যবহার করাটা সেরা সমাধান হবে না। এ ক্ষেত্রে নতুন উদ্ভাবনী হেডফোন হচ্ছে, আইকিউ বাড। এই হেডফোনগুলো কানে খুব সুন্দর ভাবে বসে যায় এবং এগুলো কানে পরলে গান শোনার সময় আশপাশের কথাবার্তাও শোনা যায় না
কানকে শব্দের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচাতে হলে এমন হেডফোন ব্যবহার করি উচিত (যেমন– নয়েজ ক্যানসেলিং), যা পরিষ্কার শব্দ প্রদান করে এবং পারিপার্শ্বিক শব্দকে অগ্রাহ্য করার জন্য আপনাকে যেন ভলিউম বাড়াতে হয় না। তা ছাড়া হেডফোন সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে হবে। সব সময় অল্প ভলিউমেই গান শোনা শুরু করা উচিত এবং আস্তে আস্তে ভলিউম বাড়িয়ে নিজের স্বাচ্ছন্দ্যের পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে।
কখনওই হেডফোনে বেশি ভলিউমে অনেক ক্ষণ গান শোনা ঠিক নয়। কেননা এতে শ্রবণশক্তি মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সুতরাং এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।