সতীর্থরা কেউ তাঁর কণ্ঠস্বরের কথা মনে করিয়েছেন, কেউ লিখেছেন তাঁর ব্যক্তিত্বের কথা। এক সোনালি মনের মানুষের কথা উঠে এসেছে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে। তাল কাটল কবি, তথা গীতিকার, পরিচালক শ্রীজাতর পোস্টে। লিখলেন, "KK-র গান আমার অসহ্য লাগে।" কেন লিখলেন এমন কথা? লম্বা পোস্টের লাইনে লাইনে ধরা পড়ল সেই ব্যাখ্যাও (Srijato Bandyopadhyay Singer KK)।
advertisement
আরও পড়ুন: লুট গ্যায়ে হাম তেরি মোহাব্বত মে, ভালোবাসাও পারলোনা ধরে রাখতে! KK প্রয়াত, শোকস্তব্ধ বলিউড
শ্রীজাত তাঁর পোস্টে লিখলেন, ‘KK-র গান আমার অসহ্য লাগে। গত ১৬ বছর ধরে অসহ্য লাগে। সেই ২০০৬-এর ডিসেম্বর থেকে আজ অবধি KK-র গান আমি সহ্য করতে পারি না। ক্যাব-এর রেডিও-তে হঠাৎ বেজে উঠলে চালককে তৎক্ষণাৎ বলি চ্যানেল সরিয়ে দিতে, কোনও জমায়েতে হুট করে বেজে উঠলে সন্তর্পণে উঠে বাইরে চলে যাই। এতটাই অসহনীয় আমার কাছে, KK-র গান, গত ১৬ বছর ধরে। টানা ১৬ বছর, আমি KK-র গান শুনিনি। সত্যি বলতে কী, পালিয়েছি তাঁর কাছ থেকে’।
আরও পড়ুন: প্রয়াত বিখ্যাত গায়ক কেকে, কলকাতার শোয়ের পরেই হঠাৎ মৃত্যু গায়কের
শ্রীজাত জানান, কেকে নয় তিনি আদতে পালিয়ে বেরিয়েছেন তাঁর অকালে চলে যাওয়া ভাইয়ের কাছ থেকে। জনসমক্ষে কোনওদিন নিজের সেই যন্ত্রণার কথা তুলে ধরেননি। তবে কেকে-র আকস্মিক মৃত্যু আজ তাঁকে বড্ড নাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি জানান, 'ব্যক্তিগত ক্ষয়ের কথা, আন্তরিক ক্ষরণের কথা সমক্ষে তুলে ধরিনি কখনওই, জীবনের প্রতি সংকোচ আর স্মৃতির প্রতি সম্ভ্রম থেকেই। কিন্তু কিছু আকস্মিকতায় সেসব বাঁধ, সেসব আড়ালও হয়তো টুটে যায় সাময়িক ভাবে। ছোট ভাই, যার আদরের নাম পুশকিন, তার প্রিয় গায়ক ছিলেন KK। আর তার হাত ধরে আমারও। গিটারে তার হাত চলাফেরা করত চমৎকার, আর সুরে গলাও খেলত দিব্যি। তার পড়াশোনা আর পরীক্ষার চাপের ফাঁকে ফাঁকে আমি তাকে জোর করে বসাতাম, ‘গান শোনা দেখি দু’খানা’। এমন বললে সে দু;খানা গানই গেয়ে উঠত কেবল। ‘ইয়ারোঁ, দোস্তি বড়ি হি হসীন হ্যায়’, আর ‘হম রহেঁ ইয়া না রহেঁ কল, কল ইয়াদ আয়েঙ্গে ইয়ে পল’।
কবি লেখেন ভয়াবহ বাইক দুর্ঘটনায় ভাইয়ের মৃত্যুর সঙ্গে কী ভাবে কেকে ‘শত্রু’ তাঁর ‘দু’চোখের বিষ' হয়ে উঠেছিল একদিন। তবে ভাই পুশকিনের মতোই আজ আকস্মিকভাবেই অকালে চলে গেলেন কেকে। সব অভিমান যেন ভেসে গেল, শ্রীজাত লেখেন- 'KK আসছেন শুনেই নজরুল মঞ্চের কাছাকাছি দিয়ে যাতায়াতের পথ বাছিনি আজ। কে বলতে পারে, যদি ‘ইয়ারোঁ, দোস্তি...’-র এক কলিও কানে ঢুকে আসে? পালিয়েছি আজও। কেবল বুঝিনি, তাঁরও পালানোর পরিকল্পনা আছে, পুশকিনের মতোই। রাগ ছিল লোকটার উপর খুব। কখনও দেখা হলে কেঁদেকেটে ঝগড়া করার ছিল অনেকখানি ইচ্ছেও। জড়িয়ে ধরবারও লোভ ছিল খুব, অভিমানে, অসহায়তায়। সেসব গানের সঙ্গে আজ যেন ভেসে গেল এক অদ্ভুত 'মেলানকলিক' সম্পর্ক যার কোনও নাম হয় না, যার কোনও নাম ছিল না কোনওদিন।