বৃষ্টি কেন বদলেছে তার ধরণ?
গ্লোবাল ওয়ার্মিং, বনাঞ্চল ধ্বংস, অত্যধিক চাষাবাদ এবং পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতা হল বৃহত্তর কারণ, যা সম্পর্কে বিশ্ব সচেতন। বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সের বিজ্ঞানীরা যদিও জানাচ্ছেন যে সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে এটি হল গাছের প্যাটার্নের পরিবর্তন, যা বৃষ্টিকে বিপথগামী করছে। প্রফেসর টি ভি রামচন্দ্র এবং তাঁর দল কেরালা, কর্নাটক, গোয়া এবং মহারাষ্ট্র জুড়ে বিস্তৃত দেশের পশ্চিমঘাট অঞ্চলটি পর্যবেক্ষণ করেছেন। সেখানেই উঠে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য।
advertisement
গাছের প্যাটার্নের পরিবর্তন বলতে কী বোঝায়?
পশ্চিমঘাট অঞ্চল দেশীয় চিরহরিৎ গাছে ভরা। চাষের এলাকা ক্রমেই বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই অঞ্চলে চিরহরিৎ বনভূমির পরিমাণ কমছে। উপর থেকে সবুজ বনাঞ্চল দেখালেও চিরসবুজ গাছ এখন বাবলা, রাবার এবং নারকেল গাছ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে। এ কারণে মাটির গুণাগুণ ও জীববৈচিত্র্য নষ্ট হয়ে গিয়েছে। মাটির শক্তি থেকে শুরু করে ছায়া, সূর্যালোকের অনুপ্রবেশ থেকে পরাগায়ণ পর্যন্ত সবকিছুরই ক্ষতি হয়েছে। এগুলি অত্যন্ত বড় সংখ্যায় পুরো সিস্টেমে ধাক্কা দেয়।
আমরা কতটা আদি বন হারাচ্ছি?
আমাদের এখন মাত্র ১০ শতাংশ বনভূমি রয়েছে। সবুজ আবরণ হ্রাসের হার এত বেশি এবং দ্রুত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আগামী ১০ বছরে এটি অবশ্যই ৫ শতাংশে নেমে যাবে। এই সমস্ত সংখ্যা জাতীয় গড় ১৮ শতাংশের থেকে অত্যন্ত কম, যা একটি জনসংখ্যার স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য প্রয়োজন।
গাছের প্যাটার্নের পরিবর্তনের সরাসরি প্রভাব কী?
সরাসরি প্রভাব হল ভূমিধস। কর্নাটকের কোডাগু এবং কেরল ও মহারাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি জায়গাতে সেটাই ঘটছে। যখন দেশীয় গাছ কাটা হয়, তখন এটিকে দেশীয় গাছ দিয়েই প্রতিস্থাপন করা উচিত। পরিবর্তে, বিদেশি গাছ বসালে (সেই অঞ্চলের জন্য আদর্শ নয়) এটি প্রকৃত উদ্দেশ্য পূরণ করবে না। নতুন উদ্ভিদের সম্পূর্ণ পরিবেশগত কাঠামো ভিন্ন হবে। তারা মূলত আক্রমণকারী হবে। ইতিমধ্যেই তাপমাত্রার পার্থক্য চোখে পড়েছে। মাটির আর্দ্রতাও ৪০-৫০ শতাংশ কমে গিয়েছে।
অন্যান্য প্রধান প্রভাব কী কী?
যখন একটি বন থাকবে, তখন পরাগায়ণকারী (Pollinators) সংখ্যায় প্রচুর হবে। তারা একটি বড় বৈচিত্র্যের জন্য সংগ্রাম করবে। সুতরাং, যদি বনের কাছাকাছি একটি খামার থাকে, তবে ফলন অবশ্যই দূরের খামারের চেয়ে বেশি হবে। একজন কৃষক, যার খামার একটি বনের কাছাকাছি সে বছরে প্রায় ১.৫৪ লক্ষ টাকা আয় করে। যেখানে কৃষকের জমি বনের জীববৈচিত্র্যের থেকে দূরে, তারা বার্ষিক ৩২ হাজার টাকার কম আয় করতে পারে। এটি গড় সংখ্যা এবং ফসল ভেদে পরিবর্তিত হয়। কিন্তু পার্থক্য প্রায় একই। উদাহরণ হিসেবে ধান ধরলে, বনের কাছাকাছি খামারগুলিতে একর প্রতি ১২ থেকে ১৪ কুইন্টাল শস্য পাওয়া যায়। যেখানে দূরের খামারগুলি ৬ থেকে ৮ কুইন্টালের কম ফলন দেয়।
আরও পড়ুন- গর্ভাবস্থায় এই খাবার একদম নয়! এগুলি খেলেই বিপদ আসতে পারে যে কোনও সময়ে
কীভাবে গাছের প্যাটার্নে জল প্রভাবিত হয়?
ভূপৃষ্ঠ ও ভূগর্ভস্থ জল উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সামগ্রিক জল ধারণের ক্ষতি হয় হয়। বনের অভ্যন্তরে স্রোতধারা, যেখানে দেশীয় গাছের আধিপত্য থাকে, সেখানে সারা বছর ধরে প্রবাহিত হয়। কিন্তু যদি বিপরীত বন প্যাটার্ন থাকে, তবে সেখানে স্রোত বছরে মাত্র চার মাস প্রবাহিত হয়- শুধুমাত্র বৃষ্টির সময়ে। জল সরবরাহ ব্যাহত হলে জমি অনুর্বর হয়ে যায়। এটি সরাসরি মাটির উর্বরতাকে প্রভাবিত করে। যা অনুর্বর জমির সীমানাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। এই সমস্ত কারণ এবং আরও অনেক কিছু বৃষ্টির ধরনকে খুব ক্ষতিকর ভাবে প্রভাবিত করেছে। যখন কেউ চাষ করতে চায় তখন বৃষ্টি হয় না, আবার ফসল কাটার সময় বৃষ্টি হয়, যা উভয় ক্ষেত্রেই এটি একটি বিপর্যয়। লোভ সবুজকে গ্রাস করেছে, তার ধাক্কা একেবারে সরাসরি এসে পড়ছে। তাই শুধু গাছের সংখ্যা বাড়ালেই হবে না, দায়িত্ব বনের প্রকৃতি রক্ষারও!