প্রশ্ন: ক্লান্ত লাগে না?
শাশ্বত: এক একটা শ্যুটিং মানে ভ্রমণের সুযোগ। বাড়িতে বসে গেলে মন খারাপ হবে। রাতে ৪-৫ ঘণ্টার বেশি ঘুমও হয় না আমার। আর যদি ক্লান্ত হয়ে যাই, তা হলে শরীরই বলে দেবে, এ বার একটু বিশ্রাম নাও। এখনও বলেনি, তাই ঘুরছি। ওই যে বলে না, 'শরীরের নাম মহাশয়, যাহা সওয়াবে, তাহাই সয়।'
advertisement
প্রশ্ন: সময় দিতে না পারার জন্য পরিবারের তরফে আপত্তি আসছে না?
শাশ্বত: বিয়ের আগে থেকেই মহুয়া জানে যে, এই পেশার লোক জন এমনই। আপত্তি জানিয়ে লাভ হবে না সেটা জানে। মাঝে মাঝে বাইরে খেতে যাই, পুজোর সময়ে বেড়াতে যাই। আমি বোধ হয় একমাত্র পুরুষ, যে স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে পটায়া ঘুরতে গিয়েছে (হেসে)।
প্রশ্ন: 'মহাভারত মার্ডার্স'-এ কাজ করে কেমন লাগল? অ্যাডাপটেশন নিয়ে তো খুব সমালোচনা হয়, সেই ভয়টা ছিল?
শাশ্বত: চিত্রনাট্য অপূর্ব। পুরোটা গবেষণা করে গল্প ফাঁদা হয়েছে। আজকের দিনে কলকাতায় কিছু খুন হচ্ছে। যেখানে যেখানে খুন হচ্ছে, সেখানে আমার চরিত্রের (মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনের প্রার্থী) প্রচারমূলক পোস্টার পড়ছে। তার সঙ্গে মহাভারতের একটি করে ছবি মিলছে। সেখান থেকেই সূত্র খোঁজা। তাই বলব, এটা ঠিক মহাকাব্যের অ্যাডাপটেশন নয়। তাই সেই বিষয়ে সমালোচনার কোনও জায়গাই নেই। এখানে আমার সঙ্গে কাজ করেছে অর্জুন (চক্রবর্তী)। ওকে আমি কোলে পিঠে নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছি। আমাকে 'অপু কাকু' বলে ডাকে। সে আমার পাশে দাঁড়িয়ে টক্কর দিয়ে অভিনয় করছে। ভীষণ গর্ব হয়েছে আমার।
প্রশ্ন: 'ধাকড়'-এই অবস্থা হল কেন?
শাশ্বত: আমিও বুঝতে পারছি না! প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখার আগেই ছবিটা উঠে গেল। আমি তো বলব, ছবিটা খুব ভাল হয়েছে। যা যা উপাদান আছে, তা একেবারে নতুন। কঙ্গনা রানাউত, অর্জুন রামপাল, দিব্যা দত্ত যে কী ভাল অভিনয় করেছেন, ভাবা যায় না। তার পরেও লোকে দেখল না। এটা আমার কাছেও রহস্য।
আরও পড়ুন: ইলিশ পাতুরি, চিংড়ির মালাইকারি, রাবড়ি, কী কী রয়েছে রাহুল-রুকমার বিয়ের মেনুতে?
প্রশ্ন: কঙ্গনাকে নিয়ে খুব সমালোচনা হয়, কাজ করতে গিয়ে আপনার কেমন অভিজ্ঞতা?
শাশ্বত: এক বারের জন্যেও নেতিবাচক কিছু লক্ষ করিনি। পেশাগত দিক থেকেই ওঁকে চিনেছি। একেবারে সহজ মানুষ। নিজের কাজ নিয়ে খুব সিরিয়াস। সকলকে সম্মান দিয়ে চলেন। খুবই মিশুকে। যে কোনও দৃশ্যের আগে পরিচালকের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করে নেন। আরও একটা চিত্রনাট্য নিয়ে কাজ করছেন কঙ্গনা। আমাকে পাঠাবেন বলেছেন। দেখা যাক।
প্রশ্ন: সবথেকে ভাল লেগেছে কার সঙ্গে কাজ করে? বলি তারকাদের মধ্যে?
শাশ্বত: রণবীর (কপূর) মিষ্টি, চাপা স্বভাবের ছেলে। ক্যাটরিনাও (কইফ) ভীষণ মিষ্টি। পোশাক নিয়ে খুব খুঁতখুঁতে। পোশাক পছন্দ না হলে পরিচালকের পায়ে পড়ে যাবে কাঁদতে কাঁদতে। তবে আমি দু'জনের মানুষের এনার্জির কথা বলব, যাঁদের সঙ্গে টক্কর দিতে গিয়ে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। অনিল কপূর ও জনি লিভার। অনিল স্যার তিন-চারটে টেক দিয়ে সন্তুষ্ট হন না। আমি এ দিকে হাঁপিয়ে যাচ্ছি। আমি এক দিন সকালে চা নিয়ে ঘর থেকে বেরোচ্ছি, দেখি উনি জিম সেরে বেরোচ্ছেন। দেখেই বললেন, ''সুভা চায়ে পি রহা হ্যায়, শাম কো জ্যুস। কভি তো জিম মে আয়া কর! শাহরুখ-সলমন কো দেখ, তুঝসে বড়া হ্যায়, সিক্স প্যাক বনা রহা হ্যায়, তু ফ্যামিলি প্যাক লেকে ঘুম রহা হ্যায়?'' (হেসে) অন্য দিকে জনির সঙ্গে রাজকুমার সন্তোষীর 'ব্যাড বয়'তে কাজ করলাম। আড্ডার সময়ে মাটির মানুষ তিনি। যেই ক্যামেরা অন হচ্ছে, একেবারে জোয়ান বয়সের জনি লিভারকে মনে পড়ে যাচ্ছে।
প্রশ্ন: আঞ্চলিক এবং বলিউডের শিল্পীদের মধ্যে পে-স্কেলে কোনও তফাত দেখা যায়?
শাশ্বত: না, তফাত শুধু হিট ফ্লপের উপর নির্ভর করে। ছবি ফ্লপ করলে কিন্তু পরের ছবির সময়ে বড় তারকাদের পারিশ্রমিকও কমে যাবে। অঞ্চল ভিত্তিক নয়। মুম্বইয়ে শিল্পীদের তোয়াজ করে রাখা হয়। সে যেখান থেকেই আসুক না কেন।
আরও পড়ুন: টলিউডে ফের শোকের ছায়া! প্রয়াত জনপ্রিয় অভিনেতা শুভময় চট্টোপাধ্যায়!
প্রশ্ন: বাংলা ছবি তো এখন রমরমিয়ে ব্যবসা করছে। কিন্তু মানুষ সমালোচনাও করছে ছবির মান নিয়ে...
শাশ্বত: এই প্রসঙ্গে মনে পড়ছে, তেলুগু ছবি 'প্রজেক্ট কে'-তে কাজ করছি দীপিকা পাড়ুকোন এবং প্রভাসের সঙ্গে। ওখানে বাজেট বলে কিছু নেই। যত লাগবে, দেওয়া হবে। যত দিন ইচ্ছে শ্যুট চলবে। ওদের দর্শকেরা নিজেদের ভাষা এবং শিল্পের প্রতি অনুগত। হিন্দি ছবি দেখবে না, কিন্তু নিজেদের ছবি দেখবে একাধিক বার। তাই টাকাটা বাড়াতে পেরেছে ওরা। কিন্তু বাংলায় সময় লাগবে। এখন ভাল সময় চলছে, কিন্তু আরও দর্শক বাড়াতে হবে। নিজেদের ভাষাটাকে ভালবাসতে হবে। মনে পড়ে, 'জগ্গা জাসুস'-এর শ্যুটে রণবীর বলছে, ''দাদা, আপনে 'সাইরট' মরাঠি ফিল্ম দেখা হ্যায়? বহুত আচ্ছা হ্যায়।'' আমার ভাল লাগল। অত বড় বলি তারকা কিন্তু তাঁদের ভাষার ছবি দেখেন। খারাপ লাগে এটা দেখে, এখানে প্রেক্ষাগৃহে লোকে সারি বেঁধে 'স্পাইডারম্যান' দেখছেন, একটা বাংলা ছবি দেখতে পারছেন না।
প্রশ্ন: বাঙালি কি সত্যজিৎ-মৃণাল-ঋত্বিকের স্মৃতিতেই এখনকার বাংলা ছবি দেখে না?
শাশ্বত: যাঁরা বলছেন, বাংলা ছবি আগের মতো ভাল হচ্ছে না, তাঁরা আদৌ কতটা সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেন দেখেছেন, সন্দেহ। ছবি তুলে প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে পারবেন তো? এটা স্টাইল হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাঁরা নিজেরা সাফল্য পাচ্ছেন না, অন্যকে ছোট করে আনন্দ পান।
প্রশ্ন: তেলুগু, বলিউড, বাংলা, কোথায় কাজ করে সুবিধা বেশি?
শাশ্বত: তেলুগুটা কেবল এক দিন শ্যুট করেছি। এখনই বলা মুশকিল। বাংলার সমস্যা হল বাজেট কম। একটা লোককে পাঁচটা কাজ করতে হয়। মুম্বইয়ে একটা কাজের জন্য পাঁচটা লোক। আমাকে ভ্যান থেকে সেটে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিন জন এসেছিল। বাংলা সম্পূর্ণ ভাবে চলছে প্রতিভার উপর। বাজেট যদি হিন্দির মতো হত, আজ অন্য জায়গায় যেত এই ইন্ডাস্ট্রিতে।