তাঁর চোখের চাহনিতে কিছু না বলেও অনেক বলেও অনেক কিছু বলে দেয়। এই যেমন 'পিকু' ছবিতে দীপিকা ও ইরফান যখন কলকাতা দর্শনে গেলেন, প্রিন্সেপ ঘাটে দাঁড়িয়ে রোল খেতে খেতে দীপিকাকে মুখে বললেন ঠিকই, 'মাথা খারাপ নেহি হে মেরা', পিকুর ফাঁদে তিনি কিছুতেই পড়ছেন না। তবে তাঁর চোখ বলে গেল অন্য কথা। ঠোঁটের কোণে হাসিটা বুঝিয়ে দিল তাঁর সম্মতি।
advertisement
'পিকু' টিমের বাঙালি সদস্যের মনে রয়ে গিয়েছে ইরফানকে। সেই ইরফান যিনি রসিকতা করে পরিবেশটা হালকা করে দিতে পারেন। যিনি এত বড় অভিনেতা হয়েও কখনো স্টার হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেননি। সেই ইরফানকে মিস করছেন অনুপম রায়। নিউজ 18 বাংলায় স্মৃতিচারণা করেন তিনি।
প্রথমেই অনুপম জানালেন, ইরফানের অভিনয়ের খুব ভক্ত তিনি। অনুপম নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেন যে, সুজিত সরকার 'পিকু' ছবির সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, 'আমি অনেক কাজ করেছি, কিন্তু সত্যিই এটা আমার সৌভাগ্য, যে ছবিতে ইরফান আছেন, সেই ছবিতে আমি সঙ্গীত পরিচালনা করেছি। গানে সুর দিয়েছি। গান গেয়েছি। ইরফানের জন্য গান গেয়েছি। এটা আমার সারা জীবনের অ্যাচিভমেন্ট। ইরফান চলে যাওয়ার পর, চোখের সামনে বারবার ছবির দৃশ্যগুলো ভেসে উঠছে। আমি তো বারবার দৃশ্যগুলো দেখেছি, মিউজিক করার জন্য। বারবার ইরফানের অভিব্যক্তি। ওঁর অভিনয় দক্ষতা, মনে পড়ছে। সেই জলজ্যান্ত মানুষটা নেই এটা ভাবতে পারছি না।' অনুপমের গলায় স্পষ্ট মেলানকলি সুর।
তিনি আরও বললেন, 'চোখের সামনে ভেসে উঠছে, ওঁর দাঁড়িয়ে থাকা। ওঁর কথা বলা। ওঁর চেয়ে থাকা। সবকিছুর মধ্যে খুব প্রাণ ছিল। সে মানুষটা প্রাণহীন হয়ে গিয়েছে, এটা ভাবতেই অবাক লাগছে। বিশ্ব সিনেমার জন্য এটা খুব বড় ক্ষতি। '
অনুপমের মনে পড়ে যাচ্ছে, সেই দিনের কথা যেদিন প্রথম ইরফানের সঙ্গে দেখা হয়েছিল তাঁর। ইরফান ও অনুপমের দেখা হয়েছে মোট তিন বার। সুজিত সরকারের অফিসে ও বাড়িতে ছবি নিয়ে মিটিং করার সময় ইরফান এসেছেন। সেভাবেই তাঁদের আলাপ, বনধুত্ব।
অনুপম বললেন, 'আমার পরিষ্কার মনে আছে মুম্বইয়ে যেদিন 'পিকু'র স্ক্রিনিং হয়, পুরো কাস্টের সঙ্গে ইরফানও এসেছিলেন। ছবিটা শেষের পরে অনেকটা সময় একসঙ্গে কাটিয়েছিলাম। সেদিনের একটা খুব মজার ঘটনা ঘটেছিল। এখনও সেটা মনে পড়লে মৃদু লজ্জা পাই। স্ক্রিনিং-এর রাতে আমি ঘুরঘুর করছিলাম করছিলাম, দীপিকার সঙ্গে একটা ছবি তুলবো বলে। দীপিকাকে এত সামনে থেকে দেখে সামনে থেকে দেখে এই লোভ সকলেরই হওয়া স্বাভাবিক। আমারও হয়েছিল। অনেক কষ্টে দীপিকাকে একবার অনুরোধ করি , আমার সঙ্গে একটা সেলফি তোলার জন্য। ছবিটা তুলব, এমন সময় পিছন থেকে চলে আসেন ইরফান। রসিকতা করে বলেন, আমি তোমাদের বিরক্ত করছি না তো। এই ছবিটা আমার কাছে আছে। আমার আর দীপিকার মধ্যে ইরফান ঢুকে পড়েছিলেন বটে সেই দিন। কিন্তু আজ ছবিটা আমার কাছে সবচেয়ে বড় সম্পদ।'
ইরফানের সঙ্গে কখনও কথা বলতেই ইতস্তত বোধ করেননি অনুপম। কোনও স্টার সুলভ ব্যবহারে ছিল না ইরফানের, এমনটাই জানালেন অনুপম।
