ইনফ্লুয়েঞ্জা A এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা B এর মধ্যে পার্থক্য কী রয়েছে?
শীত আসতেই জ্বর সহ একাধিক সমস্যায় পড়ছেন অনেকে। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার পাশাপাশি জ্বরও হচ্ছে তাঁদের। কারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস। এই ধরনের জ্বর সারা বছর হতে পারে। কিন্তু শীতের সময়ে এর প্রকোপ বাড়ে। কারণ একটাই, শীতে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের বৃদ্ধি হয় তুলনামূলক বেশি। এছাড়াও আর্দ্র আবহাওয়ার জন্য ঘরের ভিতর দীর্ঘক্ষণ ধরে এই ভাইরাস টিকে থাকে।
advertisement
আরও পড়ুন- মুখ্যমন্ত্রীর ইস্তফা দাবি, রাজ্যপালের দ্বারস্থ তৃণমূল, মমতার সফরের আগেই সরগরম গোয়া
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস অত্যন্ত সংক্রামক ভাইরাস। যা এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। মূলত কাশি, হাঁচি বা ড্রপলেটের সাহায্যে সংক্রামিত হয়। যখন কোনও আক্রান্ত ব্যক্তি কাশে বা হাঁচে সেসময় আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে ড্রপলেটের মাধ্যমে অন্য ব্যক্তির দেহে সংক্রামিত হয়। মূলত চার ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস রয়েছে। যার মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জা A এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা B খুবই সাধারণ। তবে দু'টি ভাইরাস অত্যন্ত সাধারণ। এবং এই ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হলে হাঁচি, কাশি, মাথা ব্যথা, হাড়ে ব্যথা, পেশিতে যন্ত্রণা ইত্যাদি সমস্যাগুলি দেখা দেয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছে গেলে একাধিক শারীরিক জটিলটা দেখা দেয়। তার মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, হার্টের সমস্যা, মধুমেহ ইত্যাদি, এই সব রোগে আক্রান্ত হন অনেকে।
ইনফ্লুয়েঞ্জা A (Influenza A)
ইনফ্লুয়েঞ্জা A অত্যন্ত ক্ষমতাশালী একটি ভাইরাস। যা অতিমারী তৈরি করতে পারে। কারণ শুধু মানব দেহে নয়, পশুদের দেহেও আক্রমণ চালাতে পারে ইনফ্লুয়েঞ্জা A ভাইরাস। যা জানা গিয়েছে বিভিন্ন পাখি এই ভাইরাসের বাহক। বার্ড ফ্লু (Bird Flu), সোয়াইন ফ্লু (Swine Flu)-র মতো মারাত্মক রোগও ইনফ্লুয়েঞ্জা A এর মাধ্যমে হতে পারে। কোনও আক্রান্ত মানুষের হাঁচি, কাশির মাধ্যমে ছড়ানোর পাশাপাশি, যদি আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির সময় কোনও ড্রপলেট কোনও একটি অংশে লেগে যায় তাহলে সেখান থেকে সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ইনফ্লুয়েঞ্জা B (Influenza B )
খুব সাধারণ একটি ভাইরাস হলেও ইনফ্লুয়েঞ্জা A এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা B এর মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। নির্দিষ্ট কিছু ঋতুতেই ইনফ্লুয়েঞ্জা B ভাইরাসের আক্রমণ বাড়ে। এবং কোনও পশু বা পাখিরা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয় না। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ইনফ্লুয়েঞ্জা A থেকে ইনফ্লুয়েঞ্জা B তুলনামূলক কম সংক্রামক। এয়ারোসোলের মাধ্যমে এই রোগে আক্রান্ত হয় অনেকে।
প্রভাব-
ইনফ্লুয়েঞ্জা A এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা B এর মধ্যে তুলনা করলে দেখা গিয়েছে, এই ধরনের ভাইরাসে যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে ৭৫ শতাংশই ইনফ্লুয়েঞ্জা A ভাইরাসে আক্রান্ত। এবং বাকি ২৫ শতাংশের ক্ষেত্রে ইনফ্লুয়েঞ্জা B ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যে কোনও ঋতু পরিবর্তনের শুরুতে ইনফ্লুয়েঞ্জা A ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। অন্য দিকে সেই ঋতুর শেষ দিকে ইনফ্লুয়েঞ্জা B ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরও পড়ুন- শিশুদের জন্যও করোনার টিকা; সুবিধা এবং অসুবিধা নিয়ে জানুন বিশদে!
কতটা সংক্রামক বা কতটা ছোঁয়াচে?
ইনফ্লুয়েঞ্জা A এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা B উভয়েই অত্যন্ত ছোঁয়াচে। কোনও আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁচি বা কাশির সময় এই ভাইরাস বেরিয়ে ৬ ফিট দুর পর্যন্ত যেতে পারে। এবং তা অন্য ব্যক্তির শরীরে ঢুকে আক্রমণ করতে পারে। সুস্থ স্বাভামিক মানুষের নাক ও মুখ দিয়ে ঢুকতে পারে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস। এবং এই ভাইরাস শরীরে ঢোকার ২ দিন পর বিভিন্ন উপসর্গ প্রকাশ পায়। এবং তার ৩, ৪ দিন জ্বর সহ বিভিন্ন সমস্যায় ভোগেন আক্রান্ত ব্যক্তি।
কতটা মারাত্মক?
যাঁদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যন্ত ভালো তাঁদের শরীরে আক্রমণ করলেও খুব একটা মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে না ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস। ভাইরাস আক্রমণের ফলে সাধারণ জ্বর, সর্দি, শরীরে ব্যথা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে তা নিজে থেকেই সেরে যায়। কিন্তু যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যন্ত কম তাঁদের শরীরে মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে. মূলত গর্ভবতী মহিলা, একটু বেশি বয়স্ক মানুষদের এবং শিশুদের ক্ষেত্রে একাধিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। ইনফ্লুয়েঞ্জা A এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা B উভয় ক্ষেত্রেই এই বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়।
কী ভাবে ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব?
এই ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচতে হলে একাধিক বিষয় মাথায় রাখা দরকার। প্রথমত বাড়ির বাইরে বের হলে হাত, চোখ, নাক ও মুখ ঢেকে রাখতে হবে। যেখানে সেখানে হাত দেওয়া চলবে না এবং বার বার চোখে ও মুখে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। জ্বর বা বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকতে হবে। তাদের সঙ্গে কথা বললেও নির্দিষ্ট দূরত্ববিধি মেনে চলতে হবে। কোনও ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া দরকার।
কোন কোন খাবার খাওয়া প্রয়োজন?
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাঁদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি মারাত্মক হয়ে ওঠে। তাই এই ধরনের কোনও সমস্যা দেখা দিলে পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এতে শরীর থাকবে সুস্থ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। কী কী খাবার খাওয়া যেতে পারে?
চিকেন স্যুপ
সবজি
ভিটামিস C সমৃদ্ধ খাবার। যেমন লেবু।
নারকেলের জল
কলা
আপেল
ডিম সিদ্ধ
কোন খাবার খাওয়া উচিত নয়?
এই সময় যেহেতু সুষম এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত তাই খাদ্যতালিকা থেকে বেশ কিছু খাবার সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া উচিত। তার মধ্যে রয়েছে ফাস্ট ফুড, প্যাকেটজাত খাবার এবং রাস্তার ধারের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি খাবার। এছাড়াও ভাজাভুজি বা অতিরিক্ত মশলা দেওয়া খাবার সাময়িক বর্জন করা উচিত। মদ্যপান এবং ধূমপান সম্পূর্ণ বর্জন করা উচিত। কারণ এতে শরীর খারাপের দিকে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ এই সময় কফি বা ঠাণ্ডা পানীয় বর্জন করা উচিত। প্যাকেটবন্দী আলু চিপস ও অনান্য খাবার বর্জন করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।