#কলকাতা: খুব ছোট থেকে পরমদাকে (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়) দেখছি। আমার তখন পাঁচ। পরমদাও যুবক। রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে মিউজিক ভিডিওতে অভিনয় করেছিলাম. সেই প্রথম পরিচালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার আলাপ। পর্দায় প্রথম বার ওরই হাত ধরে। আজ থেকে নয়, লোকটা আমাকে উদ্বুদ্ধ করে আসছে সেই থেকেই। 'আড্ডা টাইমস'-এ ফেলুদা-তোপসের চরিত্রে আমাদের অভিনয়। সেই জুটির রসায়ন বাস্তবেও আমাদের মধ্যে রয়েছে। 'সমান্তরাল'-এ অভিনয় একসঙ্গে। 'কহানি'-তে কাজ করেছি। এ ভাবে কত যে একসঙ্গে ঘুরে বেরিয়েছি, তার ইয়ত্তা নেই। মানুষের সঙ্গে ঘুরতে গেলে (হোক না কাজের সূত্রে) হয় ঘনিষ্ঠতা বাড়ে, নয়তো যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। আমার আর পরমদার ক্ষেত্রে প্রথমটাই হয়েছিল।
advertisement
সহ-অভিনেতার তকমা থেকে বেরিয়ে গিয়েছি এখন আমরা। পরমদা আমার দাদা। সমস্ত ক্ষেত্রে সেই ভূমিকা পালন করে চলেছে সে। রোজ। প্রতি নিয়ত। কত কত দিন সূর্য ওঠা দেখেছি গান গাইতে গাইতে, জ্যাম করতে করতে। রাজনীতির ক্ষেত্রেও আমাদের ভাবনাচিন্তা মেলে। 'নিজেদের মতে নিজেদের গান' যখন বানিয়েছিলাম, সেই পরমদা-ই কিন্তু আমাকে আর ঋতব্রতকে (ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়) সাহস জুগিয়েছিল পরিচালনা করতে। নয়তো কোনও দিন আমরা দু'জন অত বড় প্রোজেক্ট পরিচালনা করতে পারতাম না। আমরা তো পরমদাকেই পরিচালক হওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু উল্টে আমাদের হাত ধরে বলে, ''তোরাই পারবি।'' সত্যিই তো পারলাম। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে 'সিটিজেন্স রেসপন্স'-এর সময়েও দেখেছিলাম, পরমদা কী ভাবে পাটুলির ওই সেফ হোমে থেকে নিজে হাতে সব কাজ সামলেছে। কোথায় কোথায় অক্সিজেন যাবে, কখন অ্যাম্বুল্যান্সের প্রয়োজন পড়বে, কী ওষুধ লাগবে, এই সমস্ত কাজ কিন্তু নিজে হাতেকলমে কাজ করেছে। কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মীদের নির্দেশ দিয়ে নিজে বসে থাকেনি।
আরও পড়ুন: ২৫ বছরে দুই বাচ্চার মা হতে রাজি, রুক্মিণীর মতো নায়িকা বাংলায় কম: জন্মদিনে বন্ধু রাহুল
আমি আজ যখন পা বাড়িয়েছি নতুন দিকে, পরমদা-ই তার চালিকা শক্তি। ওকে দেখেই নতুন পরিচয়ের সন্ধানে আমি। আমার অভিনেতা থেকে পরিচালক হওয়ার স্বপ্নতে শান দিয়েছে যে। বহু বার সেটে পরমদাকে নির্দেশনা দিতে দেখে দেখে সেই ইচ্ছাশক্তি চাগাড় দিয়ে বসেছে আমার মধ্যে।
এগুলো তো গেল একসঙ্গে কাজ করার কথা। আমার প্রেমের ক্ষেত্রেও কিন্তু পরমদা দাদার ভূমিকা পালন করেছে। ওর জন্মদিনে আজ একটা মজার জিনিস মনে পড়ল। আমার আর সুরঙ্গনার (সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায়) তখন প্রায় ৫-৬ বছরের সম্পর্ক। কিন্তু প্রথম বার একসঙ্গে লন্ডন যাওয়া। তাই প্রবল উত্তেজনা ছিল আমাদের মধ্যে। 'শরতে আজ' ওয়েবসিরিজের শ্যুটিং চলছিল সেখানে। পরমদাও ছিল। আমরা হোটেলে গিয়ে দেখলাম, আমাকে আর সুরঙ্গনাকে আলাদা দু'টি ঘরে থাকতে দেওয়া হয়েছে। আমি আর ও মনে মনে ভাবছিলাম ২৫ দিন এখানে থাকব, কিন্তু আলাদা ঘরে? প্রথম বার একসঙ্গে লন্ডন বলে কথা! কিচ্ছু বলতে হল না। হঠাৎ দেখলাম, পরমদা মেসেজ করল, ''লজ্জা পাস না। তোদের দু'জনকে একটাই ঘরে বন্দোবস্ত করে দেব।'' এ রকমই পরমদা।
আরও পড়ুন: ছবির পর্দায় উঠে আসবে নাটকের মঞ্চ! নাট্যশিল্পীদের অবসাদ-লড়াইয়ের গল্প 'হেমন্তের অপরাহ্ন'-তে
অনেকেই নাকি পরমদার সঙ্গে কৃষ্ণের অনুসঙ্গ টানে। তাতে ভুল দেখি না। আমি এক জন পুরুষ, যে কিনা নারীদের প্রতি আকৃষ্ট, সে-ই যদি পরমদার 'চার্ম'-এ মুগ্ধ হই, পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট মহিলারা তো পরমদার প্রতি মুগ্ধ হবেই। খুব স্বাভাবিক। লোকটা বড়ই 'চার্মিং'। আর বিয়ে? কত সংসারেই তো দুটি মানুষ সুখী নয়। যদি বিয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতি অনুগত না হয়ে নিজের মতো জীবন কাটানো যায়, তাতে ক্ষতি কী? ভাল থাকার জন্য, প্রেমে পড়ার জন্য পরমদার বিয়ের প্রয়োজন নেই। এই ভাল আছে।