কোভিডের কারণে শিক্ষা ও অর্থনীতিতে প্রভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, "শিশুদের শিক্ষা, সুস্থতা এবং ভবিষ্যতের উৎপাদনশীলতার উপর কোভিড সঙ্কটের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব গভীর। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে প্রায় ২ বছর ধরে স্কুল বন্ধ ছিল। তাই দেশের সরকারগুলিকে ক্ষতি সীমিত করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। অনুমান করা হচ্ছে যে শিক্ষার অর্থনৈতিক ব্যয় ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে হবে, যদি না সংশোধনমূলক ব্যবস্থা জরুরিভাবে নেওয়া হয়।" তিনি আরও বলেন, "যদিও লকডাউন শিথিল হয়ে যাওয়াতে অন্যান্য অনেক সেক্টরে কাজ শুরু হয়েছে, শিক্ষার ক্ষতির ফলে কয়েক দশক ধরে শিশুদের সুস্থতা এবং উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা শিক্ষার ব্যাঘাত ঘটায় এবং স্কুল বন্ধের কারণে শেখার ক্ষতি মাঝারি এবং দীর্ঘমেয়াদী পুনরুদ্ধারের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকিগুলির মধ্যে একটি- যদি না সরকারগুলি দ্রুত পদক্ষেপ করে।"
advertisement
কেন স্কুল আবার খুলতে হবে?
উত্তরে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি-র (Massachusetts Institute of Technology) অধ্যাপক বলেন, “স্কুলগুলিকে পুনরায় খুলতে হবে এবং যতদূর সম্ভব খোলা রাখতেই হবে। তবে এটি যথেষ্ট হবে না। স্কুল ড্রপআউটের (School Dropout) সংখ্যা কমাতে নানা সমস্যা সমাধান করা এবং শিশুদের স্কুল ব্যবস্থায় পুনরায় ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার ক্ষতি পরিমাপ না করা এবং ফলাফল অনুযায়ী কাজ করা বিপর্যয়ের জন্য একটি দারুণ রেসিপি হবে। আমাদের স্বীকার করতে হবে যে শিশুরা অবশ্যই পিছিয়ে পড়বে। ব্যবধান কমাতে এবং ক্ষতি কমাতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।"
আরও পড়ুন: কবে থেকে খুলবে ছোটদের স্কুল? আশা জাগিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা বললেন...
স্কুলগুলির দ্বারা গৃহীত ব্যবস্থা:
এই বিষয়ে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "তৃতীয় ফ্যাক্টর, যা নিয়ে দেশগুলিকে জরুরিভাবে কাজ করতে হবে তা হল শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ (Teacher Training)৷ শিক্ষকদের ইতিমধ্যেই কঠিন কাজ করতে হয়েছে। শেখার ক্ষতির কারণে ইতিমধ্যেই পিছিয়ে পড়া বাচ্চাদের সাহায্য করা আরও কঠিন হয়ে গিয়েছে৷ শক্তিশালী মনিটরিং এবং ফিডব্যাক সিস্টেমের সঙ্গে শিক্ষকদের সহজ পড়ানোর বিষয়ে ট্রেনিং দিতে হবে। তাতে শিক্ষাগত পদ্ধতির গঠনে সহায়তা করতে পারে এবং শিশুরা যাতে কার্যকরভাবে শিখতে পারে তা নিশ্চিত হতে পারে। অতিরিক্ত কিছু বিষয়েও ট্রেনিং দেওয়া যেতে পারে।" তিনি আরও যোগ করেন, "অতিমারী শিক্ষার বিধান পুনর্বিবেচনা এবং পুনর্নির্ধারণের একটি বিরল সুযোগ দিয়েছে। যাতে সমস্ত পরিচয়, আর্থ-সামাজিক পটভূমি এবং পরিস্থিতিতে শিশুরা শিখতে এবং উন্নতি করতে পারে।"
আরও পড়ুন: ১ কোটি! রাজ্যের স্কুল পড়ুয়াদের জন্য বিরাট খবর, চলছে নাম নথিভূক্তিকরণ...
কোভিড সংক্রমণ মারাত্মক আকার না নিলে আবারও স্কুল বন্ধ করার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন অভিজিৎ। তিনি বলেন, "শিশুদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের ঝুঁকি তুলনামূলক ভাবে কম। তাই এমনকী নতুন প্রাদুর্ভাবের ক্ষেত্রেও স্কুল সবশেষে বন্ধ করা উচিত, আর খোলা উচিত সবার প্রথমে। যদি কোভিডের আক্রমণাত্মক রূপের কারণে শিশুরা ঝুঁকিতে থাকে, তবে অবশ্যই কেউ চাইবে না যে শিশুরা মারা যাক। তবে যদি পরিস্থিতি এমন না হয়, আমি বিশ্বাস করি স্কুল বন্ধ করা উচিত নয়।"
আরও পড়ুন: ১০-১৫ টাকায় ওটিপি বিক্রি! খুব সাবধান, কলকাতায় প্রতারণার নয়া জাল!
কোভিড অতিমারীতে শিক্ষার ক্ষতি: করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পরে ২০২০ সালে বিশ্বের সব জায়গাতেই স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং কোভিড পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে বিভিন্ন দেশে পুনরায় তা খোলা হয়েছে। ইউনেস্কো (UNESCO)-র তথ্যে দেখা গিয়েছে যে ১৯০টির বেশি দেশে ১.৬ বিলিয়ন শিক্ষার্থী স্কুলের বাইরে ছিল। ১০০ মিলিয়নেরও বেশি শিক্ষক এবং স্কুলের কর্মীরা হঠাৎ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে প্রভাবিত হয়েছিলেন।