ফুসফুসের উপরে প্রভাব
SARs-COV-2 মূলত ফুসফুসের উপর আক্রমণ করে। কোভিডের আক্রমণ শুরুর সময় থেকেই দেখা গেছে যাঁদের উপর কোভিড থাবা বসিয়েছে তাঁদের ফুসফুস মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা সহ ফুসফুসের বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হয় মানব দেহে। এর সঙ্গে যদি কেউ ধূমপান করেন তাঁর ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও মারাত্মক হয়েছে। দেখা গিয়েছে, ধূমপান করেন না এরকম ব্যক্তির থেকে ধূমপায়ীদের শরীরে কোভিডের আক্রমণ বেশি। এবং অধিকাংশ ধূমপায়ীর শরীরে কোভিড আক্রমণ করার পর তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। এবং মৃত্যুর হারও তাঁদের মধ্যে বেশি।
advertisement
কোভিড আক্রমণের শুরুর দিকে এবিষয়ে একটি গবেষণা করেন বিজ্ঞানীরা। এবং সেই গবেষণা শেষে প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা গিয়েছে সুস্থ সাধারণ মানুষ যাঁরা ধূমপান করেন না তাঁদের শরীরে কোভিড আক্রমণ হওয়ার পর যে পরিমাণ অসুস্থ হয়েছেন তাঁদের থেকে এমন ব্যক্তি যাঁরা ধূমপান করেন তাঁদের শরীরে কোভিড আক্রমণের পর পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল হয়েছে। এই গবেষণা থেকে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করোনার ক্ষেত্রে ধূমপায়ীদের ঝুঁকি অনেকটাই বেশি।
হাসপাতালে ভর্তির পরিসংখ্যান
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় (University of Oxford) এবিষয়ে একটি গবেষণা চালিয়েছে। বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছে তারা। তাদের গবেষণায় যা উঠে এসেছে তা নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা গেছে যে সব ধূমপায়ী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে ৮০ শতাংশ রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।
ওই গবেষণার রিপোর্টটি অনলাইনে প্রকাশ হয়েছিল। রেসপিরেটরি জার্নাল থোরাক্সের অনলাইনে প্রকাশিত ওই রিপোর্টে দেখা গিয়েছে ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে করোনার ঝুঁকি ৪৫ শতাংশ বেশি থাকে। এবং ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয় অধূমপায়ীদের থেকে ৬০ শতাংশ বেশি। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে সংক্রমণের হার বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও ধূমপায়ীদের ঝুঁকি অনেকটাই বেশি। এমনকী, ধূমপায়ীদের থেকে অন্য ব্যক্তিদের সংক্রমণের মাত্রাও বেশি থাকে। পাশাপাশি এটাও বলা হয়েছে অধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে যে সংখ্যক কোভিডে আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় তার থেকে প্রায় ৫ গুন বেশি ধূমপায়ী কোভিড রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। এবং মৃত্যুর হার অধূমপায়ীদের থেকে ধূমপায়ীদের ১০ গুন বৃদ্ধি পায়।
এবিষয়ে আরও একটি গবেষণা করেছে দ্য ভার্সিটি’স নুফিল্ড ডিপার্টমেন্ট অফ প্রাইমারি কেয়ার হেল্থ সায়েন্স (varsity's Nuffield Department of Primary Care Health Sciences)। ওই সংস্থার মুখ্য গবেষক অ্যাশলে ক্লিফ্ট (Ashley Clift) এবিষয়ে বলেন, “আমরা এবিষয়ে একটি গবেষণা করেছি। এবং আমাদের গবেষণায় উঠে এসেছে যাঁরা ধূমপান করেন তাঁদের ক্ষেত্রে করোনার আক্রমণ অনেকটাই বেশি। এবং পরিস্থিতি অনেকটাই জটিল হয়। পাশাপাশি ধূমপান হৃদরোগ, ফুসফুসের সমস্যা বা ক্যান্সারের মতো মারণ রোগ বাঁধাতে পারে।” পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব ধূমপান ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, “ধূমপান সম্পূর্ণ ভাবে ছেড়ে দেওয়ার জন্য এটাই উপযুক্ত সময়। কারণ, বর্তমানে ধূমপানে না ছাড়লে বহু সমস্যা তৈরি হতে পারে।"
আরও পড়ুন- জনসন অ্যান্ড জনসনের ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ কতটা কার্যকরী?
অ্যাশলে ক্লিফ্ট এবং তাঁর টিম যে গবেষণাটি করেছেন তাতে তাঁরা কোভিড ১৯-এর টেস্ট রেজাল্ট নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান। পাশাপাশি হাসপাতালে ভর্তির হার এবং মৃত্যুর সংখ্যা নিয়েও বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করেন। প্রায় ৪ লাখ ২০ হাজার মানুষের থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন তাঁরা। এবং সেই তথ্যে বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্তে উপনীত হন এবং তার পরেই নিজেদের রিপোর্ট প্রকাশ করেন।
ওই সমীক্ষার জন্য যাঁদের কাছ থেকে স্যাম্পেল কালেকশন বা নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল তাদের মধ্যে ১৪ হাজার জন ধূমপায়ী ছিলেন। যাঁদের মধ্যে ৫১ জন কোভিড আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তথ্য বিশ্লেষণে উঠে এসেছে প্রতি ২৭০ জনের মধ্যে ১ জন করে ধূমপায়ী করোনা আক্রান্ত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি ৩৮৪ জনের মধ্যে একজন করে করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
অন্য দিকে, ২ লাখ ৫০ হাজার জন অধূমপায়ী ছিলেন। তাদের মধ্যে ৪৪০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হয়েছিল। অর্থাৎ প্রতি ৬০০ জনের মধ্যে ১ জন করে অধূমপায়ী করোনা রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্য দিকে, অধূমপায়ীদের মধ্যে ১৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি ১ হাজার ৬৬৬ জনের মধ্যে ১ জন করে অধূমপায়ী করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন- করোনা হলে কি শ্রবণশক্তি নষ্ট হতে পারে? যা জানা জরুরি...
লং কোভিডের সম্ভাবনা
এবিষয়ে একটি তথ্য তুলে ধরেছেন লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজের (Imperial College London) এর অধ্যাপক ক্রিস্টোফার মিল্লেট (Christopher Millet)। সেখানে তিনি বলেন, অনেক ভুয়ো খবর রটছে যে ধূমপায়ীদের উপর করোনার কোনও ভযঙ্কর প্রভাব নেই। এমনকী, অনেকেই মনে করেছিলেন ধূমপান করলে করোনা থেকে বাঁচা সম্ভব। কিন্তু তা সম্পূর্ণ ভুল। ধূমপান করলে করোনা আরও মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে করোনা সম্পূর্ণ ভাবে নির্মূল করার কোনও রাস্তা এখনও পাওয়া যায়নি। তবে করোনা থেকে বাঁচার একটি রাস্তা ভ্যাকসিন গ্রহণ। সঠিক সময়ে টিকা গ্রহণ করলে এবং বুস্টার ডোজ নিলে করোনা থেকে অনেকটা বাঁচা সম্ভব হবে। শুধু তাই নয় কোভিড প্রোটোকল সম্পূর্ণ ভাবে মেনে চলতে হবে। অন্য দিকে, সুষম আহারের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের বক্তব্য, সঠিক আহার করলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই বাড়বে তাতে করোনা প্রতিহত করা সম্ভব হবে। এবং এর সঙ্গে ধূমপান না করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। মদ্যপানও না করতে বলেছেন তাঁরা। এতে কোভিড থেকে সেরে উঠতে যেমন সমস্যা হয়, তেমনই লং কোভিডের সম্ভাবনা দেখা দেয়।
