কিন্তু কেমন হয় সেই সব উপসর্গ? কোভিডের এই ধরনের দীর্ঘস্থায়ী উপসর্গের মধ্যে রয়েছে চুল ঝরে যাওয়া। সেই সঙ্গে রয়েছে ব্রেন ফগও। আর এই ব্রেন ফগের বিষয়টা একটু ভেঙেই বলা যাক। এক্ষেত্রে রোগীর মনে বিভ্রান্তি দেখা যায়। কোনও কিছুতে মনোনিবেশ করতে পারেন না রোগী এবং তিনি সব কিছু ভুলে যেতে থাকেন ইত্যাদি। এই ধরনের দীর্ঘস্থায়ী উপসর্গ সমস্ত বয়সের রোগীদের মধ্যেই দেখা যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন গবেষকরা।
advertisement
তবে সম্প্রতি এক নতুন গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে এসেছে। ওই গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যেই করোনা পরবর্তী উপসর্গ বেশি দেখা যায়। এই বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করে নেওয়া যাক।
আরও পড়ুন - Viral Photo: অসাধারণ দুই ভুরুর মধ্যে গভীর কাটা ক্ষতের দাগ, কোনও লুকোছাপা নেই মালাইকার, ফটো ভাইরাল
দীর্ঘস্থায়ী কোভিডের অন্যান্য উপসর্গগুলি কী কী?
আমরা প্রায় কমবেশি সকলেই জানি, করোনাভাইরাস এতটাই বিপজ্জনক যে, এটা একটাই সময়ের মধ্যে দেহের একাধিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। যে কোনও আকারে এর উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যা মাসের পর মাস ধরে প্রকাশ পেতে থাকে। তবে এটা নিশ্চিত ভাবে বলা মুশকিল যে, কে দীর্ঘস্থায়ী কোভিড থেকে সেরে উঠবে আর কে সেরে উঠবে না। দেখে নেওয়া যাক, দীর্ঘস্থায়ীর কোভিডের আরও কিছু উপসর্গ-
ক্লান্তি বা অবসন্ন ভাব
শ্বাসকষ্ট বা শ্বাস নিতে না-পারা
কাশি
গাঁটে ব্যথা
বুকে ব্যথা
স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ার মতো সমস্যা
ঘুমের সমস্যা
পেশি যন্ত্রণা
হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি
গন্ধ ও স্বাদহীনতার অনুভূতি
মানসিক চাপ অথবা উত্তেজনা
জ্বর
মাথা ঘোরা
মহিলাদের ক্ষেত্রে কেমন উপসর্গ দেখা যাবে?
জার্নাল অফ উইমেন্স হেলথ (Journal of Women's Health)-এর সর্বশেষ সংস্করণে একটি এই সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। মহিলাদের মধ্যে পুরুষদের তুলনায় বেশি উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। আর সেই দীর্ঘস্থায়ী উপসর্গগুলি হল- কোনও কিছু গিলতে সমস্যা, অবসন্ন ভাব এবং বুকে ব্যথা। আবার গবেষণায় এটাও দেখা গিয়েছে যে, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের এই কোভিড সংক্রমণের ক্ষেত্রে ঝুঁকি কম। আর শুধু তা-ই নয়, মারাত্মক জটিল কেসের ক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মৃত্যুর আশঙ্কাও অনেকটাই কম। তবে গবেষকেরা এই গবেষণা চালানোর সময় লক্ষ্য করেছেন যে, লিঙ্গ বিভেদে পরিস্থিতিও ভিন্ন হয়। আর তাই করোনা পরবর্তী আরোগ্য লাভের ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকির আওতায় রয়েছেন মহিলারাই। অর্থাৎ কোভিড সেরে যাওয়ার পরেও মহিলাদের মধ্যে উপসর্গের রেশ কয়েক সপ্তাহ কিংবা কয়েক মাস পর্যন্ত থেকে যেতে পারে।
আরও পড়ুন- Weather Update: আর তাপপ্রবাহ নয়, এই সব এলাকায় বইবে আঁধি, হবে বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি
মহিলা এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে উপসর্গের ঠিক কতটা ফারাক থাকে?
ওই গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে যে, দীর্ঘস্থায়ী কোভিড সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠা প্রায় ৯৭ শতাংশ মহিলার ক্ষেত্রেই উপসর্গ দেখা যায়। সেখানে প্রায় ৮৪ শতাংশ পুরুষদের মধ্যে কোভিড পরবর্তী উপসর্গ লক্ষ্য করা গিয়েছে। মহিলাদের ক্ষেত্রে এই দীর্ঘস্থায়ী উপসর্গের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- ঠিক ভাবে শ্বাস নিতে না-পারা বা শ্বাসকষ্ট, দুর্বলতা, থোরাসিক যন্ত্রণা, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া এবং ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি। তবে মহিলাদের ক্ষেত্রে পেশি ব্যথা অথবা কাশির মতো দীর্ঘস্থায়ী উপসর্গ সেভাবে দেখা যায়নি। পুরুষদের মধ্যে কোভিড সংক্রমণ পরবর্তী যে উপসর্গটা সবথেকে বেশি দেখা যায়, সেটা হল আচমকা ওজন কমতে শুরু করা। সেখানে মহিলাদের মধ্যে আবার ঘুমের সমস্যাটাই বেশি দেখা যায়।
দীর্ঘস্থায়ী কোভিড কী এবং এটা কত দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়?
গবেষকরা বলছেন, অনেক সময় প্রাথমিক সংক্রমণের প্রায় ৯০ দিন পরেও করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। একেই দীর্ঘস্থায়ী কোভিড বলা হচ্ছে। এই ধরনের উপসর্গ মৃদু অথবা জটিল হতে পারে। আর উপসর্গ কতটা জটিল হচ্ছে, সেটা বুঝে তবেই হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। গবেষকদের দাবি, দীর্ঘস্থায়ী কোভিডের বিষয়ে আরও নিখুঁত ভাবে বোঝার জন্য আরও অনেক গবেষণা করতে হবে। একটি পরিসংখ্যান বলছে, ১০ শতাংশ থেকে এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত করোনা রোগীর দেহে দীর্ঘস্থায়ী কোভিডের উপসর্গ প্রকাশ পেতে পারে। যদিও এর মূল কারণ জানতে এখনও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনাভাইরাস সংক্রান্ত এই রোগলক্ষণ বোঝার জন্য নানা ধরনের তত্ত্বও রয়েছে। তা নিয়ে এখনও গবেষণা চালানো হচ্ছে।
