এমনিতে নভেল করোনাভাইরাসের উপসর্গ সম্পর্কে মোটামুটি কমবেশি সকলেই অবগত। এই রোগের প্রধান লক্ষণগুলির মধ্যে অন্যতম হল জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা, নাক দিয়ে জল পড়া, গা-হাত-পায়ে ব্যথা ইত্যাদি। এছাড়াও কিছু কিছু ক্ষেত্রে গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল সমস্যা এবং স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতিহীনতার মতো উপসর্গও দেখা দিতে পারে।
আরও পড়ুন : সপ্তাহব্যাপী তাণ্ডবের অবসান! আটক নকশালবাড়ির নয়া ত্রাস, স্বস্তিতে গ্রামবাসীরা
advertisement
তবে কোভিডের অন্যতম উপসর্গ মাথা যন্ত্রণা নিয়ে একটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়। কারণ এমনি ঠান্ডা লাগার ক্ষেত্রে অথবা অন্য রোগের ক্ষেত্রেও মাথা ব্যথা অন্যতম উপসর্গ। তাহলে সেক্ষেত্রে কোভিডের জন্য মাথা ব্যথা হলে সেটা আলাদা ভাবে কীভাবে টের পাওয়া যাবে, এটা নিয়ে গবেষণা চালিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। আজ আলোচনা করে নেওয়া যাক এই বিষয়েই।
কোভিডের ক্ষেত্রে মাথা ব্যথা কীরকম হয়?
সার্স-সিওভি-২ ভাইরাসের জেরে সাধারণত মাথা যন্ত্রণা হতে পারে। আর এই ধরনের মাথা ব্যথার সঙ্গে টেনশনের মাথা ব্যথা (Tension Headache) অথবা মাইগ্রেনের মাথা যন্ত্রণার (Migraine Headache) সাদৃশ্য রয়েছে। টেনশনের ক্ষেত্রে হালকা অথবা মাঝারি যন্ত্রণা অনুভূত হয়। এর সঙ্গে মাথা ভার-ভার লাগে। এছাড়া কপালের চারপাশে, মাথা ও ঘাড়ের পিছন দিকে চাপ অনুভূত হতে থাকে। অন্য দিকে আবার মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে মারাত্মক যন্ত্রণা হয়, মাথা দপদপ করতে থাকে। সাধারণত মাথার এক পাশে এই মাইগ্রেনের যন্ত্রণা ওঠে। এমনকী কোনও কোনও ক্ষেত্রে মাথা ব্যথার সঙ্গে বমি-বমি ভাব আসে এবং ক্লান্তি গ্রাস করে।
মাথা যন্ত্রণা কতটা প্রবল হতে পারে? আর এর উপসর্গই বা কী কী হতে পারে?
বিশেষজ্ঞদের দাবি, কোভিড ১৯-এর সাধারণ স্নায়বিক উপসর্গগুলির মধ্যে অন্যতম হল মাথা ব্যথা। কোভিড থেকে সেরে উঠলেও অথবা করোনার সমস্ত উপসর্গ উধাও হয়ে গেলেও মাথা ব্যথার মতো উপসর্গ রয়ে যেতে পারে। ২০২০ সালে একটি সমীক্ষা চালানো হয়েছিল কোভিড রোগীদের উপর। তাতে দেখা গিয়েছে যে, ১৩০ জন অংশগ্রহণকারী কোভিড পজিটিভ রোগীর মধ্যে ৭৪.৬ শতাংশ রোগীর হালকা থেকে মাঝারি মাথা ব্যথার উপসর্গ দেখা গিয়েছে। এক-চতুর্থাংশ রোগীর ক্ষেত্রে আবার মাইগ্রেনের মতো মারাত্মক মাথা যন্ত্রণা হতে দেখা গিয়েছে। সেই সঙ্গে এটাও বোঝা গিয়েছে যে, কোভিডের ক্ষেত্রে সবার প্রথমে মাথা ব্যথা হতেই দেখা যায়।
পাবমেড সেন্ট্রাল (PubMed Central)-এ প্রকাশিত আর একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, যেসব কোভিড রোগীর মধ্যে মাথা ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা গিয়েছিল, সেই উপসর্গ পরে টেনশনের মাথা ব্যথায় রূপান্তরিত হয়েছিল। এই মাথা ব্যথার ধরনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
মাঝারি থেকে তীব্র মাথা ব্যথা
মাথার দু’পাশে যন্ত্রণা
মাথার দু’পাশ, কপাল এবং চোখের চারপাশে যন্ত্রণা
মাথা ব্যথার ক্ষেত্রে টান অনুভূত হওয়া এবং মাথা ঘোরা
ওটিসি ওষুধের প্রয়োগে রোগীর কম সাড়া দেওয়া
এই গবেষণা বলছে, অংশগ্রহণকারী রোগীদের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ রোগীর ক্ষেত্রে মাথা ব্যথা হয়েছিল অনেকটা মাইগ্রেনের মতোই। অর্থাৎ মাথার এক পাশে দপদপে যন্ত্রণার অনুভূতি তো হয়ই। এর সঙ্গে বমি-বমি ভাব এবং ক্লান্তিও আসতে পারে। শুধু তা-ই নয়, এই ধরনের মাথা ব্যথার ক্ষেত্রে কখনও কখনও আলো, গন্ধ এবং স্পর্শের ক্ষেত্রেও সংবেদনশীলতা চলে আসে।
কোভিড থেকে সেরে ওঠার পরেও কি মাথা যন্ত্রণা হতে পারে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড থেকে সেরে ওঠার পর মাথা ব্যথা হতে পারে। এর পিছনে দায়ী দীর্ঘস্থায়ী কোভিড। যেটা এখন অত্যন্ত সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে করোনা থেকে সেরে ওঠার পরেও কয়েক সপ্তাহ তথা কয়েক মাস পর্যন্ত এর উপসর্গ পরিলক্ষিত হতে পারে রোগীর দেহে। ২০২২ সালে দ্য জার্নাল অফ হেডেক অ্যান্ড পেইন-এ প্রকাশিত একটি সমীক্ষা বলছে যে, ২৮৮ জন করোনা রোগীর মধ্যে ২২.২ শতাংশ রোগীর মধ্যে স্নায়বিক উপসর্গ দেখা গিয়েছে। যার মধ্যে ৬৯.১ শতাংশই ছিল মাথা ব্যথা। আর বেশির ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে এই ধরনের মাথা ব্যথা দেখা গিয়েছিল প্রায় এক সপ্তাহ পর্যন্ত। আবার ১৮ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে মাথা ব্যথার উপসর্গ ছিল এক মাসেরও বেশি সময় পর্যন্ত। আর ১০ শতাংশ রোগী প্রায় ৩ মাস পর্যন্ত মাথা ব্যথার সমস্যায় জেরবার হয়েছিলেন।
কখন করাতে হবে কোভিড পরীক্ষা?
হালকা থেকে মাঝারি মাথা ব্যথা হলে তা অনেক কিছুই হতে পারে। তবে যদি মাথা যন্ত্রণার সঙ্গে জ্বর, কাশি, সর্দি, গলা ব্যথা, গায়ে ব্যথা এবং ক্লান্তিভাব আসে, তাহলে সময় নষ্ট না-করে করোনা পরীক্ষা করাতে হবে।
মাথা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলবে কোন উপায়ে?
মারাত্মক মাথা ব্যথা হলে অবশ্যই ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিতে হবে। তবে কিছু মাথা যন্ত্রণা কমানোর কিছু ঘরোয়া টোটকাও রয়েছে। বৈধ প্রেসক্রিপশন থাকলে ওটিসি ওষুধেও দারুণ কাজ হয়। এছাড়া মাথা ব্যথা কমানোর সব থেকে উপযোগী উপায় হল বিশ্রাম। কোনও বামজাতীয় ওষুধ কপালে মালিশ করলে আরাম মিলবে। এছাড়া প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে। কারণ অনেক সময় ডিহাইড্রেশনের কারণে মাথা ব্যথা এবং মাথা ঘোরার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।