গত ১০ অগাস্ট, এমনই এক বুধবার, দিল্লির এক জিমে ট্রেডমিলে হাঁটতে হাঁটতে হার্ট অ্যাটাক হয়। তড়িঘড়ি তাঁকে দিল্লির এইমস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেই থেকে সকলে মিলে প্রার্থনা করছিলেন, রাজু যেন চোখ খোলেন, উঠে বসেন, নিজের কথায় হাসিয়ে তোলেন। কিন্তু না, হার্ট অ্যাটাকের পর ব্রেন ড্যামেজ, বিভিন্ন ভাবে শরীরের এক একটি অঙ্গ বিকল হতে হতে আজ, বুধবার চলে গেলেন রাজু।
advertisement
কত স্বপ্ন ছিল চোখে। যে চোখ আজ নিথর। ১৯৮০-র দশকে উত্তরপ্রদেশের কানপুর থেকে তরুণ রাজু বাণিজ্যনগরীতে পা রাখেন। অভিনেতা হবেন, সেই আশা বুকভরা। কিন্তু হাতে বড় কোনও কাজ নেই।
এদিকে বাড়ি থেকে আনা টাকাকড়িও শেষের পথে। দু'বেলা পেটে দানাপানি দেওয়ার জন্য, মাথার উপরে ছাপোষা ছাদের জন্য ট্যাক্সি চালাতে শুরু করেন রাজু।
আরও পড়ুন: হাসপাতালে ভর্তি প্রখ্যাত কমেডিয়ান রাজু শ্রীবাস্তব, জিম করতে গিয়ে হার্ট অ্যাটাক
পাশাপাশি বড় বড় ছবিতে ছোট ছোট বচরিত্রে কাজ করতে থাকেন। ১৯৮৮-এর 'তেজাব', ১৯৮৯-এর 'ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া', ১৯৯৩-এর 'বাজিগার'-এ কয়েক মুহূর্তের জন্য দেখা গিয়েছিল রাজুকে।
প্রথম বড় কাজ পান ১৯৯৪ সালে। 'টি টাইম মনোরঞ্জন' নামক একটি অনুষ্ঠান শুরু হয় দূরদর্শন চ্যানেলে। কমেডি শো-তে কাজ করা শুরু সেই থেকে। রাজু ছাড়াও এই একটি শো অনেক উঠতি শিল্পী, স্ট্রাগলিং শিল্পী কাজ পান। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, অধুনা তারকা স্মৃতি ইরানি, ব্রজেশ হিরজি।
এর পরে জনপ্রিয় শো 'শক্তিমান'-এ ধুরন্ধর সিং হিসেবে দেখা যায় রাজুকে। '৯০ দশকের কচিকাঁচাদের জন্য যেই শো-টি ছিল মুক্ত বাতাসের মতো।
আরও পড়ুন: হার্ট অ্যাটাকের পর ব্রেন ড্যামেজ রাজু শ্রীবাস্তবের, এখনও ভেন্টিলেশনে কমেডিয়ান
যদিও 'দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান লাফটার চ্যালেঞ্জ' থেকেই তাঁর জীবন সব থেকে বড় এবং সফল মোড় নেয়। ২০০৫ সালে সেই শো-এর প্রথম সিজনে প্রতিযোগী হিসেবে দেখা যায় তাঁকে। সেই শো-তেই সুনীল পাল জয়ী হন। তৃতীয় স্থানে ছিলেন রাজু। কিন্তু বিজয়ীর থেকে অনেক বেশি জনপ্রিয় হন রাজু। তাঁর বিভিন্ন ক্লিপ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন কত গৃহস্থ বাড়ির আদরের ছেলে, গজোধর ভাইয়া।
এর পর তিনি স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। ফিরে তাকাতে হয়নি আর রাজুকে।
২০০৯ সালে 'বিগ বস ৩'-এ পা রাখেন প্রতিযোগী হিসেবে। তার পর 'নাচ বালিয়ে'তে তারকা প্রতিযোগী হিসেব্র অংশগ্রহণ করেন স্ত্রী শিখা শ্রীবাস্তবের সঙ্গে। ২০০৭ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত একাধিক বার 'কমেডি সার্কাস'-এ পারফর্ম করেছেন রাজু। তখন তিনি সাফল্যের শিখরেই বসে।
আরও হয়তো 'গজোধর ভাইয়া'র সৃষ্টি করার ছিল তাঁর। আরও কত মানুষকে হাসানো বাকি ছিল। কিন্তু কত কত কাজ বাকি রেখে মানুষকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন রাজু। বিদায় শ্রীবাস্তব।