লাসা জ্বর কী?
এই ভাইরাসের প্রথম কেস নাইজেরিয়ার লাসায় পাওয়া গিয়েছিল। তাই সেই শহরের নামানুসারে এর নাম দেওয়া হয়েছে লাসা জ্বর। লাসায় আক্রান্তদের মৃত্যুহার ১ শতাংশ। এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, লাসায় আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ১৫ শতাংশের। ৮০ শতাংশের কোনও উপসর্গ দেখা যায় না।
advertisement
ভাইরাসটি সাধারণত ইঁদুর দ্বারা বাহিত হয় এবং এটি পশ্চিম আফ্রিকার কিছু অংশে, প্রধানত ঘানা, বেনিন, মালি, টোগো, সিয়েরা লিওন, লাইবেরিয়া, গিনি এবং নাইজেরিয়া অঞ্চলে পাওয়া গিয়েছে।
গত কয়েকদিনে ব্রিটেনে লাসা জ্বরে তৃতীয় আক্রান্তকে সনাক্ত করা হয়েছে। রোগটি এতটাই সংক্রমিত যে সমস্ত রোগীই একই পরিবারের অন্তর্গত। তাঁরা সম্প্রতি পশ্চিম আফ্রিকা ভ্রমণ করেছিলেন বলে বিবিসি (BBC) জানিয়েছে।
যদিও এখনও পর্যন্ত জানা গিয়েছে, জনসাধারণের জন্য এই ভাইরাসের ঝুঁকি কম। ইউকেএইচএসের (UKHSA) তথ্য অনুযায়ী, নতুন এই রোগ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
আরও পড়ুন: টানা ঘরবদ্ধ থাকলে কমবে Vitamin D! সূর্যের আলো গায়ে মাখবেন কী ভাবে? রইল টিপস!
লাসা ভাইরাস কীভাবে ছড়ায়?
লাসা ভাইরাস ইঁদুরের মল ও মূত্রের মাধ্যমে ছড়ায়। লাসা ভাইরাসে সংক্রামিত কোনও ইঁদুরের মল-মূত্র কোনও খাবার জিনিস বা বাড়িতে ব্যবহৃত জিনিসের সঙ্গে মিশলে এবং সেগুলি কেউ ব্যবহার করলে সেই ব্যক্তিও আক্রান্ত হতে পারেন এই ভাইরাসে। আক্রান্ত ব্যক্তির পরিচর্যা যাঁরা করবেন তাঁরাও আক্রান্ত হতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হয়েছে WHO-র সমীক্ষায়।
লক্ষণ
লাসা জ্বরের লক্ষণগুলি দেখা দিতে সাধারণত ১-৩ সপ্তাহ সময় লাগে। হালকা লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে- সামান্য জ্বর, ক্লান্তি, দুর্বলতা, মাথাব্যথা। গুরুতর লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে- রক্তপাত, শ্বাস নিতে সমস্যা, বমি, মুখ ফুলে যাওয়া, বুকে-পিঠে-পেটে ব্যথা এবং শক লাগা।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পাঁচ জন আক্রান্তের মধ্যে একজন লাসা আক্রান্তের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন কিডনি, লিভারের ক্ষতি করে এই ভাইরাস। ফলে মৃত্যুও হতে পারে। সিডিএসের (CDC) মতে, অনেক ক্ষেত্রে, রোগী স্থায়ীভাবেও বধির হয়ে যেতে পারে। যদিও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে (প্রায় ৮০ শতাংশ) হালকা লক্ষণই দেখা যায়।
আরও পড়ুন: আপনারও এই পাঁচটি কারণে চুল পড়ছে না তো? দেখে নিন মিলিয়ে
হালকা লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:
হালকা জ্বর
সাধারণ অস্বস্তি এবং দুর্বলতা
,সঙ্গে গা গরম এবং বমি।
২০ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগটি রক্তক্ষরণ (মাড়ি, চোখ বা নাকে), শ্বাসকষ্ট, মুখ ফুলে যাওয়ার মতো গুরুতর লক্ষণগুলির মাধ্যমে ছড়াতে পারে। পেটে, বুকে এবং পিঠে ব্যথা বার বার বমি এবং গা হাত পায়ের প্রবল যন্ত্রণা এই রোগের অন্যতম উপসর্গ। শ্রবণশক্তি হ্রাস, কাঁপুনি এবং এনকেফালাইটিস সহ স্নায়বিক সমস্যাও ঘটতে পারে এই রোগে। শরীরের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অবশ হয়ে যেতে পারে। পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর হতে পারে যে সামান্য উপসর্গ দেখা দেওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে আক্রান্তের মৃত্যুও হতে পারে।
সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি কাদের?
গর্ভাবস্থায় এবং প্রসূতি মহিলার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। গবেষণায় দেখা গিয়েছে এই ধরনের রোগীদের মৃত্যুর হার খুব বেশি। সিংহভাগ ক্ষেত্রেই গর্ভস্থ মহিলার ভ্রূণ নষ্ট হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: আইভিএফ চিকিৎসা কি ওজন বাড়ায়? উত্তর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ
লাসা জ্বর কীভাবে নির্ণয় করা হয়?
রোগ নির্ণয়ের জন্য ল্যাব রুট ELISA পরীক্ষা ব্যবহার করা হয়, যা অ্যান্টিবডির পাশাপাশি লাসা অ্যান্টিজেন সনাক্ত করে। ভাইরাসের উপস্থিতি সনাক্ত করতে প্রাথমিক পর্যায়ে একটি RT-PCR পরীক্ষাও ব্যবহার করা যেতে পারে।
প্রতিরোধের উপায়
এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে, ঘরে ইঁদুর যাতে ঢুকতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। খাবার ঢাকনা দেওয়া কৌটোয় রাখতে হবে। সব খাবার ভালোভাবে ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে।
লাসা জ্বরের চিকিৎসা
যদি প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করা যায়, তবে ডিহাইড্রেশন এবং উপসর্গগুলির চিকিৎসাই বেঁচে থাকাতে সাহায্য করে। এছাড়া, অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ রিবাভিরিন লাসা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। তবে এটা কীভাবে কাজ করে তা এখনও জানা যায়নি। সংক্রমণ এড়ানোর সর্বোত্তম উপায় হল ইঁদুরের সংস্পর্শ এড়ানো।