এদিন ২০১৬ সালে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকাদের গোটা প্যানেলই বাতিল করেছে সর্বোচ্চ আদালত। চাকরি হারালেন প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক শিক্ষিকা। সেই তালিকায় নাম রয়েছে ২০১৬ সালে পাওয়া অশোকনগরের দুই শিক্ষিকা স্বর্ণালী চক্রবর্তী ও শাওনি ভট্টাচার্যেরও।
এদিন রায় শোনার পর স্বর্ণালী চক্রবর্তী জানালেন, “স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন ছাড়া আর কিছুই করার নেই এখন। বিচার ব্যবস্থা এর থেকে যদি ফাঁসির রায় দিত তবে ভাল হতো। অন্তত এমন অসম্মানজনক পরিস্থিতিতে পড়তে হত না শিক্ষক শিক্ষিকাদের।’
advertisement
আরও পড়ুন: এসএসসি স্বশাসিত সংস্থা, তবে আমরাও চাই তাড়াতাড়ি নিয়োগ হোক: মমতা
অশোকনগর কল্যাণগড় পৌরসভার নয় নম্বর ওয়ার্ডের স্বামী, শ্বশুর-সন্তানকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল স্বর্ণালীর। এদিন যেন গোটা বাড়ি নিশ্চুপ। পাড়া-প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, এই খবর শোনার পর থেকেই গোটা পাড়া জুড়েই এখন শোকের ছায়া। প্রতিবেশীদেরও সাহস হচ্ছে না চক্রবর্তী বাড়িতে গিয়ে সান্ত্বনা দেওয়ার। শিক্ষিকার চাকরি পাওয়ার পরই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করে বাড়ি তৈরি শুরু করে করেছিলেন অশোকনগরের আরেক প্রাক্তন শিক্ষিকা শাওনি ভট্টাচার্য।
আরও পড়ুন: সুপ্রিম-নির্দেশে চাকরি গেল ২৫ হাজার ৭৫২ জনের, ব্যতিক্রম শুধু এক জন সোমা দাস! কেন?
কিন্তু এই রায়ের পর চাকরি চলে যাওয়ায় ইএমআই থেকে শুরু করে নানা ধরনের লোন ও সংসার কীভাবে চালাবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না। এমনকী কোর্টের তরফ থেকে এতদিন যাবত যে পারিশ্রমিক মিলেছে, তাও ফেরত দিতে হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখন কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না এই চাকরিহারারা।
চাকরি হারানোর পর এই সব কথা ভেবেই আজ যেন আর কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে পারছেন না তিনি। শুধু চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল, সন্তানকে আগলে বসে চাকরি হারানো শিক্ষিকা। বাড়ির বাইরে বেরোনোর ক্ষেত্রেও আত্মসম্মানের কথা ভেবে লজ্জা পেতে হবে তাঁদের, আক্ষেপ পরিবারের গলায়।
দীর্ঘদিন ধরে দিনরাত এক করে পড়াশোনার পর পরীক্ষায় বসে মিলেছিল সাফল্য, পেয়েছিলেন শিক্ষিকার চাকরি। আর এক রায়ে আজ তাঁরা চাকরিহারা। কিছু মানুষের জন্য কেন সবার চাকরি যাবে! এ কেমন বিচার ব্যবস্থা! মানুষ তাহলে কোথায় যাবে বিচার পেতে! চোখের কোনে জল যেন থামতেই চাইছে না এই পরিস্থিতিতে। কিছু মানুষের দুর্নীতির বলি কেন সকলকে হতে হল!
এখন তারই উত্তর খোঁজার চেষ্টায় বাতিল চাকরিপ্রার্থীরা। একজন দেগঙ্গার স্কুলে ও অপরজন মেদিনীপুরের একটি স্কুলে শিক্ষিকা হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। চাকরি হারিয়ে এদিন যেন পুরোপুরি মানসিকভাবে ভেঙে পড়লেন তাঁরা। স্বামী সন্তান পরিবার নিয়ে সুন্দর গোছানো জীবন যেন অগোছালো হয়ে গেল আদালতের এক রায়ে।
Rudra Narayan Roy