১৯৩৮-এ জন্ম। এ দেশেই। দক্ষিণ ২৪ পরগণার মজিলপুরে। মোহিনীমোহন মিশ্র ও ভবানী দেবীর কোলে জন্ম নিল 'একটা ঝিনুক'। দক্ষিণ ২৪ পরগণা থেকে দক্ষিণ কলকাতার চেতলায় চলে আসেন তিনি ছোটবেলাতেই। সঙ্গীতচর্চা চলতে থাকে। কে জানত বাংলার শ্রোতাকে আধুনিক গানের সঙ্গে আত্মিক পরিচয় করাবেন এই নির্মলা, স্বর্ণযুগের অন্যতম জনপ্রিয় গায়িকার তকমা পাবেন তিনি। নির্মলার স্বামী প্রদীপ দাশগুপ্তও ছিলেন এক জন শিল্পী ও গীতিকার।
advertisement
আরও পড়ুন: নির্মলা মিশ্রের প্রয়াণে শোকবার্তা মুখ্যমন্ত্রীর, আজ কেওড়াতলায় শেষকৃত্য
১৯৬০ সালে সঙ্গীত পরিচালক বালকৃষ্ণ দাস তাঁকে ‘শ্রী লোকনাথ’ ছবির গানে কণ্ঠ দেওয়ার সুযোগ দেন। ওই শুরু। এর পরে বহু ছবির জন্য প্লেব্যাক করেছেন তিনি। কয়েকটি গান, 'তুমি আকাশ এখন যদি', 'আমি হারিয়ে ফেলেছি গানের সাথীরে', 'রিমিঝিমি রিমিঝিমি', 'আবিরে রাঙালো কে আমায়', 'চোখের মণি হারিয়ে খুঁজি'।
কিন্তু নির্মলার সঙ্গে দু'টি প্রজন্মের স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে পুজোর। দেবীর সঙ্গে আগমন হত গায়িকার। পুজোয় তাঁর নতুন অ্যালবাম বেরোত। পুজোর প্যান্ডেলে বাজত 'এমন একটি ঝিনুক খুঁজে পেলাম না'-র মতো জনপ্রিয় গান। যদিও ১৯৭৬ সালে উত্তরকুমারের সঙ্গে নব-রূপে তৈরি মহালয়ার প্রভাতী অনুষ্ঠানেও তিনি অংশ নিলেও তা মানুষের মনে জায়গা পায়নি। তাই পরের বার থেকে আবার পুরনো মহালয়াতেই ফিরে গিয়েছিলেন সকলে।
আরও পড়ুন: প্রয়াত নির্মলা মিশ্র, বাংলা সঙ্গীত জগতে ফের নক্ষত্র পতন
কিন্তু তাঁর গলার মিষ্টত্ব এবং আবেদন অন্য ভাবে শ্রোতাদের স্মৃতিতে রয়ে গিয়েছে। 'ও তোতা পাখি রে' গানটি যে কত মানুষের চোখে জল এনেছে! নিজের মায়ের মৃত্যুর পর তাঁকে নিয়ে লেখা বলেন অনেকে। 'আশিতে আসিও না' ছবির 'তুমি আকাশ এখন যদি হতে' গানে সংসার ধর্ম, ঘরকন্না, অভ্যাসের সঙ্গে নির্মলা প্রেমকে মিলিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর গলা দিয়ে। সঙ্গী মান্না দের কৃতিত্বও অনস্বীকার্য।
রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলসঙ্গীতও গেয়েছেন নির্মলার কিন্তু সেই প্রেম ও পুজোর সঙ্গে তাঁর নামের অন্তরঙ্গতা, তা বোধহয় কোনও গানের সঙ্গে ছিল না।
শনিবার রাত ১২.০৫ মিনিটে দক্ষিণ কলকাতার চেতলার বাড়িতে সেই গলা থেমে গেল চিরতরে। গত কয়েক মাসের অসুস্থতায় সব স্তব্ধ করে দিলেন নির্মলা।
আজ, রবিবার রবীন্দ্রসদনে তাঁর মরদেহ শায়িত থাকবে। বাঙালি তাঁদের প্রিয় গায়িকাকে শেষ বারের মতো দেখবে। আর খাঁচা খুলে ছেড়ে দেবে তাঁদের 'তোতা পাখি'টিকে।