Anti Covid Tablet: ওষুধ খেয়ে কি করোনা প্রতিরোধ সম্ভব? ফাইজার আনছে অ্যান্টি-কোভিড ট্যাবলেট
- Published by:Suman Majumder
Last Updated:
এই অ্যান্টি-কোভিড ওষুধটি শরীরে ভাইরাস আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে অর্থাৎ শুধুমাত্র সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হচ্ছে।
#কলকাতা: কোভিড সংক্রমণের দেড় বছর অতিক্রান্ত হলেও এখনও প্রায় প্রতি দিনই দেশের বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে কোভিড সংক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। চলতি বছরের শুরুর দিকে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছিল কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ। প্রতি দিন হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন। এবং অধিকাংশজনের শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা গিয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন এখনও পর্যন্ত কোভিডের ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট (Coronavirus Delta Variant) সবথেকে মারাত্মক রূপ ধারণ ধারণ করেছে। এরপর আশঙ্কা করা হচ্ছে চলতি বছরে আছড়ে পড়তে পারে কোভিডের তৃতীয় ঢেউ। তাতে আক্রান্ত হতে পারে শিশুরা। তাই এই ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছে সরকার এবং বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যেই খবর মিলেছে যে ফাইজার (Pfizer) ইনকর্পোরেটেড তৈরি করছে নভেল অ্যান্টি-করোনাভাইরাস পিল!
ওষুধ খেয়ে কি কোভিড-১৯ প্রতিরোধ করা সম্ভব?
প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় ধরে আমরা অতিমারীর সঙ্গে মোকবিলা করে যাচ্ছি। দীর্ঘ অপেক্ষার পর ভ্যাকসিন হাতে পেলেও এখনও মারণ ভাইরাস প্রতিরোধে নিশ্চিন্ত হওয়া যায়নি। ইতিমধ্যে যেমন একদিনে বেশ কয়েকটি ভ্যাকসিন চালু হয়েছে, অন্য দিকে উদ্ভাবনী মাল্টিভ্যারিয়ান্ট জ্যাব সহ আরও অনেকগুলি পরীক্ষা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে বৈজ্ঞানিক বিশেষজ্ঞরা কোভিডের ঝুঁকি কমাতে বিভিন্ন ধরনের কাজ করছেন। যার মধ্যে আমেরিকান ফার্মাসিউটিক্যাল মেজর, ফাইজার (Pfizer) ইনকর্পোরেটেড তৈরি করছে নভেল অ্যান্টি-করোনাভাইরাস পিল।
advertisement
advertisement
বর্তমানে শক্তিশালী ভ্যাকসিন জ্যাবের মাধ্যমে কোভিড ভ্যাকসিনের দৌড়ে ফাইজার এগিয়ে রয়েছে। ফাইজার নভেল অ্যান্টি-কোভিড ওষুধ তৈরি করছে এবং বর্তমানে এটি পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে।
আপাতত বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য হল কোভিড-১৯ সংক্রমণকে প্রাথমিক পর্যায়েই নিমূল করা। সেক্ষেত্রে ফাইজারের এই নতুন ওরাল ওষুধটি সংক্রমণের শুরুতেই কাজ করবে বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা। যেহেতু এটি বিশ্বব্যাপী তৈরি হওয়া প্রথম প্রতিরোধকমূলক কোভিড ওষুধগুলির মধ্যে একটি হতে চলেছে, তাই আমরা এই ওষুষটি কী ভাবে কাজ করে এবং কী কারণে এটি বিশেষ ওষুধ সেই বিষয়ে জেনে নেব।
advertisement
ফাইজারের তৈরি অ্যান্টি-কোভিড পিল কী?
ফাইজারের তৈরি অ্যান্টি-কোভিড ওষুধ হল একটি ওরাল-অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ যা প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যবহার করলে সার্স-কোভ -২ (SARS-COV-2) ভাইরাসের কারণে হওয়া কোভিড সংক্রমণ রোধে কাজ করবে। প্রসঙ্গত, অন্যান্য সংক্রামক রোগের চিকিৎসায় এরকম বিভিন্ন অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ রয়েছে, এবং যাদের মধ্যে কিছু ওষুধ প্রাথমিকভাবে কোভিড প্রতিরোধেও কাজ করে। সেক্ষেত্রে ফাইজার হল প্রথম এই ধরনের ওষুধ যার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। তাই সংশ্লিষ্ট ওষুধটি মহামারীর বিরুদ্ধে চলতে থাকা লড়াইয়ে একটি আমূল পরিবর্তন করতে পারে বলে মত বিজ্ঞানীদের।
advertisement
কী ভাবে কাজ করে?
রিপোর্ট অনুসারে, ফাইজারের কোভিড-১৯ প্রতিরোধের জন্য একটি অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ তৈরির পরিকল্পনা ২০২১ সালের মার্চ মাসে চালু করা হয়েছিল। তখন থেকেই এই ওষুধটি দ্রুত সাধারণ মানুষের কাছে পৌছে দেওয়ার জন্য সংস্থা পরীক্ষামূলক কাজ চালাচ্ছে।
অ্যান্টিভাইরাল ওষুধটি এমনভাবে পরিকল্পনা করা হচ্ছে যা মানুষের কোভিড-১৯-এর ঝুঁকি একেবারে কমিয়ে দিতে পারবে, এমনকি যদি কেউ কোভিড-১৯ পজিটিভ অথবা ভাইরাসের লক্ষণ রয়েছে এমন কোনও ব্যক্তির সংস্পর্শে আসে তারও কোনও ঝুঁকি থাকবে না। এইচআইভি-এইডস (HIV-AIDS) এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার ওষুধ যেভাবে কাজ করে ঠিক একইভাবে এই অ্যান্টিভাইরাল থেরাপি তৈরি হচ্ছে। এক্ষেত্রেও ওষুধটি শরীরে একবার ভাইরাস আক্রমণ করলে পুনরায় ভাইরাল বৃদ্ধি এবং আরও ভাইরাস তৈরির ক্ষেত্রে অনুঘটকের ভূমিকায় থাকা উৎসেচকগুলি আটকে দেবে কিংবা কার্যকরীভাবে কমিয়ে দেবে।
advertisement
আরও পড়ুন- করোনার ফলে ঘ্রাণশক্তির সমস্যা! ধাক্কা দিচ্ছে ওজন এবং যৌন সম্পর্কেও!
ট্রায়ালে এইচআইভি (HIV)-এর চিকিৎসায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত আরেকটি অ্যান্টিভাইরাল রিটোনাভির (Ritonavir) সঙ্গে এই ওষুধের নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হবে। এই ওষুধটি এমনভাবে কাজ করবে যে এটি প্রাথমিক পর্যায়ে ভাইরাসকে নির্মূল করে সংক্রমণ ছড়ানোর এবং সম্ভাব্য সংক্রমণের সম্ভাবনা রাখবে না। নতুন ওই ওষুধটি প্রাথমিক পর্যায়েই ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করতে পারবে৷ শরীরে ভাইরাস প্রবেশের পরই অর্থাৎ সংক্রমণের প্রথম লক্ষণগুলিতেই সংশ্লিষ্ট ওষুধটি দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে যাতে সংক্রমণের ন্যূনতম সম্ভাবনা না থাকে। সেই জন্যেই বিশেষত যারা কোভিড পজিটিভ মানুষের সংস্পর্শে এসেছে তাদেরকে ওষুধটি দেওয়া হবে বলে ঠিক করা হয়েছে। এছাড়াও, যারা ইতিমধ্যে সংক্রমিত হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ওষুধটি কতটা ভালো কাজ করবে সে বিষয়েও ফাইজার গবেষণা করছে।
advertisement
প্রসঙ্গত, দু'টি একই ধরনের ওষুধ রয়েছে মার্ক অ্যান্ড কো. (Merck & Co.) এবং রিজব্যাক বায়োথেরাপিউটিকস (Ridgeback Biotherapeutics) এবং রোচে (Roche) এবং অ্যাটিয়া ফার্মাসিউটিক্যাল (Atea Pharmaceuticals)-এর।
কার্যকারিতা এবং সুরক্ষা
ফার্মা প্রধানত পরের পর্যায়ের গবেষণায় ২৬০০ জনকে তালিকাভুক্ত করার পরিকল্পনা করেছে, যেখানে ৫-১০ দিনের জন্য একটি সংমিশ্রণ ওষুধ অথবা প্লাসবো ওষুধ দেওয়া হবে৷ আর এই নতুন ওরাল ওষুধটি দিনে দু'বার নিতে হবে বলে সংস্থাটির তরফে জানানো হয়েছে।
advertisement
যদিও ট্রায়ালটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে ওষুধের সম্ভাব্য কার্যকারিতা বোঝার পরিকল্পনা করছেন। ট্রায়ালে কম ডোজে রিটোনাভির (Ritonavir) সঙ্গে ওরাল ওষুধটি দেওয়া হবে। ১৮ বছরের বেশি বয়সী এবং কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগীর সংস্পর্শে এসেছে এমন মানুষেরা এই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে।
উল্লেখ্য ফাইজারের অ্যান্টিভাইরাল ওরাল ওষুধটি এইচআইভি এবং হেপাটাইটিস-সি (Hepatitis-C)-এর মতো সংক্রমণ প্রতিরোধ করবে। একই সঙ্গে চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত প্রোটিজ ইনহিবিটার (Protease Inhibitors) ওষুধগুলির মতো হওয়ায় এবং গুরুত্বপূর্ণ উৎসেচগুলিকে আটকে দেওয়া/ কার্যকরী হওয়ায় এটি কোভিড ১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে ভালো কাজ করবে বলে বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস।
কতটা সাহায্য করবে?
ওষুধগুলি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে আগামী দিনে হাসপাতালের জন্য একটি কার্যকর অ্যান্টিভাইরাল পিল থাকা যে খুবই স্বস্তির বিষয় তা বলাই বাহুল্য। একই সঙ্গে, এটি মারণ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদেরও সাহায্য করবে।
কবে পাওয়া যাবে?
গবেষকরা ২০২২ সালের প্রথম তিন মাসের মধ্যে সব দিক খতিয়ে দেখার পরিকল্পনা করেছেন। যদি অ্যান্টিভাইরাল ওষুধটি কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে ভালো ভাবে কার্যকরী হয় তাহলে এটি মোটামুটি ২০২২ সালের শেষ নাগাদ পাওয়া যাবে।
কোনও সীমাবদ্ধতা রয়েছে কি এই ওষুধের?
যেহেতু অ্যান্টিভাইরাল ওষুধটি শরীরে ভাইরাস আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে অর্থাৎ শুধুমাত্র সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হচ্ছে, তাই সংশ্লিষ্ট ওষুধটি যারা হাসপাতালে রয়েছে অথবা গুরুতর ভাবে সংক্রমিত হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে কাজ না-ও করতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
view commentsLocation :
First Published :
October 03, 2021 12:53 AM IST