তাঁর কথায়, ‘‘গোয়েন্দা গল্প তো আসলে অ্যাডাল্ট ব্যাপার। খুন, মারামারি, সম্পর্ক, যৌনতা, নোংরামি, দুর্নীতি, এই সব নিয়েই তো গোয়েন্দা সাহিত্য। কিন্তু সেটা ধীরে ধীরে দেখা গিয়েছে, ছোটদের সাহিত্য হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গিয়েছে। সমরেশ বসু, সমরেশ মজুমদার, নিহাররঞ্জন গুপ্ত, প্রেমেন্দ্র মিত্র, এঁদের গোয়েন্দারা প্রাপ্ত বয়স্ক নয়। সেখানে একমাত্র শরদিন্দু বাবুর গোয়েন্দাকেই আমার অন্যরকম মনে হয়েছে। সেই কারণেই ব্যোমকেশের কিছু স্বত্ব নিয়ে ছবি করতে এসেছিলাম।’’
advertisement
আরও পড়ুন: 'বাংলা বলে নয়, যে-ছবি ইচ্ছে দেখুন', পাঠান ও বাংলা ছবি বিতর্কে চিন্তিত নন অঞ্জন
কিন্তু তার পর দেখা গেল, বাংলা ছবি ছেয়ে গেল ব্যোমকেশ বক্সীর গল্পে। তাই অঞ্জনের কথায়, ‘‘যখন দেখলাম যে সবাই মিলে ব্যোমকেশ করছে। আমার ব্যোমকেশই চলে গেল সেখানে করতে। তখনই ঠিক করলাম আর করব না। ওই ধারাবাহিক ছবিগুলো যেন আমার আর নিজস্ব রইল না।’’ আর তাই নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজ তৈরির সিদ্ধান্ত অঞ্জনের। সিনেমা বানিয়ে নয়। গল্প লিখে তিনি সেই সবের উত্তর দেবেন। যে প্রশ্নগুলো তাঁর নিজের কাছে ছিল। ঠিক যেরকম গোয়েন্দা তিনি চেয়েছিলেন, সেই গোয়েন্দাকে তিনি তৈরি করবেন।
আরও পড়ুন: বাংলা ছবি কবে পাবে পাঠানের মতো সাফল্য, ‘নেটওয়ার্ক’ সমস্যার কথা তুললেন অঞ্জন
তৈরি হল নতুন গোয়েন্দা চরিত্র সুব্রত শর্মা। তিনটি গল্প প্রকাশিত হল দে’জ প্রকাশনা থেকে। এবার প্রকাশিত হচ্ছে বাকি তিনটি। অঞ্জনের প্রথম নির্দেশনা দুরদর্শনের জন্য। সেই গল্পও ছিল এক প্রাইভেট ডিটেকটিভের গল্প নিয়েই। ডিটেকটিভ এজেন্সির নেপথ্য কাহিনি তাঁর জানা। এজেন্সিতে চাকরি করা ডিটেকটিভের গল্প শুনেছেন তাঁদেরই কাছ থেকে। আর সেই সব অভিজ্ঞতাই নিজের গল্পে রেখেছেন অঞ্জন।
লেখক-পরিচালকের গোয়েন্দা অতি মানব নয়, রক্ত মাংসের মানুষ। সুপার হিউম্যান গোয়েন্দা তিনি চাক্ষুষ করেননি কোনও দিনও বাস্তবে। আর তাকে সাহিত্যে নিয়ে আসতেও আপত্তি অঞ্জনের। সত্যজিৎ রায়ের প্রদোষ মিত্রের মতো গোয়েন্দা কোথায় রয়েছে বাস্তব জীবনে? এই প্রশ্নের উত্তর তাঁর কাছে নেই। অঞ্জনের প্রশ্ন, ‘‘গোয়েন্দারা কেন বেশি বুদ্ধিমান হবেন? পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা তো অনেকেরই বেশি। শুধু গোয়েন্দাদের কেন? সাহিত্যে সে সব পড়তে মজার লাগলে ঠিকই, কিন্তু আমার একটু বালখিল্য মনে হয়।’’
যদিও কোনও গোয়েন্দাকেই তিনি মিথ্যে বলতে রাজি নন। কেউ শার্লক হোমস হবে, কেউ জেমস বন্ড। কেউ আবার অঞ্জনের নিজস্ব, রক্ত মাংসের সাধারণ মানুষের মতো গোয়েন্দা। বাঙালি গোয়েন্দা, ফুটবল-ক্রিকেট প্রেমী, অলস এই সুব্রত শর্মা।