এদিকে বর্তমানে প্রচুর মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হলেও কোভিডের মতো আইসোলেশনে থাকার মতো কঠোর নিয়ম নেই। কিন্তু এই ধরনের কোনও সমস্যা দেখা দিলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া দরকার। এবং কোনও বিলম্ব না করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
আরও পড়ুন: ইনফ্লুয়েঞ্জারও রয়েছে আলাদা ধরন; জানুন ইনফ্লুয়েঞ্জা A এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা B-র মধ্যে পার্থক্য ঠিক কোথায় ?
advertisement
কত দিন পর্যন্ত জ্বরের উপসর্গ দেখা দেয়?
সাধারণ জ্বর বা ফ্লু হলে শ্বাসযন্ত্রে প্রভাব ফেলে। শরীরে আক্রমণ করার ২ থেকে ৫ দিন পর থেকে একাধিক উপসর্গ প্রকাশ পায়। এর সঙ্গে সাধারণ জ্বরের ক্ষেত্রেও উপসর্গগুলির অধিকাংশ করোনা ভ্যাকসিনের মতো প্রায় একই, তাই এক্ষেত্রে প্রায় ৫ থেকে ৭ দিন ধরে উপসর্গগুলি দেখা দেয়। বেশ কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ ধারণ করে। সেক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাধারণ জ্বরে সম্পূর্ণ ভাবে সুস্থ হতে সময় লাগে প্রায় ২ সপ্তাহ। আবার বেশ কিছু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে ২ সপ্তাহ পরেও অনেকের শরীর অত্যন্ত দুর্বল এবং একাধিক উপসর্গ রয়েছে। তাহলে এই সমস্যা থেকে দ্রুত সমাধান কী ভাবে সম্ভব?
প্রথমত বাড়িতে থাকুন, বাইরে বের হবেন না…
যেহেতু সাধারণ জ্বরে আক্রান্ত হলেও অত্যন্ত দুর্বল হয়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে তাই বিশষজ্ঞরা পরামর্শ দেন এই সময় বাড়িতে থাকার জন্য। বাড়িতে থাকা, বিশ্রাম নেওয়া, সঠিক সময়ে খাওয়া-দাওয়া করা ইত্যাদি এই সময় করা নিয়ম করে করা দরকার। জ্বর থেকে পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ার পর্যন্ত বাড়ির বাইরে বের হলে অন্যের সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শুধু তাই নয়, অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ জ্বরের ক্ষেত্রে ক্লান্তি ভাব থাকে অতিরিক্ত। এর উপর দৈনিক সমস্ত কাজকর্ম করলে শরীর আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই জ্বরের সময় এবং জ্বর থেকে সেরে ওঠার পর বেশ কয়েকদিন সম্পূর্ণ বিশ্রাম নেওয়া দরকার। এর সঙ্গে বাইরে বের হলে বা অফিসের কাজ করলে এই সময় শরীরের উপর চাপ পড়ে অনেক বেশি। আর সেই কারণে জ্বর থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে বেশ কিছু দিন দেরি হয়। তাই এই সময় উচিত সম্পূর্ণ বিশ্রাম নেওয়া। বাইরে যদি অতি প্রয়োজনে বের হতে হয় তাহলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, এতে যেমন ভাইরাস কোনও আক্রান্ত ব্যক্তির দেহ থেকে বেরিয়ে অন্য ব্যক্তির আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে, তেমনই অনেকে অন্য ব্যক্তি থেকে কোনও রোগ বা ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে না।
আরও পড়ুন: শরীরে ক্যালসিয়ামের সমস্যা? সঠিক সময়ে না ধরতে পারলে বড় সমস্যায় ভুগবেন!
হাইড্রেট করা উচিত-
শারীরিক অসুস্থতার সময় প্রচুর পরিমাণে জল পান করা দরকার। কারণ এই সময় শরীরে জলের পরিমাণ বেশি প্রয়োজন হয়। জলের সঙ্গে ORS মিশিয়ে পান করলে আরও ভালো হয়। বিশেষজ্ঞদের মত এই সময় প্রত্যেক রোগীর উচিত প্রতিদিন ১-২ লিটার জল অবশ্যই গ্রহণ করা। কারণ এতে শরীর আর্দ্র থাকে।
সাধারণ জ্বরের সময় প্রয়োজনীয় ওষুধগুলি সঠিকভাবে সেবন করা দরকার-
সাধারণ জ্বর মূলত ১ থেকে ২ সপ্তাহ থাকে। এসই ময় অনেকে সঠিকভাবে ওষুধ সেবন করা প্রয়োজন। কারণ ওষুধ সেবন না করলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে যেতে পারে। তাই নিয়ম করে দির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সাধারণ জ্বরের ওষুধ সেবন করা দরকার।
অতীতের কোনও সমস্যা থাকলে সেদিনে নজর দেওয়া দরকার…
যদি অতীতে কোনও ব্যক্তির বা মহিলার ক্ষেত্রে সুগার, হার্টের সমস্যা সহ একাধিক সমস্যা থাকে তাহলে সেদিকেও নজর দেওয়া দরকার। কারণ জ্বরে আক্রান্ত হলে কোনও রোগীর ক্ষেত্রে অতীতের কোনও রোগ থাকলে তা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটা কমিয়ে দেয়। যার ফলে রোগ মুক্তি হতে বেশ দেরি হয়। যাঁদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তাঁদের ক্ষেত্রে প্রতি দিন রক্তচাপ মাপা দরকার। কারণ কোনও কারণে স্বাভাবিকের থেকে বেড়ে গেলে বা কমে গেলে মারাত্মক কিছু ঘটে যেতে পারে।
শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখা দরকার…
যেহেতু সাধারণ জ্বরে আক্রান্ত হলে নাক বুজে যাওয়া, সর্দির সমস্যা সহ একাধিক সমস্যা দেখা দেয়, এর জন্য অত্যন্ত অস্বস্তিতে ভোগেন রোগী। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বেশ কিছু ওষুধ থাকলে ঘরোয়া পদ্ধতিতে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। গরম জলের ভাপ নাক দিয়ে টানলে তাতে নাক পরিষ্কার হয়ে যায়। শ্বাস-প্রশ্বাসের কোনও সমস্যা তৈরি হয় না। অন্য দিকে, সাইনাসের কোনও সমস্যা বা গলায় ব্যথা থাকলেও তা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এর সঙ্গে গরম জলে স্নান করলেও আরাম পাওয়া সম্ভব।
আরও পড়ুন: আসছে শীতের মরশুম, ফ্লু-র টিকা কি কোভিড সংক্রমণের তীব্রতা কমাতে পারবে?
সহজপাচ্য খাবার খাওয়া উচিত…
সাধারণ জ্বরে আক্রান্ত হলে হজমের সমস্যা দেখা দেয়। কারণ যেহেতু ভাইরাস আক্রমণ করে তাই শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে না। আর তাই এই সময় সহজপাচ্য খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। সাধারণ ভাবে দেখা যায়, জ্বরে আক্রান্ত হলে খিচুড়ি, সবজি ডাল, সবজি স্যুপ, চিকেন স্যুপ খেতে দেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ এই সময় এই ধরনের খাবারগুলি খাওয়া অত্যন্ত ভালো। কারণ এগুলিতে অতিরিক্ত মশলা না থাকায় খুব দ্রুত হজম হয়, তেমনই সমস্ত পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। তাই এই ধরনের খাবারগুলি খাওয়ার পক্ষে যুক্তি তাঁদের। পাশপাশি, ভিটামিন সি, জিঙ্ক, প্রোটিন সহ সব ভিটামিন খনিজ শরীরে ঢোকে সেদিকে নজর রাখতে হবে।
এই ধরনের খাবারগুলি খাদ্যতালিকা থেকে বর্জন করা উচিত…
জ্বরের কারণে যেহেতু হজমে সমস্যা দেখা দেয় তাই সেই সময় বেশ কিছু খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তার মধ্যে রয়েছে ভাজাভুজি। কোনও রকম ভাজা খাবার যেমন তেলেভাজা, বা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই জাতীয় খাবার বর্জন করতে হবে। তার সঙ্গে স্পাইসি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। অন্য দিকে, অনেকে আছেন যাঁরা প্যাকেটজাত খাবার খেতে পছন্দ করেন। সেক্ষেত্রে অসুস্থতার সময় প্যাকেটজাত খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে।