“দেশের সম্পদের উপর প্রথম অধিকার দরিদ্র মুসলিমদের’’, ২০০৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের এ হেন মন্তব্যের একটি ভিডিও সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই নিয়ে নেটওয়ার্ক ১৮-এর গ্রুপ সম্পাদক রাহুল জোশীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী মোদির কটাক্ষ, ‘‘২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের ইস্তেহারে মুসলিম লিগের ছাপ রয়েছে।’’
advertisement
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বেশ কিছু উদাহরণ তুলে ধরে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে, মনমোহন সিং সর্বদা ওবিসি সংরক্ষণের একটা অংশ মুসলমানদের দিতে চেয়েছেন। তিনি বলেন, “আপনারা কংগ্রেসের ইতিহাস দেখুন। ১৯৯০ সাল থেকে এই দাবি (সংরক্ষণের জন্য) উঠছে। সমাজের একটা বড় অংশ মনে করে, তাঁদের জন্য কিছু করা উচিত। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়। ১৯৯০-এর আগে কংগ্রেসও এর বিরুদ্ধে ছিল এবং এই ধরনের দাবি কঠোর হাতে দমন করত। এরপর তারা যে কমিশনই গঠন করুক বা যে কমিশনই তৈরি করুক না কেন, রিপোর্ট ওবিসি-দের পক্ষে আসতে শুরু করে। তারা সেই সব রিপোর্ট অস্বীকার করে, প্রত্যাখ্যান করে এবং দমন করতে থাকে। কিন্তু নব্বইয়ের দশকের পর ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির কারণে তাদের মনে হয়, কিছু একটা করা উচিত।”
মোদির প্রশ্ন, “তাহলে কী প্রথমে ভুল করেছিল কংগ্রেস? নব্বইয়ের দশকে ওরা কর্ণাটকে মুসলিমদের ওবিসি হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথমে ওবিসি-দের প্রত্যাখ্যান এবং দমন, তারপর রাজনৈতিক লাভের জন্য মুসলিমদের ওবিসি হিসেবে চিহ্নিতকরণ। কেন্দ্র থেকে বিতাড়িত হল কংগ্রেস। ২০০৪ পর্যন্ত এই পরিকল্পনা ছিল। ২০০৪ সালে কংগ্রেস ফের ক্ষমতায় আসে এবং অন্ধ্রপ্রদেশে মুসলিমদের ওবিসি কোটা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বিষয়টা আদালতে জটিল আকার ধারণ করে। ভারতীয় সংবিধানের মূল চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কংগ্রেস ওবিসি-দের ২৭ শতাংশ সংরক্ষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু ২৭ শতাংশ কোটাই আদতে লুট করার চেষ্টা করছে।”
মোদি জানান, ২০০৯ সালে কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তেহারেও এই দাবি ছিল। তিনি বলেন, “২০১১ সালে এই বিষয়ে ক্যাবিনেট নোট রয়েছে, যেখানে ওরা মুসলিমদের ওবিসি কোটা থেকে একটা অংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। উত্তরপ্রদেশের ভোটেও তারা এই চেষ্টা করেছিল। কিন্তু লাভ হয়নি। ২০১২ সালে অন্ধ্র হাইকোর্ট এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেয়। ওরা সুপ্রিম কোর্টেও গিয়েছিল, কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। ২০১৪ সালের ইস্তেহারেও ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণের কথা বলেছিল।”
২০২৪ লোকসভা ভোটের ইস্তেহার নিয়ে কংগ্রেসকে রীতিমতো তুলোধনা করেন মোদি। তিনি বলেন, “ভারতে যখন সংবিধান লাগু হচ্ছে, তখন আরএসএস বা বিজেপির কেউ উপস্থিত ছিল না। বাবাসাহেব আম্বেদকর, পণ্ডিত নেহরু, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এবং আমাদের দেশের বেশ কয়েকজন মহাপুরুষ উপস্থিত ছিলেন এবং দীর্ঘ চিন্তাভাবনার পর তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে ভারতের মতো দেশে ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ দেওয়া যাবে না। কিন্তু ২০২৪ সালে নির্বাচন তাদের ইস্তেহার দেখুন। এতে মুসলিম লিগের ছাপ স্পষ্ট। তারা যেভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করছে, যেভাবে আম্বেদকরের অপমান করছে… এসসি, এসটিদের সংরক্ষণের উপর বিপদের খড়্গ ঝুলছে। ওরা ওবিসিদের জীবন অসহনীয় করে তুলবে। আমি এই বিষয়টা দেশবাসীকে জানাব না?”
সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে রাহুল গান্ধি প্রশ্ন তুলেছিলেন, সংবাদমাধ্যমে কতজন ওবিসি কাজ করেন? দেশে ক’জন ওবিসি বিচারক রয়েছেন? এমন মন্তব্যের নিন্দা করে প্রধানমন্ত্রী মোদি পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, ওবিসি-দের জন্য কংগ্রেসের কী নীতি?
মোদি বলেন, “এসব ওদের পাপ। ওদের (কংগ্রেসের) পাপের মাসুল দিচ্ছে গোটা দেশ। ওরা যদি সত্যিই ধর্মনিরপেক্ষ হত, প্রকৃত অর্থে সামাজিক ন্যায়বিচার করত, ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি না করত, তাহলে আজ ওদের ভুয়ো কাগজপত্র হাতে ঘুরে বেড়াতে হত না। আমি বিশ্বাস করি, গত ১০ বছরে আমার সরকার যা যা কাজ করেছে, তার ফলাফল যাই হোক না কেন, আমরা কর্মের উপর ভিত্তি করে তার উত্তর দিতে পারব। আমরা সবাইকে ন্যায়বিচার দেব।”
কংগ্রেসের উদ্দেশ্যে মোদি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, “কীভাবে আমাদের দেশ প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি পেল?’’ উত্তরও দিয়েছেন তিনি, “আমাদের চিন্তা-চেতনার মাধ্যমে। আমরা ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তিনটি সুযোগ পেয়েছি। একবার অটলজির সময়, দু’বার আমার জমানায়। আমরা প্রথমবার কাকে নির্বাচিত করেছি? এপিজে আবদুল কালাম, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য। তারপর একজন দলিত (রামনাথ কোবিন্দ) এবং তারপর আদিবাসী নারী (দ্রৌপদী মুর্মু)। আমাদের কাজ দেখে বোঝা যায়, আমাদের চিন্তাভাবনা কেমন।”
একান্ত সাক্ষাৎকারে বিজেপির উন্নয়ন অ্যাজেন্ডা, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের রণনীতি এবং সরকারের কাজে বিরোধীদের বাধা নিয়েও খোলাখুলি আলোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকারটি ২৯ এপ্রিল সোমবার রাত ৯টায় নিউজ 18 চ্যানেল এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সম্প্রচার করা হবে।
