সলিল চৌধুরীর সঙ্গে জ্যোতির আলাপ সোনারপুরে। সেখানেই ছিল জ্যোতির মাসির বাড়ি এবং সলিলের মামার বাড়ি। অসম থেকে আসা সলিল মামাবাড়িতে থেকে পড়াশোনা করছিলেন। জ্যোতির মাসতুতো দাদারা ছিলেন তাঁর বন্ধু। সেই সূত্রেই আলাপ, প্রেম এবং পরিণয়। দু’জনের একসঙ্গে চলার পথ মসৃণ ছিল না। সে সময় প্রায় শূন্য থেকে শুরু করা সলিলকে জামাই হিসেবে মেনে নিতে পারেনি জ্যোতির পরিবার। কিন্তু সে সবের তোয়াক্কা না করেই গত শতকের পাঁচের দশকের গোড়ায় জ্যোতি বিয়ে করেছিলেন সলিলকে, দু’জনে পাড়ি দিয়েছিলেন সেকালের বম্বে, আজকের মুম্বইয়ে।
advertisement
মুম্বইয়ে একটু একটু করে নিজের পায়ের নীচে জমি শক্ত করেছেন সুরকার সলিল। দাঁতে দাঁত চেপে সেই সংগ্রামে পাশে ছিলেন স্ত্রী জ্যোতি। ঘনিষ্ঠ বৃত্ত বলে, যুবক বয়সে সলিলের কাজের অনুপ্রেরণা ছিলেন জ্যোতিই। স্বামীর যখন উপার্জন বলিষ্ঠ নয়, তখন সংসারের হাল ধরেছিলেন অঙ্কনশিল্পী জ্যোতি। অংশ নিয়েছেন বহু প্রদর্শনীতে। ছোটবেলায় দাদুকে দেখে শুরু করা ছবি আঁকার ধারা বজায় রেখেছিলেন নবতিপর বয়সেও। শয্যাশায়ী হয়েও স্কেচ করতেন অবলীলায়। এক সময় তাঁর উপার্জনের অর্থেই কেনা হয়েছিল বাংলো। নাম রাখা হয়েছিল 'সুরছায়া'। সেখানেই ছিল স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে জ্যোতির সংসার।
আরও পড়ুন : দিল্লিতে হিট অ্যান্ড রান ঘটনায় নিহত অঞ্জলির পরিবারকে সাহায্য শাহরুখের সংস্থার
তবে সেই সংসার দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। পরবর্তীতে সবিতার সঙ্গে সলিলের সম্পর্কের কারণে সন্তানদের নিয়ে সরে আসেন জ্যোতি। বাংলো ছেড়ে বান্দ্রার ফ্ল্যাটে থাকতেন। এমনকী, সলিলের মা-ও এক সময় ছিলেন তাঁর কাছে। লব্ধপ্রতিষ্ঠ সলিলের সঙ্গে সংসারযাপন হয়নি জ্যোতির। কিন্তু এই নিয়ে কোনও তিক্ততাও প্রকাশ করেননি প্রকাশ্যে। মর্যাদা দিয়েছেন ব্যক্তিগত পরিসরকে।
আরও পড়ুন : ৯৮ বছর বয়সে জেল থেকে মুক্তি, ফেয়ারওয়েলের পর পৌঁছে দেওয়া হল বাড়িতে, রইল মর্মস্পর্শী ভিডিও
বান্দ্রায় নিজের বাড়িতেই থামল সংগ্রামী এই নারীর পথ চলা। রেখে গেলেন তিন মেয়ে অলকা, তুলিকা, লিপিকা এবং নাতিনাতনিদের। আর রইল তাঁর আঁকা ছবি। সলিল প্রয়াণের ২৭ বছর পর চলে গেলেন তাঁর প্রথম স্ত্রী।