সিরিজটির মূল উদ্দেশ্য শুধুই বিনোদন নয়; বরং দর্শককে এক অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করানো- মানুষের মনের আসল রূপ কতটা অজানা ! রোমাঞ্চ, সাসপেন্স এবং মানসিক দ্বন্দ্বের সূক্ষ্ম মিশ্রণে গড়ে ওঠা সাইকো দর্শকদের দেবে এক একেবারে নতুন অভিজ্ঞতা।
advertisement
এই ওয়েব সিরিজে থাকছে আধুনিক গল্প বলার ভঙ্গি, চমকপ্রদ ভিজ্যুয়াল টোন এবং তীব্র আবহ, যা দর্শককে স্ক্রিন থেকে চোখ সরাতে দেবে না। ইতিমধ্যেই দারশু (DARSHOO) ওটিটিতে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে সিরিজটি নিয়ে দর্শকমহলে তৈরি হয়েছে প্রবল কৌতূহল ও আলোচনার ঝড়।
ছবির গল্পে আমরা দেখব সমদর্শীকে। সমদর্শী বাইরে থেকে এক সাধারণ শান্ত মানুষ, ভাড়া বাড়িতে থাকে, প্রাইভেট অফিসে চাকরি করে। সে এক চিত্রশিল্পীও, কিন্তু তার অন্তরের ভেতর লুকিয়ে আছে এক ঝড়- এক ভয়ঙ্কর অতীতের। শৈশবের নির্মমতম ট্রমা তাঁকে আজও তাড়িয়ে বেড়ায়, নিজের চোখে সে বাবা সমরেশের হাতে মায়ের নৃশংস হত্যাকাণ্ড দেখেছে। সেই ভয়ঙ্কর রাতটাই হয়ে ওঠে তার জীবনের অবিচ্ছেদ্য ছায়া, যেখানে বাস্তব আর কল্পনার সীমারেখা মুছে যেতে থাকে।
কাহিনি এগোতে থাকলে সমদর্শীর চারপাশের পৃথিবী রূপ নেয় এক অদ্ভুত গোলকধাঁধায়, তা দুঃস্বপ্ন, ভ্রম, আর আতঙ্কজনক আবেশে ভরা। তার আঁকা প্রতিটি ক্যানভাস যেন নিছক শিল্প নয়, বরং এক নিঃশব্দ স্বীকারোক্তি। প্রতিটি মুখ, প্রতিটি প্রতিকৃতি যেন লুকিয়ে রেখেছে এক গভীর রহস্য। ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, সমদর্শীর অমরত্ব বন্দি করার শিল্পকলা আসলে জীবনের সমাপ্তি দিয়ে গড়ে ওঠে।
সাইকো কেবলমাত্র এক ঠান্ডা মাথার খুনির গল্প নয়, এটি এক ভগ্ন আত্মারও প্রতিচ্ছবি। এটি এমন এক মনস্তাত্ত্বিক থ্রিলার, যেখানে প্রতিটি মুহূর্ত ভরপুর সাসপেন্স, ভয় আর মানসিক আতঙ্কের শীতল স্পর্শে। অতীত আর বর্তমানের সংঘর্ষে সমদর্শীর তুলি ভিজে ওঠে শুধু রঙে নয়, রক্তেও। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়- সে কি বাবার তৈরি দানব থেকে পালাতে পারবে না কি সেই দানব হয়ে উঠেছে সে নিজেই?
প্রযোজক অঙ্কিত দাস ও সুরেশ তোলানির রূপ প্রোডাকশন অ্যান্ড এন্টারটেনমেন্টের এই ওয়েব সিরিজে অভিনয় করেছেন কিঞ্জল নন্দ, কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, বাসবদত্তা চট্টোপাধ্যায়, প্রদীপ ভট্টাচার্য, তপতী মুনসি প্রমুখ। কাহিনি, চিত্রনাট্য এবং পরিচালনা বাপ্পার! চিত্রগ্রহণের দায়িত্বে ছিলেন সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, ভিএফএক্স-এ অঙ্কুর চক্রবর্তী। ওয়েব সিরিজটির সঙ্গীত দিয়েছেন প্রিয়াঙ্ক ও শুভদীপ, গান গেয়েছেন শিলাজিৎ মজুমদার।
“বাপ্পা যখন প্রথম আমাকে চরিত্রটি সম্পর্কে জানালেন, তখনই আমার চরিত্র এবং গোটা গল্পটি ভীষণ আকর্ষণীয় মনে হয়েছিল। চরিত্রটির অনেক সূক্ষ্ম স্তর রয়েছে এবং সেটিকে আত্মস্থ করতে যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হয়েছে। আমি চিকিৎসক হলেও এই চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে আলাদা করে বিশেষ সুবিধা পাইনি, কারণ মনোবিজ্ঞানের অন্ধকার বিকৃত স্তরের বিষয়টি আগে গভীরভাবে অন্বেষণ করিনি। ছবির প্রবাহের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য আমি বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনা করি এবং মানব আচরণের নানা দিক নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করি। এতে মানসিক জগতের জটিলতা ধরতে অনেকটা সাহায্য পেয়েছি। আশা করি চরিত্রটিকে ন্যায্যভাবে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি”, বলছেন কিঞ্জল।
বাসবদত্তা তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেছেন সহঅভিনেতাদের কথা- ‘‘আগে কখনও কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় বা কিঞ্জল নন্দর সঙ্গে কাজ করিনি। তাঁরা দুজনেই অত্যন্ত প্রতিভাবান অভিনেতা। আমার বেশিরভাগ দৃশ্য কিঞ্জলের সঙ্গেই ছিল। ছবিতে কিঞ্জলের সঙ্গে আমার শেষ দৃশ্যটি আমার বিশেষ পছন্দের। কিঞ্জল সত্যিই অসাধারণ অভিনয় করেছে!’’
কনীনিকাও সবার প্রশংসায় একই ভাবে মুখর, তিনি বলছেন, ‘‘এই সিরিজটির শ্যুটিংয়ের সময় থেকেই আমার কাছে এর কনসেপ্টটি খুবই আকর্ষণীয় মনে হয়েছিল। আমাদের পরিচালক বাপ্পা অভিনয় শিল্পীদের কাছ থেকে তাঁর প্রত্যাশা নিয়ে ভীষণ পরিষ্কার ছিলেন, আর আমাদের সিনেমাটোগ্রাফারও দারুণভাবে পুরো আখ্যানটিকে ভিজ্যুয়াল করে একটা সুন্দর আকারে ফুটিয়ে তুলেছেন। আমার সহশিল্পীরা প্রত্যেকেই ছিলেন অসাধারণ প্রতিভাবান। তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে আমারও অনেক শেখার সুযোগ হয়েছে।’’
পরিচালক বাপ্পা এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন কেন এমন একটা বিষয় বেছে নিয়েছেন! ‘‘একজন স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে সাইকো পরিচালনা করা ছিল একইসঙ্গে রোমাঞ্চকর এবং চ্যালেঞ্জিং। একটি ডার্ক থ্রিলারকে জীবন্ত করে তুলতে হলে ক্যামেরা, আলো এবং শব্দের প্রতিটি উপাদানকে এমনভাবে সাজাতে হয় যাতে টানটান উত্তেজনা তৈরি হয়, অথচ বাস্তবতার অনুভূতি বজায় থাকে। এই বিষয়টি এসেছে মানুষের মন নিয়ে আমার দীর্ঘদিনের কৌতূহল থেকে- কীভাবে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ঘটনাও মনস্তত্ত্বের অদৃশ্য স্তরগুলো উন্মোচিত করতে পারে। যদিও এই আখ্যানটি কোনও একটি নির্দিষ্ট ঘটনার ওপর ভিত্তি করে নয়, বাস্তব জীবনের টুকরো অভিজ্ঞতাগুলো নিঃসন্দেহে এর কাঠামোকে প্রভাবিত করেছে।’’
‘‘সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল অভিনেতাদের এমন জটিল ও স্তরবিন্যস্ত চরিত্রগুলোকে সংযম ও সততার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করা। আমার কাছে সাইকো মানে হল মানুষের আচরণের ভঙ্গুর এবং অস্বস্তিকর দিকগুলোর অনুসন্ধান, যে দিকগুলো আমরা প্রায়ই চোখ এড়িয়ে যাই।’’
‘‘এটাই ছিল আমার দারশুর সঙ্গে প্রথম কাজ এবং অভিজ্ঞতাটি অত্যন্ত ইতিবাচক। টিম ছিল সহযোগিতাপূর্ণ ও সাহসী, পরীক্ষামূলক গল্প বলাকে সবসময়ই স্বাগত জানিয়েছে, যা খুব কমই দেখা যায়। একজন নির্মাতা হিসেবে আমি কৃতজ্ঞ রূপ প্রোডাকশনস ও আমাদের প্রযোজক অঙ্কিত দাস এবং সুরেশ তোলানির প্রতি, যাঁরা আমার ওপর যে ভরসা রেখেছেন তা ছিল অমূল্য। বিশেষ করে একটি ডার্ক থ্রিলারের মতো চ্যালেঞ্জিং ঘরানায় কাজ করার সময় তাঁদের সমর্থন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল। এমন প্রযোজক এবং দারশুর মতো প্ল্যাটফর্ম সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক, কারণ তারা স্বাধীন কণ্ঠস্বর ও অপ্রচলিত গল্প বলার জায়গা তৈরি করে, যা প্রচলিত মাধ্যমে প্রায়ই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়’’, বলেছেন পরিচালক।