কলকাতা: সে বহু বছর আগের কথা। তখন আমি ক্লাস নাইন বা টেন। নেহাতই কাঁচা বয়স। দোল আসার অনেক আগে থেকেই শুরু হয়ে যেত কাউন্টডাউন। হাতের মুঠোয় ফোন ছিল না তখন। ঘুরেফিরে বাড়ির দেওয়ালে ঝোলানো সাদামাঠা ক্যালেন্ডারটা দেখতাম। আর দিন গুনতাম।
দোল এলেই একছুট্টে দাদুর বাড়ি! পর্ণশ্রীতেই আমার সব বন্ধুরা থাকত। সে বারও সারা বছর তুলে রাখা পুরনো একটা জামা পরে রং খেলতে নেমেছিলাম। বেশ কয়েক বছর ধরে সেই জামাটাই ছিল আমার দোলের 'কস্টিউম'। প্রত্যেক বারই আরও একটু বেশি রঙিন হয়ে উঠত সেটা। এমনিও তখন আর সাদা জামা পরার জো কোথায়! বাড়িতে এ সব আকাশকুসুম আবদার করলে মিলত শুধু বকুনি!
advertisement
আরও পড়ুন: রিয়েল না, রিল লাইফেও জমে উঠেছে মজা, দোলে কোন মেগার কী চমক, দেখে নিন
আরও পড়ুন: রং বরসে...! হোলির দিনে প্লেলিস্টে থাকুক এই গানগুলি, দেখুন
সেই সময়ে দোল মানেই বাদুড় রং মেখে ঘুরে বেড়ানো। রং মেখে কে কত বেশি সং সাজতে পারে, অলিখিত সেই প্রতিযোগিতায় জিততে চাওয়া। কিন্তু সেই বছরে যেন সব হিসেব ওলটপালট হয়ে গিয়েছিল। রং খেলতে খেলতে বন্ধুদের ভিড়েই দেখেছিলাম এক অচেনা মুখ। দেখছিলাম মিষ্টি একটা মেয়ে সবার সঙ্গে মিশে গিয়ে দোল খেলছে। আমি থমকে দাঁড়িয়েছিলাম। ঠিক যেমন বলিউড ছবিতে হয়, খানিকটা সে রকম। খোঁজ নিয়ে জেনেছিলাম ও আমার বন্ধুর বন্ধু। নাম স্মৃতি। ভীষণ ইচ্ছে করছিল একটি বার ওর সঙ্গে কথা বলতে। তার পর আর কিছু ভাবতে পারিনি। এক মুঠো হলুদ আবীর নিয়ে চলে গিয়েছিল ওর সামনে। প্রশ্ন করেছিলাম, "একটু আবীর লাগাতে পারি?" ও কিন্তু সেই প্রশ্ন শুনে চমকে যায়নি। এক গাল হেসে বলেছিল, "হ্যাঁ নিশ্চয়ই"। এর পরেই একটু খানি আবীর ছুঁইয়েছিলাম ওর গালে।
সেই আমাদের প্রথম আর শেষ দেখা। তখন মোবাইলের রমরমা ছিল না। ওয়াটসঅ্য়াপ-ইনস্টাগ্রাম তো শুধুই কল্পনা! থাকলেই বা কী হত! এগিয়ে গিয়ে ওর সঙ্গে দ্বিতীয় বার কথা বলার সাহসই জুগিয়ে উঠতে পারতাম না। তাই আর কথা বলা হয়নি।
এর পরেও দোল খেলেছি বহু বার। কিন্তু সেই সব স্মৃতি আবছা। তবে জানি, সেই দিনটা মনে থাকবে। কারণ সেই দোলে শুধু রং ছিল না। 'স্মৃতি' ছিল।'