সংসার সামলানোর জন্য পড়াশোনা ছেড়ে সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া সেদিনের হতদরিদ্র পরিবারের যাদব আজ ধানবাদ আইআইটির ভাবি প্রফেসর। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর আইআইটির প্রফেসর হিসেবে যোগ দিতে চলেছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি- ১ ব্লকের রঘুসর্দারবাড় জলপাই গ্রামের দরিদ্র মৎস্যজীবী পরিবারের ছেলে যাদব মাজি। ২০০৮ সালে যাদব নয়াপুট সুধীরকুমার হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক দেন। স্কুলের সকলকে টেক্কা দিয়ে যাদব ওই বছর পেয়েছিল ৮৬.২৫% মার্কস। অভূতপূর্ব ফলাফল করেও দরিদ্র পরিবারের সংসারের হাল ধরতে পড়াশোনা ছেড়ে নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে যাওয়া শুরু করেন যাদব।
advertisement
আরও পড়ুন: IIT এবং NIT-তে ভর্তি হতে কত খরচ হয়? BTech 2025 ভর্তি হওয়ার আগে জরুরি তথ্য জানুন
যাদবের বাবা লঙ্কেশ্বর মাজি পেশায় একজন মৎস্যজীবী। বাবার সঙ্গেই মাছ ধরতে যাওয়া শুরু করেন যাদব। এদিকে মাসখানেক আগে স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান বসন্ত কুমার ঘোড়ই। স্কুলের ফার্স্ট বয়কে খোঁজ করেন তিনি। তাঁর খোঁজ না পেয়ে ওই স্কুলেরই সহ- শিক্ষক সন্দীপ জানাকে সঙ্গে নিয়ে মোটর বাইকে চেপে যাদবের বাড়িতে রওনা দেন বসন্তবাবু। সেখানে বসন্তবাবু প্রতিবেশীদের থেকে জানতে পারেন যাদব মাছ ধরতে গিয়েছে। তবে এদিন তাঁর বাড়ি থেকে ফিরে যাননি বসন্তবাবু। যাদবের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভাঙা তক্তা দিয়ে বানানো চৌকির ওপর বসে থেকে অপেক্ষা করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: ‘চুরি করা হার বাড়ি নিয়ে যেতেই ‘গা ছমছম’ করছিল’, সোনার হার ফিরিয়ে সরি বলল চোর! কোথায়?
এরপর বিকেল নাগাদ যাদব আসতেই কথা বলেন তাঁর সঙ্গে। তখনই বসন্তবাবু ক্ষিদ্দার ভূমিকা নিয়ে বেছে নেন তাঁর কোনির জন্য। দারিদ্রতার কথা জানতে পেরে নিজের বাড়িতেই যাদবকে ঠাঁই দেন বসন্তবাবু। দু’কামরার ঘরে তখন থাকার রুম না থাকায় ব্যাংকে লোন নিয়ে দোতালায় যাদবের জন্য রুম বানান তিনি। সেখান থেকেই বসন্তবাবুর হাত ধরে শুরু হয় যাদবের যাত্রা। দু’বছর পর উচ্চ মাধ্যমিকে সায়েন্স নিয়ে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন যাদব। এরপর বসন্তবাবু নিজেই যোগাযোগ করেন বেলুড় মঠের স্বামীজিদের সাথে। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে রসায়ন বিভাগে ভর্তি করে দেন যাদবকে। পরে মুম্বই আইআইটি থেকে মাস্টার্স করেন যাদব। ২০১৬ সালে কানাডার কুইনস ইউনিভার্সিটি যাদবকে জৈব রসায়ন নিয়ে গবেষণা করার সুযোগ দেয়। কানাডার কুইনস ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টরেট ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে পোস্ট ডক্টরেট করে গবেষণার কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন।
এবার সেই যাদব ধানবাদ আইআইটি থেকে প্রফেসর হিসেবে যোগ দেওয়ার নিয়োগ পেয়েছেন সম্প্রতি। আর সেই খবর শুনেই যেন দুচোখে অশ্রু ধারা থামছে না সেদিনের ক্ষিদ্দার ভূমিকায় থাকা প্রধান শিক্ষক বসন্তকুমার ঘোড়ইয়ের। বসন্তবাবু বলেন, “আমার গর্বে বুক ফেটে যাচ্ছে। ও যেদিন আইআইটিতে যোগ দেবে আমরা স্কুলের সকল ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে পালন করব। আমি চাই আগামী দিনে যাদবের মতো আরও অনেকে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুক।” এদিকে গত এক বছর আগে প্রয়াত হয়েছেন যাদবের বাবা লঙ্কেশ্বর মাজি। তবে যাদবের সাফল্যের খবরে অকাল উৎসব গোটা গ্রামে। যাদবের গোটা কাহিনি যেন আজ শিখিয়ে দিচ্ছে– “যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পার অমূল্য রতন।”