যখন দেশের প্রতি ষষ্ঠ ব্যক্তি করোনভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হয়েছিল, তখন কিছু ব্যক্তির মধ্যে কোনও উপসর্গ (Symtoms) দেখা যায়নি। তারা করোনাভাইরাসে (Coronavirus Infection) আক্রান্ত লোকদের কাছাকাছি থাকলেও সংক্রমণ থেকে বাঁচতে পেরেছিল। এই ব্যক্তিরা মারাত্মক ভাইরাসের বিরুদ্ধে অজেয় ছিল। তবে এর অর্থ এটা নয় যে তারা সংক্রমণকে হালকা ভাবে নেবে।
কোনও উপসর্গ নেই! এর মানে কী?
advertisement
কেউ সংক্রামক ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও উপসর্গবিহীন (Asymptomatic) হতে পারে। অনেক সময় উপসর্গ দেখা না গেলে সংক্রমণ সনাক্ত করা হয় না। আরেকটি কারণ কম ভাইরাল লোড (Viral Lode) হতে পারে। করোনাভাইরাসের উপসর্গ হালকা থেকে গুরুতর হতে পারে। এছাড়াও, এর বেশিরভাগ উপসর্গের সঙ্গে ঠান্ডা লাগা (Cold) এবং ফ্লুর (Flu) উপসর্গের মিল আছে। সুতরাং, ভাইরাল লোড কম হলে হালকা উপসর্গ দেখা যেতে পারে, তার কারণে করোনা সংক্রমণকে অন্য অসুস্থতা ভেবে ভুল হতে পারে। তাহলে এটা বোঝা গেল যে কিছু লোক ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারে, তবে হালকা বা কোনও উপসর্গ না থাকার কারণে রোগ নির্ণয় করা হয় না।
আরও পড়ুন : বয়স হার মানুক ত্বকের তারুণ্যে, শুধু মেনে চলতে হবে এই কয়েকটা নিয়ম!
জেনেটিক রেজিস্ট্যান্সও এর কারণ হতে পারে: কিছু লোক করোনাভাইরাস (Coronavirus Infection) দ্বারা প্রভাবিত না হওয়ার আরেকটি কারণ তাদের জিনগত গঠন। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে কিছু লোকের মধ্যে SARS-CoV-2-এর জিনগত প্রতিরোধ ক্ষমতা (Genetic Resistance) থাকা তাদের সংক্রমণ থেকে প্রতিরোধ করতে পারে। যদিও এটি বিরল ক্ষেত্রে ঘটে, তবে এটি সম্ভব। এটা বিশ্বাস করা হয় যে জিনগুলি ACE2 রিসেপ্টরের মধ্যে পার্থক্য রাখতে পারে যার উপর ভাইরাসটি মানুষের কোষে প্রবেশের জন্য আটকে থাকে। আরেকটি কারণ হতে পারে একটি শক্তিশালী ইমিউন রেসপন্স সিস্টেম (Immune Response System), যা ভাইরাসকে ফুসফুসে সংখ্যাবৃদ্ধি করতে বাধা দেয়। বিজ্ঞানীরা এখনও বিষয়টি সম্পর্কে আরও জানার চেষ্টা করছেন।
সংক্রমণকে কি হালকা ভাবে নেওয়া উচিত?
কেউ যদি কোনওভাবে ভাইরাস দ্বারা প্রভাবিত না হয়, তার মানে হয় তার মধ্যে কোনও উপসর্গ দেখা দেয়নি বা সে রোগ প্রতিরোধ করেছে। কিন্তু আসল কারণটা বোঝা জরুরি। সুতরাং, সংক্রামক ভাইরাসে আক্রান্ত হোক বা না হোক, নিজেকে কখনই অজেয় ভাবা যাবে না। করোনাভাইরাস পরিবর্তিত হচ্ছে এবং পরবর্তী মিউট্যান্ট ভাইরাস (Mutant Virus) আমাদের শরীরকে কীভাবে প্রভাবিত করবে তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। প্রত্যেককে অবশ্যই টিকা (Vaccine) নিতে হবে, মাস্ক (Mask) পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব (Social Distance) বজায় রাখতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আমরা সকলেই ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার জন্য সমান সংক্রমণ প্রবণ।
৩১ মার্চের পর ফের কী বদল আসবে জীবনে?
গত দু'বছর যাবত করোনা নিয়ে ত্রস্ত গোটা পৃথিবী। মহামারীতে সংক্রমণ রুখতে কেন্দ্র সরকারের পাশাপাশি দেশের প্রত্যেকটি রাজ্যের সরকারও আরোপ করেছে একাধিক বিধিনিষেধ। তবে অতি সম্প্রতি করোনা রোগে আক্রান্ত এবং নতুন করে সংক্রমণের (Coronavirus Infection) মাত্রা বেশ কম। গোটা দেশ জুড়ে সাম্প্রতিক রিপোর্টেই তার তথ্য মিলবে স্পষ্ট। এ বিষয়ে কেন্দ্র স্বাস্থ্য মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে গোটা দেশে করোনা সংক্রমণে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা মাত্র ২২ হাজার ৪২৭ জন। যা গোটা দেশের মোট জন সংখ্যার তুলনায় অতি নগণ্য। কেন্দ্র স্বাস্থ্য মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত গোটা দেশে প্রায় ১৮৩ কোটি ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এই অবস্থায় করোনা নিয়ে উদ্বেগের অবসান ঘটিয়ে কেন্দ্র সরকার ইতিমধ্যেই করোনা কালে চালু করা নিয়মবিধি (Covid Rules) তুলে নেওয়ার নির্দেশ পাঠিয়েছে দেশের রাজ্য সরকারগুলিকে। এই লক্ষ্যে চলতি মাসের ২৪ তারিখ কেন্দ্র সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফ থেকে রাজ্যগুলিকে একটি নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন : ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে কি শান্তিচুক্তি হবে? না কি যুদ্ধ চলতেই থাকবে?
এই নির্দেশটি সম্পূর্ণ রূপে কার্যকর হলে আগামী ১ এপ্রিল থেকে দেশের জনজীবন ফের স্বাভাবিক হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। নতুন এই নির্দেশিকার অর্থ হল যে কোনও শপিং কমপ্লেক্স এবং সিনেমা হলগুলিকে পূর্ণ ক্ষমতায় পরিচালনা করার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। রাজ্যগুলির তরফ থেকে সামাজিক জমায়েত এবং সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে অফলাইন ক্লাস পুনরায় চালুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মত, দেশের প্রত্যেকটি এলাকাকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা উচিত। পাশাপাশি গোটা দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবার বিষয়টিকে অতি গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত। সে লক্ষ্যে দেশের প্রত্যেকটি হাসপাতাল এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরি কাঠামোর ওপর অবশ্যই নজর দেওয়ার পাশাপাশি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ (ICU) চিকিৎসাব্যবস্থা চালু এবং হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত বেড সংখ্যা বৃদ্ধির কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।