TRENDING:

'হাওয়া'র হাওয়া শুধুই হুজুগ নয় তো? এর সঙ্গে বাংলা ছবির সুদিনের সম্পর্ক নেই, লিখলেন তথাগত

Last Updated:

'হাওয়া' দেখতে যাচ্ছি, 'হাওয়া'য় উড়ে গেলাম, 'হাওয়া'র লাইনে দাঁড়িয়ে, এই সমস্তটা আমার মনে হচ্ছে একটা স্টেটাস সিম্বল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঠিক যেমন কলকাতার এক পরিচালককে তাঁর সিনেমা নিয়ে গালমন্দ করাটা একটা স্টেটাস সিম্বল।

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
#কলকাতা: বাংলাদেশি ছবি 'হাওয়া' এবং চঞ্চল চৌধুরী নিয়ে উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়েছে কলকাতা শহরে। সেই প্রসঙ্গে নিউজ18 বাংলায় কলম ধরলেন পরিচালক-অভিনেতা তথাগত মুখোপাধ্যায়।
advertisement

'হাওয়া' নিয়ে যে হাওয়া বইছে, তা আসলে খুবই আনন্দের। কারণ বাংলা সিনেমা দেখার এই যে উৎসব, তা দেখা যায় না বহুদিন ধরেই। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, এর স্থায়িত্ব কতটুকু? এ কি সিনেমার প্রতি ভালাবাসার জন্যে নাকি নিছকই হুজুগ? হিমেশ রেশমিয়ার গানের মতোই উন্মাদনা নয় তো? ফেসবুকে বিভিন্ন মানুষের পোস্ট দেখে মনে হচ্ছে, 'হাওয়া' প্রথম কোনও ভাল বাংলা ছবি। তা তো নয়, এর আগেও তো ভাল বাংলা ছবি তৈরি হয়েছে। এই ছবিটি নিয়ে যেই উন্মাদনা দেখা যাচ্ছে, তার কারণ ব্যাখ্যা করলে, বাংলাদেশের ইতিমধ্যে 'হাওয়া' নিয়ে বেশ ভাল প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে, তার পর কলকাতায় আসার পর মানুষের মধ্যে আবেগ তৈরি হয়েছে, সেটা আরও পাঁচটা মানুষের মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছে। এর সঙ্গে 'হাওয়া'র মানের কোনও সম্পর্ক নেই। যদি ভাল বাংলা সিনেমামাত্রই লোকের ভিড় হত, তা হলে তো বৌদ্ধায়ন মুখোপাধ্যায়ের 'তিনকাহন', সৌকর্য্য ঘোষালের 'রেনবো জেলি', প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যের 'বাকিটা ব্যক্তিগত', আদিত্য বিক্রম সেনগুপ্তের 'আসা যাওয়ার মাঝে', ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরীর 'ফড়িং' ইত্যাদি আরও কয়েকটি ভাল সিনেমা বেশ কিছু দিন প্রেক্ষাগৃহে থাকত।

advertisement

'হাওয়া' নিশ্চয়ই খুবই ভাল ছবি। কিন্তু তার পাশাপাশি বিনামূল্যে সিনেমা দেখার সুযোগ, চঞ্চল চৌধুরীকে নিয়ে উন্মাদনা, ওপার বাংলার ছবি, ইত্যাদিও এই ভিড়ের নেপথ্য কারণ। আমার বক্তব্য কেবল এইটুকুই, চঞ্চল চৌধুরী নিঃসন্দেহে অসাধারণ অভিনেতা, কিন্তু তিনি একমাত্র ভাল অভিনেতা নন, তাঁর মতো দু্র্দান্ত অভিনেতা কলকাতাতেও আছেন, তাঁদের নিয়ে এই উন্মাদনা দেখা গেলে বুঝতে পারতাম, 'হাওয়া'র হাওয়া হুজুগ নয়। আর তাই এটা দেখে স্থায়িত্বের প্রশ্ন জাগছে মাথায়। চঞ্চল চৌধুরীর মতো এ রকম আরও এক-দু'জনকে নিয়ে এমনই ক্ষণিকের উন্মাদনা দেখা গিয়েছিল আগে। বলা হচ্ছিল, 'ভারতের শ্রেষ্ঠতম অভিনেতা'। কিন্তু বেশি দিন টেকেনি। বুদবুদের মতো উবে গিয়েছিল সেই উন্মাদনা। তাঁরা এখনও কাজ করছেন, কিন্তু তাঁদের সিনেমা নিয়ে আর উচ্ছ্বাস নেই।

advertisement

আরও পড়ুন: কলকাতায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবে আসছে ‘হাওয়া’, আসছেন চঞ্চল চৌধুরীও

চঞ্চল চৌধুরী চোখ দিয়ে অভিনয় করেন। এই বাক্যটি অনেকবার পড়লাম ফেসবুকে। তাঁর প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে বলছি, তিনি আজ থেকে ভাল অভিনয় করছেন না। সেই 'মনপুরা'র সময় থেকেই তাঁর শিল্প চোখ টেনেছে। কিন্তু নতুন এমন কী ঘটল এখন? এখন যে ছবিগুলো তৈরি হচ্ছে, তাতে ছবির অন্যান্য ক্রাফ্টে বদল এসেছে। উন্নতি হয়েছে। সব মিলিয়ে যাকে ইন্টারেস্টিং ফিল্মমেকিং বলব। তার মধ্যে যখন চঞ্চল চৌধুরীর অভিনয়টা পড়ছে, তা আরও প্রাণবন্ত, আরও দু্র্দান্ত দেখতে লাগছে। কলকাতাতেও তাঁর মতোই ভাল অভিনেতা রয়েছেন, কিন্তু তাঁর মতো নিপুণ পরিমণ্ডলে অভিনয় করার সুযোগ হয়তো তাঁরা পাচ্ছেন না। একজন ভাল অভিনেতার অভিনয় তখনই ধরা পড়ে, যখন ক্যামেরাটা ঠিকঠাক হয়, সামঞ্জস্য রেখে লাইট, এডিট, আবহ, সহ-অভিনেতার অভিনয়, সব নিখুঁত হয়। সিনেমা তো আসলে একটা মিলিত শিল্প। অভিনয় বাদ দিয়ে অন্যান্য দিক যদি খারাপ হয়, তবে ভাল অভিনয়টাও ধরা পড়বে না চোখে। পর্দায় যে অভিনয়টা আমরা দেখতে পাই, তার পিছনে কেবল অভিনেতার হাত নেই, আছে পরিচালকের, আছে এডিটরের, লাইটের, সাউন্ডের, আরও কত কী! সবার আগে প্রযোজকের। কারণ তিনিই প্রথম গল্পটি বেছেছেন। একটি খারাপ হলে বাকিটুকুও ধসে যায়। ভাল হলে আবার সকলের কৃতিত্ব। অনেক কিছুর পরে গিয়ে একজন অভিনেতার অভিনয় সার্থক।

advertisement

টলিউডের সমস্যা হল, প্রযোজকরা সিনেমার ক্রাফ্ট নিয়ে ভাবেন না, কী ভাবে বিক্রি করবেন, সেটাই মূল নজর পায়। ফলে অন্য রকম গল্প এখানে উৎসাহই পায় না। 'হাওয়া' বানানোর আগে যে পরিকল্পনা হয়েছে, সেটা আমাদের এখানে বাদ। ফলে পরিচালকরাও প্রযোজকের মন বুঝে গল্প নিয়ে যাচ্ছেন। আমি হলফ করে বলতে পারি, দক্ষিণী যেসব পরীক্ষামূলক ছবি হচ্ছে, সেই 'কানটারা', 'জল্লিকাট্টু', 'গ্রেট ইন্ডিয়ান কিচেন'-এর মতো গল্প যদি আগে বাংলায় বানানোর পরিকল্পনা হত, কোনও প্রযোজক তাতে হাত দিতে রাজি হতেন না।

advertisement

আরও পড়ুন: অসুস্থ অবস্থাতে অতিথিসেবা, প্রসেনজিতের বাড়িতে বাংলাদেশের চঞ্চল-শেহনাজদের নৈশভোজ

'হাওয়া' দেখতে যাচ্ছি, 'হাওয়া'য় উড়ে গেলাম, 'হাওয়া'র লাইনে দাঁড়িয়ে, এই সমস্তটা আমার মনে হচ্ছে একটা স্টেটাস সিম্বল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঠিক যেমন কলকাতার এক পরিচালককে তাঁর সিনেমা নিয়ে গালমন্দ করাটা একটা স্টেটাস সিম্বল। 'হাওয়া' দেখে ভাল লাগলে লোকে রিভিউ লিখছেন। ভাল না লাগলে তাঁরা পোস্ট করছেন না, ভাবছেন তাঁরা ব্রাত্য হয়ে যাবেন। আবার 'হাওয়া' দেখতে না গেলে সে কথা জানাতে লজ্জা পাচ্ছেন।

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
শীতের মরশুম এলেই গৃহবধূদের উপরি রোজগার! সংসার সামলে ছুটছেন মোয়ার দোকানে
আরও দেখুন

তাই আমি বলতে পারি না যে, বাংলা ছবির সুদিন ফিরে এল। বাংলার দর্শক সিনেমা সচেতন নয়। যত দিন না পর্যন্ত দর্শক সিনেমার জন্য সিনেমা দেখতে যাবেন, তত দিন এই দু্র্দিন চলতেই থাকবে। ওপার বাংলা এই মুহূর্তে ভাগ্যবান যে নানা ধরনের গল্পকে সিনেমা এবং ওয়েব সিরিজের জন্য উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।

Click here to add News18 as your preferred news source on Google.
বিনোদন জগতের লেটেস্ট সব খবর ( Entertainment News in Bengali ) পান নিউজ 18 বাংলায় ৷ বলিউড, টলিউড থেকে হলিউড সব খবরই পাবেন এখানে ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং টপ হেডলাইন ন নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস-এ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
বাংলা খবর/ খবর/বিনোদন/
'হাওয়া'র হাওয়া শুধুই হুজুগ নয় তো? এর সঙ্গে বাংলা ছবির সুদিনের সম্পর্ক নেই, লিখলেন তথাগত
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল