সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম কেন গুরুত্বপূর্ণ?
যে কোনও সামরিক বাহিনীর জন্য ইউনিফর্ম হল সবচেয়ে স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে একটি। ইউনিফর্ম শুধুমাত্র সামরিক কর্মীদের থেকে অসামরিক ব্যক্তিদের এবং বিভিন্ন সামরিক বাহিনীর কর্মীদের মধ্যে পার্থক্য করে না, এটি কর্মীদের মধ্যে একতা, সামঞ্জস্য এবং শৃঙ্খলাও তৈরি করে।
কী ভাবে নতুন ইউনিফর্ম ডিজাইন করা হয়েছে?
advertisement
নতুন ইউনিফর্মটি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফ্যাশন টেকনোলজি (National Institute of Fashion Technology)-র সহযোগিতায় ডিজাইন করা হয়েছে। যেখানে ডিজাইনাররা ভবিষ্যতের যুদ্ধের কথা মাথায় রেখে সেনাবাহিনীর সুপারিশ করা একাধিক বৈশিষ্ট্যকে যুক্ত করেছেন। অর্থাৎ তাদের কী কী চাহিদা রয়েছে তা আগেই জানিয়ে দিয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী (Indian Army)। নয়া ইউনিফর্ম ডিজাইন করার সময় এটা মাথায় রাখা হয়েছিল, যাতে সেনাবাহিনীর পুরুষ এবং মহিলা সদস্যরা সহজেই তা পরতে পারেন এবং তা যেন তাঁদের জন্য আরামদায়ক হয়। এই কারণেই সেনাবাহিনীর নতুন কমব্যাট ইউনিফর্ম তৈরিতে যে কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে, তা ওজনে হালকা।
আরও পড়ুন- এড়িয়ে যাবেন না এই ছোটো উপসর্গগুলি, অজান্তেই বাড়তে পারে আপনার কোলেস্টেরল
নিউজ ১৮-এর একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, NIFT ডিজাইনাররা পুরুষ ও মহিলাদের জন্য চারটি ভিন্ন ডিজাইন এবং ইউনিফর্মের জন্য আট ধরনের কাপড়-সহ ১৫টি এক্সক্লুসিভ ক্যামোফ্লেজ প্যাটার্ন (Camouflage Patterns) শেয়ার করেন। সাতজন অধ্যাপক, তিনজন ছাত্র এবং NIFT-র দুই প্রাক্তন ছাত্রকে নিয়ে ডিজাইনার দলে মোট ১২ জন সদস্য ছিলেন। তাঁরা মোট চারটি বিষয়কে মাথায় রেখে ইউনিফর্মের ডিজাইন করেন। সেই চারটি বিষয় হল-স্বাচ্ছন্দ্য (Comfort), জলবায়ু বান্ধব (Climate), ছদ্মবেশ (Camouflage) এবং গোপনীয়তা (Confidentiality)। সূত্রের খবর, চারটি ক্যামোফ্লেজ প্যাটার্ন, তিনটি ডিজাইন এবং পাঁচটি ফ্যাব্রিক বাছাই করা হয়েছিল। পোশাকের ডিজাইন পর্যায়ে ফ্যাব্রিক, ক্যামোফ্লেজ প্যাটার্নের বিষয়ে নির্দিষ্ট বিশেষজ্ঞদের পরামর্শও নেওয়া হয়েছিল।
নতুন পোশাক নিয়ে মতামত জানতে সেনার দু'টি পদাতিক ব্রিগেড, একটি আর্টিলারি ব্রিগেড এবং দিল্লির একটি মিলিটারি পুলিশ ইউনিটের দেড়শোর বেশি সদস্যকে ১৫ সেট কমব্যাট ইউনিফর্ম দেওয়া হয়েছিল। মতামতের ভিত্তিতে ইউনিফর্ম চূড়ান্ত করা হয়েছিল। গত বছরের অক্টোবরে সেনা কমান্ডারদের সম্মেলনের (Army Commanders Conference) সময় সেনাপ্রধান জেনারেল এমএম নারাভানে (Army Chief Gen. MM Naravane) নতুন পোশাকে অনুমোদন দিয়েছিলেন। সেই সম্মেলনেই সমস্ত সেনা কমান্ডারদের কাছে নতুন ইউনিফর্ম উন্মোচন করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন- EXPALINER: অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে কি কমানো যাবে কোভিডের কাশি? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
নতুন ইউনিফর্মে কী কী বৈশিষ্ট্য রয়েছে?
নতুন ইউনিফর্ম আরও বেশি আরামের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। ভারতের বিভিন্ন ভূখণ্ড এবং আবহাওয়ার অবস্থার কথা মাথায় রাখা হয়েছে। ফ্যাব্রিক হালকা এবং আবহাওয়ার চরম অবস্থার জন্য এই ইউনিফর্ম উপযুক্ত। ইউনিফর্মে কাপড়ের ধরনেও এসেছে আমূল পরিবর্তন। নতুন পোশাকে ৭০ শতাংশ তুলো (Cotton) এবং মাত্র ৩০ শতাংশ পলিয়েস্টার (Polyester) ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে এই পোশাক টিকবে অনেকদিন এবং শুকিয়ে যাবে তাড়াতাড়ি। সব থেকে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হল আগের মতো জওয়ানদের শার্টটি প্যান্টে গুঁজে পরতে হবে না। গোল গলার জ্যাকেটের উপরে পরতে হবে। নতুন ইউনিফর্মে প্যান্টের উপর শার্টটি খোলা থাকবে। শার্টের নিচেই ঢাকা থাকবে প্যান্টের বেল্ট। এছাড়াও, প্যান্টের নিচের অংশ বুটের মধ্যে ঢুকে থাকবে। শার্টের উপরিভাগে দুটি পকেট, পিছনে ছুরির প্লিট, বাম হাতের উপর একটি কলম রাখার খোপ এবং উন্নত মানের বোতাম রয়েছে। টুপির ঘেরটি ছোট বা বড়ো করা যাবে এবং তাতে সেনাবাহিনীর লোগোটি আগের চেয়ে আরও ভাল মানের হবে। এছাড়াও, প্রথমবারের মতো ইউনিফর্মের একটি বিশেষ সংস্করণ মহিলা কর্মীদের কথা মাথায় রেখে ডিজাইন করা হয়েছে।
নতুন ইউনিফর্মটি মার্কিন ও ব্রিটেনের সেনাবাহিনীর ইউনিফর্মের আদলে ডিজিটাল প্যাটার্নের করা হয়েছে। এর জন্য কম্পিউটারের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। ক্যামোফ্লেজ (Camouflage) অর্থাৎ পোশাকের রঙ যাতে পরিবেশের সঙ্গে মিশে থাকে, তা নিশ্চিত করতে নতুন জলপাই সবুজ রঙের সঙ্গে মেটে রঙের সংমিশ্রণ ঘটানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে অনেক আধুনিক সামরিক বাহিনী ইউনিফর্মে যে সমস্ত বৈশিষ্ঠ্য থাকে, তা ভারতীয় সেনার নতুন ইউনিফর্মে রাখা হয়েছে। যাতে ইনফ্রারেডের পাশাপাশি দৃশ্যমান আলোর বর্ণালীর মাধ্যমে শত্রুপক্ষের পক্ষে ভারতীয় সেনাদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে যায়।
কারা কারা পরবেন এই ইউনিফর্ম?
কমব্যাট ইউনিফর্ম মূলত ফরোয়ার্ড বা অপারেশনাল এলাকায় (Forward/Operational Areas) কর্মরত সেনা কর্মীরা পরিধান করেন। যদিও সদর দফতরে কর্মরত অফিসাররাও ফ্রন্টলাইনে কর্মরত করা সহকর্মীদের প্রতি সংহতি জানাতে প্রতি শুক্রবার কমব্যাট ইউনিফর্ম পরেন। তবে, এখানে একটা বিষয় উল্লেখ করতে হবে যে সেনা বিদ্যমান ইউনিফর্মের ডিজাইন বাজারে সহজেই পাওয়া যায়। তাই সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে যে নতুন পোশাকের ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা আরও নিয়ন্ত্রিত হবে। এগুলি কেবলমাত্র অর্ডন্যান্স স্টোর (Ordnance Stores) বা সামরিক ক্যান্টিনের (Military Canteens) মাধ্যমে সংগ্রহ করা যেতে পারে। এছাডা়ও অনুমোদিত ডিলারদের মাধ্যমে কাপড় বিক্রি করার বিষয়টি নিয়ে শীঘ্রই সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। সেনাবাহিনী ইউনিফর্ম তৈরির জন্য বেসরকারি এবং সরকারি সংস্থাগুলির জন্য দরপত্র জারি করবে। নতুন ইউনিফর্মের স্বতন্ত্রতা বজায় রাখতে বারকোড (Barcode) এবং QR কোড থাকবে। সব পরিকল্পনামাফিক চললে চলতি বছরের অগাস্ট মাসের মধ্যেই ভারতীয় সেনাবাহিনীতে চালু হয়ে যাবে এই নয়া ইউনিফর্ম। সেনাবাহিনীর আধিকারিকদের মতে, দেশের সমস্ত জায়গায় নতুন ইউনিফর্ম সম্পূর্ণভাবে চালু করতে প্রায় ৬ থেকে ৮ মাস সময় লাগতে পারে।
গত বুধবার সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নারাভানে ইস্টার্ন কমান্ডের আওতাভুক্ত এলাকায় সফর করেন। ওই সফরের সময় তাঁকে নতুন কমব্যাট ইউনিফর্ম পরতে দেখা গিয়েছে। তাঁর সঙ্গে অন্যান্য সেনা কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
