করোনার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে বিশেষজ্ঞদের কী বক্তব্য?
করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। অনেকেই সেই নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, টিকা নেওয়ার পর কোনও ব্যক্তির শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে সে নিয়ে চিন্তা করার কোনও কারণ নেই। তাঁদের যুক্তি, যে কোনও ভ্যাকসিন শরীরে প্রবেশ করার পরে সেটি নিজের কাজকর্ম শুরু করে। তার জন্যই শরীরে বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। তবে সেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় খুবই সামান্য। যে কোনও টিকা গ্রহণের পর শরীরে যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় সেগুলি হল জ্বর, ক্লান্তি, মাথা ব্যথা, ইত্যাদি।
advertisement
যাঁরা টিকা নিতে অস্বীকার করছেন বা টিকা গ্রহণ করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁদের উদ্দেশে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, করোনা থেকে বাঁচার জন্য টিকাকরণই হল একমাত্র উপায়। যার মাধ্যমে করোনা আক্রমণ হলেও তা ভয়ঙ্কর পর্যায়ে পৌঁছয় না।
করোনা ভ্যাকসিন বুস্টার সম্পর্কে কী কী জানা দরকার?
কোভিড ১৯ থেকে বাঁচতে এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বিশ্বের বহু দেশে করোনা বুস্টার ডোজ নিয়ে আসা হয়েছে। সেই সঙ্গে বুস্টার ডোজের ক্ষমতা এবং বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে নিয়মিত গবেষণা হচ্ছে। এই বিষয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (US Centers for Disease Control and Prevention) বা CDC। করোনা বুস্টার ডোজের সাইড এফেক্ট বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অত্যন্ত সাধারণ। করোনা দ্বিতীয় ডোজের পর যে ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় বুস্টার ডোজ নেওয়ার ক্ষেত্রেও একই প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এই বিষয়ে বিভিন্ন সংস্থা থেকে জানানো হয়েছে ১৩ অগাস্ট থেকে কয়েক লাখ সাধারণ মানুষ করোনা থার্ড ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন। আমেরিকাতেও কোভিডের বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে। বর্তমানে যাঁরা এমন কোনও কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন যেখানে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি সব থেকে বেশি, সেই সব ক্ষেত্রের মানুষদের করোনা বুস্টার ডোজ দেওয়া হচ্ছে।
কোভিড ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ
কোভিডের দু'টি ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। সেই সময়ের পর কোভিডের দু'টি ভ্যকসিন ডোজ সেভাবে কাজ করতে পারে না। তাই তার জন্য বিভিন্ন দেশ বুস্টার ডোজ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। বুস্টার ডোজ এবং কোভিড ভ্যাকসিনের তৃতীয় ডোজ একই। অনেক দেশ ইতিমধ্যে বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যাঁদের করোনা টিকার সব ডোজ নেওয়া সম্পূর্ণ হয়েছে তাঁদের ক্ষেত্রেই একমাত্র বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে। যাতে করে নতুন করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা না কমে যায়।
কোভিড বুস্টার ডোজের ক্ষেত্রেও একাধিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রথম ডোজ নেওয়ার পর যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় কোভিড বুস্টার ডোজ নেওয়ার পরও একই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। জ্বর, ক্লান্তি, মাথা ব্যথা, দুর্বলতা ইত্যাদি উপসর্গ প্রকাশ পায়।
কোভিড বুস্টার ডোজের সাইড এফেক্ট
কোভিড বুস্টার ডোজের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করেছে সেন্টার ফর ডিজিস কনট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন। কোভিডের বুস্টার ডোজ নিয়েছেন এমন ১২ হাজার ৬০০ জনের উপর পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়েছে তারা। তাঁরা মূলত ফাইজার (Pfizer) এর ভ্যাকসিন নিয়েছেন। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর তাঁদের মধ্যে কী কী পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে তা নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়। তার ভিত্তিতে গবেষকরা জানিয়েছেন, অধিকাংশজনের খুব সাধারণ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। ভ্যাকসিন নেওয়ার পরের দিন থেকে এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। তবে, ১ বা ২ দিনের মধ্যে সেই সব সমস্যা নির্মূল হয়ে গিয়েছে।
এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩.৪ মিলিয়ন মানুষ কোভিড ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ গ্রহণ করেছেন। ১৩ অগাস্ট থেকে আমেরিকায় এই ডোজ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ১০ লাখ মানুষ নিজেদের নাম নথিভুক্ত করেছেন করোনার তৃতীয় ডোজ বা বুস্টার ডোজ নেওয়ার জন্য। তাঁরা সকলেই ফাইজারের টিকা নেওয়ার জন্য নাম নথিভুক্ত করেছেন।
চলতি বছরের অগাস্ট মাসে ইজরাইলের তরফে একটি সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। ফাইজারের টিকা নেওয়া হয়েছে এমন মানুষদের উপর ওই সমীক্ষা চালানো হয়েছে। সেখানে দেখা গিয়েছে, প্রায় ৮৮ শতাংশ মানুষ কোভিড টিকা নেওয়ার পর মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করতে পেরেছেন। এই বিষয়ে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশিয়াস ডিজিসের ডিরেক্টর, অ্যান্টনি এস ফাউচি (Anthony S. Fauci) জানিয়েছেন, তিনি মনে করেন করোনার mRNA ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অন্যতম প্রধান অস্ত্র। তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, করোনার mRNA ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ বা থার্ড ডোজ করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে অন্যতম প্রধান অস্ত্র।”
আরও পড়ুন- ওষুধ খেয়ে কি করোনা প্রতিরোধ সম্ভব? ফাইজার আনছে অ্যান্টি-কোভিড ট্যাবলেট
করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য যেমন প্রয়োজন কোভিড ভ্যাকসিন, তেমনই কোভিড প্রটোকল মেনে চলার জন্য আর্জি করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের বক্তব্য, ভ্যাকসিন নিলেও কোভিড প্রটোকল মেনে চলতে হবে। কারণ, তাঁরা জানিয়েছেন, যতটা সম্ভব করোনাভাইরাসকে মানব শরীরে প্রবেশ করা থেকে রক্ষা করতে হবে। তার জন্য মাস্ক পরতে হবে এবং বার বার হাত ধোয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। পাশাপাশি তাঁদের বক্তব্য, যতটা সম্ভব ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। বিশ্বব্যাপী অতিমারী পরিস্থিতি যে ভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রতিটি মানুষকে সচেতন হওয়ার বার্তা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ধূমপান বর্জনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ধূমপায়ীদের শরীরে কোভিড আক্রমণ হলে তাঁদের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায় বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন-ভারতে মাদক মামলায় ধরা পড়লে কী ধরনের শাস্তি হতে পারে?