পরিবারে ছোট ছেলে রুকু তথা রক্তিমের বিয়ে নিয়ে তোড়জোড়। 'মেয়ে দেখা' পর্ব মোটামুটি সারা। রুকুর পছন্দ নন্দিনীকে। তবে সেখানে বাধ সেধেছে ঠিকুজি কুষ্টি। অতঃপর ছেলের মা হাজির আরও বেশ কয়েকটি অপশন নিয়ে, থুড়ি বিবাহযোগ্যা পাত্রী নিয়ে। মায়ের দাবি, সাজিয়ে রাখা ছবিগুলির মধ্যে থেকে পছন্দ মতো মেয়ে 'শর্টলিস্ট' করে নিক তার আদরের রুকু। যদিও রুকুর মনে ধরেছে নন্দিনীকে। তার নন্দিনীকেই চাই। মায়ের সঙ্গে তাই মন কষাকষি। এই সমস্যার সমাধান করতে হাজির বাড়ির বড় বউ সম্পূর্ণা। এক সময়ে সমাজকর্মী হিসেবে কাজ করলেও, এখন পরিবারকেই আঁকড়ে ধরে বাঁচা তার। তবে সম্পূর্ণা সেটা নিজের ইচ্ছেয় বেছে নিয়েছে। পরিবারের চাবি তার হাতেই। তাই দেওরের সঙ্গে নন্দিনীর বিয়ের দায়িত্ব নেয় সে।
advertisement
মোটা অঙ্কের বেতন পাওয়া রুকু, বাড়ির ছোট ছেলে, ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভাল। এমন ছেলের আবার মেয়ের অভাব হয় নাকি। এমন সুপাত্রর সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিতে পেরে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে পাত্রীর মা বাবাও। সেভাবে চেনা জানা না থাকলেও, ইচ্ছে অনিচ্ছের কথা না ভেবেই পাত্র পাত্রী পৌঁছে যায় ফুল শয্যার রাতে। এমনটাই হয়ে এসেছে। কারণ সমাজ বলে দিয়েছে, এমনই করতে হয়। সেই নিয়ম মেনেই, ফুলশয্যার বিছানায় অপেক্ষারত লাজুক নন্দিনীর কাছে পৌঁছয় রুকু। নন্দিনীর মালিকানা এবার তার। চোয়াল শক্ত হয় রুকুর। পৌরুষ প্রকাশ করার সময় তার। নন্দিনী কী চাইছে তা জানার প্রয়োজনই মনে করে না সে। প্রথম রাতেই ম্যারিটাল রেপ-এর শিকার নন্দিনী।
কর্পোরেট সংস্থায় কর্মরত ভদ্র নম্র রুকুর ভিতরের শয়তানকে দেখে ফেলে নন্দিনী। তারপর ক্রমশ এগোয় গল্প। ৬ এপিসোডের এই ওয়েব সিরিজে ঘটনার ঘনঘটা নেই। ক্লাইম্যাক্সের জন্য টানটান অপেক্ষা নেই। শেষটাও হয়তো সামান্য প্রেডিক্টেবল। কিন্তু তবুও এই ওয়েব সিরিজ শেষ পর্যন্ত দেখতে ইচ্ছে করবে। এমন সাহসী ও জরুরি বিষয় নিয়ে সিরিজ করার জন্য কুর্ণিশ জানাতে হয় পরিচালক সায়ন্তন ঘোষালকে।
আরও পড়ুন- বার বার খুনের হুমকি! আগ্নেয়াস্ত্র রাখার ছাড়পত্র পাওয়ার পরে আরও বড় নিরাপত্তা এবার সলমনের
সোশ্যাল মিডিয়ায় সুখী দম্পতির ছবি, রং আলোয় ভরা বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানের পিছনে যে আরও অনেক কিছু লুকিয়ে আছে তা রয়েছে এই সিরিজে। ডেস্টিটেশন ওয়ে়ডিং, প্রি ওয়েডিং, হানিমুন এসব চমকদার বিষয়ের আড়ালে যে দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে যাওয়ার মতো কিছু অন্ধকার দিকও থাকতে পারে, তাও ভাল ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক। সম্পূর্ণা চরিত্রটি যেন এমন দমবন্ধ করা গল্পে ভোরবেলার বাতাস। নিজের কেরিয়ার ছেড়ে সংসারে মন দিয়েছে। কিন্তু নিজের ইচ্ছেতেই। ভালবাসায় বাঁধতে জানে সম্পূর্ণা। কিন্তু ভুল দেখলে সেই ভালবাসার মানুষকে শাস্তি দিতেও তার হাত কাঁপে না।
অভিনয়ের কথা বলতে গেলে প্রথমেই সম্পূর্ণার চরিত্রে সোহিনী সরকারের কথা বলতে হয়। তিনি যে কতটা দক্ষ অভিনেত্রী, তা আরও একবার প্রমাণ করেছেন। নন্দিনীর চরিত্রে রাজনন্দিনী পালও যথাযথ। তাঁকে চরিত্রটি ভাল মানিয়ে গিয়েছে। রুকুর চরিত্রে অনুভব কাঞ্জিলাল অভিনয় দক্ষতায় প্রমাণ করেছেন। একই সঙ্গে ভাল মানুষ ও পাশবিক দিক দুটোই ফুটিয়ে তুলেছেন অনুভব। বাকি অভিনেতারাও নিজেদের চরিত্রে মানানসই। সিরিজের গানগুলিতে অমিত-ঈশানের সঙ্গীতায়োজনও যথাযথ।
আরও পড়ুন- 'সহবাসে' জুড়ে এই প্রজন্মের ওঠাপড়ার গল্প! কেমন হল ইশা-অনুভবের ছবি, রিভিউ রইল
এই সিরিজে খুব চমক খুঁজতে গেলে আপনি হতাশ হবেন। ট্যুইস্ট খুঁজেও লাভ নেই। কারণ রং চড়ানো গল্প নিয়ে এই সিরিজ নয়। খুব বড় বাস্তব নিয়ে কথা বলেছে 'সম্পূর্ণা', যা নিয়ে বরাবরই চুপ থাকতেই ভালবাসে সমাজ।
