নিষ্ক্রিয় যৌনজীবনকে কেন ভাইরাসের পরোক্ষ প্রভাব বলে দাগিয়ে দেওয়া হল?
কারণ, ভাইরাস যে শ্বাসযন্ত্রের উপরে প্রভাব বিস্তার করে, রোগীদের মধ্যে সেই ব্যাপারটাই চোখে পড়ছিল বেশি করে। ফলে, করোনার প্রত্যক্ষ উপসর্গের মধ্যে যৌনজীবনে ব্যাঘাত সে ভাবে নজর কাড়েনি। গুরুতর আক্রান্তের পক্ষে স্বাভাবিক যৌনজীবন বজায় রাখা সম্ভবও নয়, তবে কোভিডোত্তর কালে, লং কোভিড উপসর্গের মধ্যেও একে হালকা ভাবেই নেওয়া হয়েছিল। বলা হচ্ছিল, অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা, শারীরিক দুর্বলতা, করোনাকালের নানা সামাজিক বিষয়, যেমন বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রের সমস্যা এবং নিরাপত্তাহীনতা, মনেও প্রভাব ফেলছে, সেই জন্য আর যৌনতায় যথেষ্ট সক্রিয় থাকা যাচ্ছে না। সেই কারণেই ইচ্ছার অভাবে রমণকালে যৌনাঙ্গ শিথিল হয়ে পড়ছে, চেষ্টা করেও স্বতস্ফূর্ততা বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
advertisement
আরও পড়ুন-গায়ে হলুদ পর্ব শেষ, গলায় মালা, হলুদ পাঞ্জাবিতে নজর কাড়লেন ৬৬-র অরুণ লাল
লিঙ্গশৈথিল্য এবং যৌনজীবনে অনীহা কি তবে করোনাভাইরাসের প্রত্যক্ষ কারণ?
তা-ই তো দেখা যাচ্ছে! এই তথ্য দিয়ে বিশ্বকে সচেতন করতে চেয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ইমপোটেন্স রিসার্চের গবেষকরা। তাঁরা এই সূত্রে তুলে এনেছেন আমাদের শরীরের এন্ডোথেলিয়াল সেলের (Endothelial Cells) কথা। সহজ ভাবে বললে এই এন্ডোথেলিয়াল সেলকে একটি কোষের আস্তরণ বলা যায়, যা রক্তনালী এবং তার চারপাশের নানা কলাকোষকে টানটান করে রেখে শরীরের সর্বত্র রক্তসংবাহন এবং সঞ্চালনে সাহায্য করে। প্রাপ্তবয়স্করা জানেনই যে রমণকালে যৌনাঙ্গের সুদৃঢ়তা যথাযথ রক্তসংবাহনেরই ফল, ফলে এই বিষয়ে বিশদ ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজনটা অন্যত্র- এন্ডোথেলিয়াল সেল ভাইরাসের প্রভাবে কী ভাবে প্রভাবিত হচ্ছে যা আমাদের ঠেলে দিচ্ছে নিষ্ক্রিয় যৌনজীবনের দিকে?
আরও পড়ুন-আগামিকাল থেকে পুনরায় চালু হচ্ছে বাগডোগরা বিমানবন্দর, আকাশছোঁয়া ভাড়া বিমানের!
এন্ডোথেলিয়াল সেলে কী ভাবে প্রভাব বিস্তার করে করোনাভাইরাস?
এই জায়গায় এসে আমাদের আরেকটু বুঝতে হবে শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপের কথা। আমাদের শরীরে এক ধরনের এনজাইম থাকে, একে বলা হয় অ্যাঞ্জিওটেনসিন কনভারটিং এনজাইম ২ (Angiotensin-converting Enzyme 2) বা ACE2। এই ACE2 শরীরের নানা জায়গাতেই থাকে, তবে সব চেয়ে বেশি এর দেখা মেলে ফুসফুস, কিডনির মতো অঙ্গগুলোতে। করোনাভাইরাসের প্রভাবও সবচেয়ে বেশি পড়ে এই ACE2 রিসেপ্টরেই। সহজ ভাবে তাহলে বোঝা গেল কী ভাবে শ্বাসযন্ত্রে ভাইরাস প্রভাব ফেলে! কিন্তু গবেষণা বলছে, এই ACE2 রিসেপ্টর আমাদের টেস্টিকুলার সেলেও বিস্তর পরিমাণে থাকে, বরং ফুসফুসের থেকে এখানে এর উপস্থিতির পরিমাণ ঢের বেশি। ফলে, ভাইরাস একেও প্রভাবিত করছে, যৌনাঙ্গের কোষেও ছড়িয়ে পড়ছে বিকলতা, শেষ পর্যন্ত যা টেনে নিয়ে যাচ্ছে লিঙ্গশৈথিল্যের দিকে।
শারীরিক সুখের এই অভাব থেকেই দেখা দিতে পারে গভীর অসুখ?
যৌনতা নিয়ে আমরা সচরাচর কথা বলে থাকি না, বিশেষ করে যৌন সমস্যা নিয়ে তো কখনওই নয়, বিষয়টা যেন স্রেফ সুখ থেকে বঞ্চিত হওয়ার মধ্যেই আটকে রাখা হয়! কিন্তু আদতে তার প্রভাব খুব একটা সুখকর নয়। যৌনজীবনে অসহায়তার কারণে আত্মবিশ্বাসে প্রভাব পড়া, মানসিক সমস্যা, এমনকী বংশবৃদ্ধির বিষয়টাকেও একপাশে সরিয়ে রেখে বলা যায়, আমরা যতটা ভেবে উঠতে পারি, আদতে নেতিবাচক প্রভাব অনেক বেশি গভীর। সেই দিকটা এবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ইমপোটেন্স রিসার্চের গবেষকরা। তাঁরা বলছেন, লিঙ্গশৈথিল্যের সমস্যা থেকেই শরীরে দানা বাঁধতে পারে ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিজিজ, কিডনির নানা অসুখ, রিউম্যাটিক সমস্যা, সোরিয়াসিস, গাউটি আর্থ্রাইটিস, অ্যাঙ্কিলুজিং স্পন্ডিলাইটিসের মতো বেশ কিছু গুরুতর অসুখ। সমস্যা দেখা দিতে পারে বডি মাস ইনডেক্সের স্বাভাবিক পরিমাণ বজায় রাখা নিয়ে, দেখা দিতে পারে ওবেসিটি, কোমরের চারপাশে নানা অসুবিধা, হজমের সমস্যাও। তবে, লিঙ্গশৈথিল্যের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে আমাদের হৃদযন্ত্রে, যার থেকে নানা কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ দেখা দেওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।
প্রতিকারের উপায় তাহলে কী?
স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে কাম পৃথিবীকে সচল রাখে! এর নিষ্ক্রিয়তা সভ্যতায় জটিল সমস্যা ডেকে আনবে ঠিকই, কিন্তু তা কতটা তাড়াতাড়ি, বা আদৌ এই সমস্যার প্রতিকার করা যাবে কি না- সেই সব নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও ইঙ্গিত দেয়নি ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ইমপোটেন্স রিসার্চের সাম্প্রতিক গবেষণাপত্র। যৌনজীবনে অনীহার নেপথ্যে করোনাভাইরাসের প্রত্যক্ষ প্রভাব খুঁজে পাওয়া গিয়েছে, এবার তা নিয়ে চলছে বিস্তৃত গবেষণা, আশা করাই যায় এর প্রতিকার করতে চিকিৎসাবিজ্ঞান খুব একটা সময় নেবে না!