প্রায় অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে আসা এই মেলা ও ফুটবল টুর্নামেন্ট আজ আর শুধুমাত্র একটি খেলা বা বার্ষিক অনুষ্ঠান নয়। ধীরে ধীরে তা হয়ে উঠেছে এলাকার মানুষের আবেগ, সংস্কৃতি ও সামাজিক মিলনের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। আশপাশের বহু গ্রামের মানুষ সারা বছর ধরেই এই ক’টি দিনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন। মেলার উদ্যোক্তা আব্দুল লালন বলেন, “জঙ্গলমহলের মানুষের কথা ভেবে তাঁদের বিনা পয়সায় আনন্দ দেওয়ার জন্য এই উদ্যোগ। আগামী দিনেও আরও জাঁকজমক ভাবে মেলা করার চেষ্টা করব।”
advertisement
রবিবার ছিল এই ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানের শেষ দিন। আর শেষ দিনেই যেন মানুষের আনন্দ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিলেন অভিনেতা দেব। এর আগে সিনেমার শ্যুটিংয়ের সূত্রে আউশগ্রামে দেবকে দেখা গেলেও, এদিন ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন অভিজ্ঞতা। মঞ্চে সরাসরি প্রিয় অভিনেতার নাচ ও গান উপভোগ করার সুযোগ পেলেন হাজার হাজার মানুষ।জঙ্গলমহল নামে পরিচিত এই আউশগ্রাম এলাকায় বহু মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র পরিবার বসবাস করেন। অনেকের পক্ষেই বড় শহরের অনুষ্ঠান বা দামি টিকিট কেটে নামী অভিনেতাদের সামনে থেকে দেখা সম্ভব হয় না। সেই সমস্ত মানুষের কথা মাথায় রেখেই উদ্যোক্তাদের এই বিশেষ উদ্যোগ, বিনা মূল্যে জনপ্রিয় অভিনেতাকে সামনে থেকে দেখার সুযোগ করে দেওয়া।
মেলার অন্যতম আয়োজক আফজল রহমান বলেন, “আউশগ্রামের মানুষের স্বার্থে আগামী দিনেও এই ধারা বজায় রাখতে চায়। এখানকার মানুষের কাছে এই মেলা এখন আবেগ।”রবিবার রাত প্রায় ১১টা নাগাদ মেলার মূল মঞ্চে উপস্থিত হন অভিনেতা দেব। মঞ্চে উঠে নিজের একাধিক জনপ্রিয় সিনেমার গানে তিনি নাচ করেন এবং কয়েকটি গান নিজ কণ্ঠেও পরিবেশন করেন। প্রিয় অভিনেতাকে এত কাছে পেয়ে মানুষের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। চারদিকে ভিড় ছিল উপচে পড়া। তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে আগে থেকেই নেওয়া হয়েছিল কড়া পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকদের তৎপরতায় পুরো অনুষ্ঠানই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই রাত প্রায় দেড়টা নাগাদ সফলভাবে শেষ হয় দাতা লালন মিলন মেলা ও ফুটবল টুর্নামেন্টের শেষ দিনের অনুষ্ঠান। সব মিলিয়ে রবিবারের রাত আউশগ্রামের মানুষের কাছে হয়ে রইল স্মরণীয়। প্রিয় অভিনেতাকে সামনে থেকে দেখার আনন্দ, ঐতিহ্যবাহী মেলার আবহ এবং মানুষের মিলন, সবকিছু মিলিয়ে এই অনুষ্ঠান জঙ্গলমহলের মানুষের মনে দীর্ঘদিনের জন্য ছাপ রেখে গেল।





