#কলকাতা: টিকাকরণ শুরুর পর থেকে করোনার থাবা বেশ কিছুটা কমেছে। তবে করোনা যে সম্পূর্ণ নির্মূল হয়ে গেছে এমনটা নয়। প্রতি দিনই বহু মানুষ আক্রান্ত হলেও তাদের ক্ষেত্রে প্রভাব কম। ২০২০ সালের শুরু থেকেই করোনার আক্রমণ শুরু হয় এদেশে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন। তার পর বিজ্ঞানীদের চেষ্টায় তৈরি হয় একাধিক ভ্যাকসিন। বর্তমানে জোর কদমে চলছে টিকাকরণ প্রক্রিয়া। ১৮ বছর বয়সীদের উপরে সকলকে দেওয়া হচ্ছে করোনা ভ্যাকসিন।
এদেশে কোভিশিল্ড (Covishield), কোভ্যাক্সিন (Covaxin) সহ একাধিক সংস্থার টিকা দেওয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত করোনা টিকা নেওয়া সম্পন্ন হলেও বুস্টার ডোজ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। কেন জরুরি, এপ্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখার জন্য বুস্টার ডোজ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এক্ষেত্রে জনসন অ্যান্ড জনসনের (Johnson & Johnson Vaccine) বুস্টার ডোজ কতটা কার্যকরী তা নিয়ে অনেকের কৌতূহল রয়েছে। এই প্রতিবেদনে রয়েছে সমস্ত উত্তর।
প্রথমে জেনে নেওয়া যাক বুস্টার ডোজ কাদের প্রয়োজন এবং কেন প্রয়োজন
দেখা যায় যে, করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কার হওয়ার পর সর্ব প্রথম ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিল ডাক্তার এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সকলকে। এবং তার পাশাপশি যাঁরা জরুরি পরিষেবার সঙ্গে তাঁদেরও টিকা দেওয়া হয়েছিল। কারণ তাঁরা একদম সামনের সারিতে থেকে করোনার সঙ্গে লড়াই করছিলেন। তাঁদের টিকা গ্রহণ করার পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনও তাঁদের সামনের সারিতে লড়াই করতে হচ্ছে। অতএব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাতে বজায় থাকে সেই কারণে বুস্টার ডোজ দেওয়া প্রয়োজন। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় থাকবে এবং পুনরায় করোনা আক্রমণের হাত থেকে বাঁচা সম্ভব হবে।
করোনা বুস্টার ডোজের ক্ষেত্রে জনসন অ্যান্ড জনসনের (Johnson & Johnson Vaccine) ভূমিকা
বিজ্ঞানীদের একাংশের বক্তব্য, করোনা আক্রমণের ক্ষেত্রে মূল সমস্যা হল ভ্যারিয়ান্ট বদল করে বার বার আক্রমণ করছে ভাইরাসটি। যার ফলে অনেক সময় ভ্যাকসিনের কার্যকতার ক্ষেত্রে তারতম্য প্রকাশ পাচ্ছে। তবে বর্তমান অতিমারীর সময়ে করোনা ভ্যাকসিনই একমাত্র বাঁচার অস্ত্র। একমাত্র কোভিড ভ্যাকসিনের মাধ্যমেই করোনা যুদ্ধে টিকে থাকা সম্ভব। এবং তার সঙ্গে বুস্টার ডোজের-ও কার্যকারিতা অনেক বেশি।
সম্প্রতি জনসন অ্যান্ড জনসনের তরফে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, তাদের তৈরি বুস্টার ডোজের কার্যকারিতা নিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছে তারা। সেখানে দেখা গিয়েছে যে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে যদি কেউ করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেওয়ার ৯৪ দিন পর জনসন অ্যান্ড জনসনের বুস্টার ডোজ নেয় তাদের ক্ষেত্রে ওই বুস্টার ডোজ ৯৪ শতাংশ কার্যকরী হবে।
জনসন অ্যান্ড জনসনের (Johnson & Johnson Vaccine)সিঙ্গল ডোজ কি কার্যকরী?
বিজ্ঞানীরা এবং করোনা বিশেষজ্ঞদের অনেকে জানিয়েছেন জনসন অ্যান্ড জনসনের করোনা টিকা নিয়ে করোনার মারাত্মক আক্রমণ থেকে ৮৫ শতাংশ বাঁচা সম্ভব। চলতি বছরের জানুযারি মাসে এই নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। যেখানে বলা হয়েছে, জনসন অ্যান্ড জনসন ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেওয়ার চার সপ্তাহ পর করোনা প্রতিহত করতে ৬৬.৩ শতাংশ কার্যকরী।
তবে ওই ট্রায়ালটি করা হয়েছিল করোনা ভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টের (Coronavirus Delta Variant) সন্ধান পাওয়ার আগে। মনে করা হয়, করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট সব থেকে বেশি মারাত্মক। এবং আক্রমণ করার ক্ষমতাও অনেক বেশি। বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের ধারণা, করোনার নতুন যে ভ্যারিয়ান্ট বা রূপগুলি আসছে সেই ভ্যারিয়ান্টগুলির ক্ষেত্রেও জনসন অ্যান্ড জনসনের ভ্যাকসিন প্রতিহত করতে প্রস্তুত । তবে সেগুলির ক্ষেত্রে কার্যক্ষমতা কিছুটা কমার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে যাই হোক জনসন অ্যান্ড জনসনের তরফে জানানো হয়েছে, তাদের তৈরি ভ্যাকসিন সিঙ্গল ডোজ নিলে তা কোভিড ১৯-এর বিরুদ্ধে ৭৯ শতাংশ কার্যকরী হবে। এবং পরিস্থিতি এতটা মারাত্মক হয়ে ওঠে না যে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হয়। রিপোর্টে প্রকাশ হাসপাতালে ভর্তি না হওয়ার ক্ষেত্রে ৮১ শতাংশ কার্যকরী। সম্প্রতি একটি রিপোর্টও এই বিষয়ে প্রকাশিত হয়। যেখানে ২০২০ সালের ১ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত একটি তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হলেও জনসন অ্যান্ড জনসনের তৈরি কোভিড ভ্যাকসিনের কার্যক্ষমতা কোনও ভাবেই কমে যায়নি। এমনকী, ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট প্রকাশ পাওয়ার পরেও ভ্যাকসিনটি সমান ভাবে করোনা প্রতিহত করতে প্রস্তুত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) সব থেকে চিন্তা বাড়িয়েছিল ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট। কিন্তু ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টের ক্ষেত্রেও প্রতিষেধকটি যথেষ্ট কার্যকর বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
আমাদের কি বুস্টার ডোজ নেওয়া দরকার? কিন্তু কেন?
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই যে ভ্যাকসিন নেওয়ার পর সময় যত বাড়বে টিকার কর্মক্ষমতা তত কমবে। ভাইরাসের চরিত্রে যদি না কোনও বদল আসে ততক্ষণ পর্যন্ত সম্পূর্ণ টিকা নেওয়া ব্যক্তিও ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। তবে এটাও ভাবার কোনও কারণ নেই যে সময় অতিক্রান্ত হলে ভ্যাকসিন করোনা ভাইরাসের উপর কাজ করতে পারবে না। কেন্দ্রের সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC) জানিয়েছে, “কোভিড ১৯ ভ্যাকসিন প্রতিটি মানুষের উপর ভীষণ কার্যকরী। কোনও মারাত্মক অসুস্থতা থেকে রক্ষা করতে সক্ষম। পাশাপাশি পরিস্থিতি এতটা মারাত্মক হয়ে ওঠে না যে, কাউকে অতি দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন পড়ে। শুধু তাই নয়, মৃত্যু হার অনেক কম করে। ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টের উপরেও ভীষণ কার্য়করী এই ভ্যাকসিন।”
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বুস্টার ডোজ নেওয়ার একটাই কারণ। তা হল শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা। কোভিড ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেওয়ার পর যে পরিমাণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে বুস্টার ডোজ নেওয়ার ফলে তা অনেকটাই বেড়ে যায়।
জনসন অ্যান্ড জনসনের বুস্টার ডোজ কতটা কার্যকরী?
যারা জনসন অ্যান্ড জনসনের ভ্যাকসিন নিয়েছেন তাঁদের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে ভ্যাকসিন নেওয়ার ৬ মাস পরেও তাঁদের শরীরে অ্যান্ডিবডি তৈরি হয়েছে। এবং তাঁদের ক্ষেত্রে করোনা সংক্রমণের হার অনেকটাই কম। চলতি বছরের ২১ সেপ্টেম্বর একটি ডেটা প্রকাশ করেছে জনসন অ্যান্ড জনসন। সেখানে বলা হয়েছে তাদের তৈরি ভ্যাকসিন যারা গ্রহণ করছে তাদের দুই বা ছয় মাস পর ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন নিতে হবে। এতে কোভিড ভ্যাকসিনের কার্যক্ষমতা ৮৫ থেকে ৯৪ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।