১)করোনার জেরে স্কুল বন্ধ থাকায় গত এক বছরের বেশির ভাগটাই কেটেছে বাড়িতে। অনলাইনে পড়াশোনায় সুযোগ কম থাকায় লেখা অভ্যাস কিছুটা হলেও কমে গিয়েছে। তাতে কি পরীক্ষার হলে সমস্যায় পড়তে হতে পারে পরীক্ষার্থীদের?
উত্তর : করোনার জেরে দীর্ঘদিন বাড়িতে থাকার ফলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পড়ুয়ারা পিছিয়ে যে পড়েছে সে কথা অস্বীকার করা যায় না। তার মধ্যে প্রথমটিই হল লেখার অভ্যাস। আমরা জানুয়ারিতে একটা পরীক্ষা নিয়েছিলাম যাতে দেখা গেল যারা সাধারণত ভালো নম্বর পেয়ে আসছে এ যাবৎ যাদের কাছ থেকে মাধ্যমিকে (Madhyamik 2022) ভাল ফল আশা করা হচ্ছে সেই অপেক্ষাকৃত ভালো নম্বর পাওয়া মেয়েরাও কিন্তু পরীক্ষার উত্তর শেষ করতে পারেনি। কারণ, লেখার গতি কমে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, লিখতে গিয়ে পুরোটা মনোনিবেশ করে লেখার প্রবণতাও কমেছে। যেভাবে লিখলে ভালো নম্বর হতে পারে সেটার বোধও যেন কোথাও একটা নষ্ট হয়েছে। দেখা গেল যারা একশোতে আশি পাওয়ার মতো তাদের ক্ষেত্রেও নম্বরটা পঁয়ষট্টি বা সত্তরে আটকে থাকছে। আসলে করোনা পূর্ববর্তী সময়ে একটা নিয়মিত ঘষামাজা চলত স্কুলে লেখার ক্ষেত্রে যেটা অনলাইনে কিছুটা হলেও ব্যাহত হয়েছে আর তার জেরেই লেখার গতি কমেছে মেয়েদের। এমনটাই আমাদের ধারণা। অভিভাবকরাও এই বিষয়ে একমত। এমনকি ছাত্রীরাও সেকথাই বলছে।
advertisement
আরও পড়ুন : হাতে আর মাত্র ৭ দিন, এ বারে রেকর্ড সংখ্যক পরীক্ষার্থী বসবেন মাধ্যমিকে
২) মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গভর্নমেন্ট গার্লস হাইস্কুলে একটি কাউন্সেলিং হয় সম্প্রতি। তার থেকে আপনাদের কী অভিজ্ঞতা হয়েছে?
উত্তর : হ্যাঁ। আমরা মাধ্যমিকের মেয়েদের একটা কাউন্সেলিং নিজেরাই আয়োজন করেছিলাম। পর পর দুদিন বিষয়ভিত্তিক একটা কাউন্সেলিং চলে। পাশাপাশি পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় নিয়ে চলে আলোচনা। পরীক্ষার ১৫ আগে এই কাউন্সেলিং করা হয়। তাতে সবথেকে বেশি যে বিষয়গুলি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল সেগুলি ছিল, ওরা কী ভাবে পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র পড়ে উত্তর লেখা শুরু করবে এবং আগামী পনের দিন কী ভাবে প্রস্তুতি নেবে। তাতে বেশ ভালো সাড়া পাওয়া গিয়েছিল। একটা ভালো সুযোগ পাওয়া গিয়েছিল শেষ মুহূর্তের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়টা কী ভাবে এগোতে হবে সে বিষয়ে কিছুটা গাইড করে দেওয়ার। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে ছাত্রীদের একটা স্বাস্থ্যকর আদানপ্রদানের সুযোগ হয়েছিল এই কাউন্সেলিং-এর মধ্যে দিয়ে।
৩) এতে কতটা উপকার হয়েছে ছার্ত্রীদের বলে মনে করছেন আপনারা?
করোনাকালে সাখাওয়াত মেমোরিয়ালে আমরা অনলাইন ক্লাস-এ খুবই জোর দিয়েছিলাম। আমরা সারা বছর অনলাইন ক্লাস করেছি। কাউন্সেলিং-এ এসে এই নিয়ে বার বার ধন্যবাদ জানিয়েছেন অভিভাবকরা। পাশাপাশি লক্ষ্য করেছি, এই কাউন্সেলিংয়ের শুরুতে আমরা ছাত্রীদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজে যে জড়তা বা একঅর্থে ভীতু, সংশয় ভাব লক্ষ্য করেছি সেখানে কিন্তু কাউন্সেলিং-এর শেষে তাঁদের অনেক বেশি চনমনে, উজ্জ্বল মনে হয়েছে। পরীক্ষার্থীরা (Madhyamik 2022) নিজেরাও তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছে এখানে। ওদের মুখ চোখের সেই পাল্টে যাওয়াটা দেখে মনে হয়েছে ওরা পারবে সেই আত্মবিশ্বাস ওদের হয়েছে। যেটা খুবই সদর্থক মনে হয়েছে আমাদের।
আরও পড়ুন : মাধ্যমিক- উচ্চমাধ্যমিক নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত? ফের বৈঠক ডাকলেন মুখ্যসচিব
৪) পরীক্ষার্থীদের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির জন্য কী ভাবে এগোনো দরকার বলে মনে করেন?
উত্তর : কাউন্সেলিং-এ আমরা ছাত্রীদের বলেছিলাম ম্যারাথন দৌড়ে যেমন শেষ রাউন্ড-টা নির্ধারণ করে কে জয়ী, ঠিক তেমনই ওদের ক্ষেত্রে এই শেষ পনেরোটা দিন কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওরা যেন সেটা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নেয়। পনেরো দিনের মধ্যে প্রতিদিন ওরা বারো ঘণ্টা হিসেবে যদি পড়াশোনা নিয়ে থাকছে এমনটা ধরে নেওয়া হয় তাহলে কিন্তু সময়টা অনেকটা। এক্ষেত্রে প্রতিটা ঘণ্টা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে যে বিষয়গুলো সেভাবে পড়া হয়নি সেগুলো আবার একটু ঝালিয়ে নেওয়া যেতে পারে যাতে আত্মবিশ্বাস বাড়ে। আর সময় নেই ভেবে হাল না ছেড়ে বরং অনেকটা সময় এখনও বাকি অনেকগুলো ঘণ্টা এখনও হাতে আছে এই ভাবে ভাবা উচিত। সেক্ষেত্রে কিন্তু এই অল্প কদিনই দারুণ কার্যকরী হতে পারে পরীক্ষার্থীদের জন্য। আরও একটা বিষয় হল, এই যে ১২ টা থেকে ৩টে এই পরীক্ষার সময়টা সেই সময়টা কিন্তু এতদিন বাড়িতে থেকে অনেকেরই একটা ভাতঘুম দেওয়া র অভ্যেস হয়ে গিয়ে থাকতে পারে যেটা এতদিনে না বদলালে আগামী সাতদিনে বদলে ফেলতে হবে। নয়তো পরীক্ষার সময় ঘুম পেয়ে গেলে মুশকিল। তাই দিনের ওই সময়টা খুব ভালো হয় যদি লেখা অভ্যেস করা যায়। প্রয়োজনে বুক খোলা রেখেও পুরনো প্রশ্নপত্র দেখে উত্তর করা যেতে পারে আগামী কয়েকদিন লেখার গতি বাড়াতে।
৫) স্কুলে গিয়ে ক্লাস করতে না পারায় জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষার আগে পরীক্ষার্থীরা কি আতঙ্কে রয়েছে?
উত্তর : প্রথম দিকে কিছু জড়তা থাকলেও পরীক্ষা যত কাছে আসছে তত ওরা বুঝতে পারছে এই অফলাইন পরীক্ষা ওদের জন্য কতটা জরুরি। ভয় কাটিয়ে একটু একটু করে ওরা কিন্তু আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছে। পড়াশোনার প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি, সিলেবাস ঘষামাজার পাশাপাশি ওরা কিন্তু মানসিক ভাবে নিজেরাও নিজেদের অনেক প্রস্তুত করছে। পরীক্ষা-ভীতি কাটিয়ে উঠছে। যাতে ওরা নিজেদের প্রস্তুত করতে পারে সেই কারণেই আমরা সাখাওয়াতের পক্ষ থেকে ওদের কাউন্সেলিং করিয়েছিলাম আবার সহশিক্ষকদের সংগঠন WBGSTA-এর পক্ষ থেকেও আরও একটি কাউন্সেলিং করানো হয়।
৬) ‘করোনা পরিস্থিতিতে পরীক্ষা আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে লম্বা একটা সময় দোলাচলে ছিল ছাত্রছাত্রীরা। পরে সিদ্ধান্ত হয় পরীক্ষা অফলাইনেই হবে। ফলে পড়াশোনার পাশাপাশি অফলাইনে পরীক্ষার জন্য পড়ুয়াদের মানসিক প্রস্তুতি দরকার। কী দায়িত্ব এখানে বাড়ির অভিভাবকদের?
উত্তর : পরীক্ষা করে অনেকক্ষেত্রেই অভিভাবকরা অনেকটা বেশি কড়াকড়ি করে ফেলেন অনেক সময়। কিন্তু ততটা কড়াকড়ি না করে যদি পরীক্ষার্থীদের একটু সহজ থাকতে দেওয়া হয় তাহলে সেটা তাদের জন্য উপকারী হতে পারে। এই সময় ছাত্র ছাত্রীদের একটু সেই জায়গাটাও দিতে হবে যাতে ওদের মন ভালো থাকে। একটু প্রকৃতি দেখা, গান শুনতে শুনতে সময় কাটানো এইগুলিও যেন কিছুটা সময় পায় তারা। পড়তে বসার আগে একটু মেডিটেশন করাও অত্যন্ত উপকারী হয়। আর পরীক্ষা নিয়ে যারা সংশয়ে ছিল তাদেরও কিন্তু আমরা বারবারই বলেছি পরীক্ষা দেওয়াটা জরুরি। এটা জীবনের একটা বড় সুযোগ। এই সময়ে অভিভাবকরা তাদের ওপর চাপ না দেওয়াই কাম্য।
৭) পরীক্ষায় কী ভাবে প্রশ্ন নির্বাচন করতে হবে, কোন ধরনের প্রশ্নের উত্তর আগে লেখা সুবিধাজনক সেই নিয়ে যদি কিছু বলেন?
উত্তর: যখন পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা হলে প্রশ্নপত্র হাতে পাবে তখন সবথেকে আগে ওরা যেন সবসময় 'টু দ্য পয়েন্ট' কমসময়ে উত্তর দেওয়া যায় যে প্রশ্নের সেগুলি আগে উত্তর করে। তাহলে কিন্তু সময়টা সবথেকে বেশি কাজে লাগানো যাবে। একইসঙ্গে প্রথম থেকেই নম্বর ও সময়ের হিসেবটা ঠিক থাকবে। আর মানসিকভাবেও সেটাই সঠিক। কারণ প্রথম লেখাতেই যদি আত্মবিশ্বাস পেয়ে নেওয়া যায় তাহলে কিন্তু পুরো পরীক্ষাটাই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগোনো যায়। প্রথম পনেরো মিনিট মন দিয়ে পরীক্ষার প্রশ্ন পড়াও কিন্তু জরুরি। যে বিষয়গুলি তোমার সবথেকে বেশি দখলে আছে সেগুলির উত্তরগুলি সবার আগে দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। যেখানে অল্টারনেটিভ প্রশ্ন থাকবে সেক্ষেত্রে সেই প্রশ্নগুলি উত্তর করার চেষ্টা করো যাতে অনেকগুলি ভাগ রয়েছে। সেক্ষেত্রে ভাল হবে যত ছোট পার্ট রয়েছে সেগুলির উত্তর করা। তাতে উত্তর দেওয়া ও নম্বর ভালো করারও সুযোগ বেশি। রিভিশনের ক্ষেত্রে কিন্তু একটু খেয়াল রাখতে হবে। অঙ্ক বাদে অন্যান্য বিষয়ে পুরো উত্তরপত্র শেষ করে তবেই ওরা রিভিশন দিতে পারে। কিন্তু অঙ্কের ক্ষেত্রে তা করলে চলবে না। উল্টোটা করতে হবে, প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর করে একবার রিভিশন করতে হবে।
পাশাপাশি অতিরিক্ত না লেখা, উত্তরপত্রের টেকনিক্যাল দিকগুলি মেনে চলাও জরুরি। অর্থাৎ স্টেপল না করে সুতো দিয়ে খাতা বাঁধতে হবে। স্টেপল দেওয়া হলে পেছনের পাতা ছিঁড়ে যেতে পারে। বাঁদিকে ওপরে ও নিচে যেন সবসময় বেশ খানিকটা মার্জিন থাকে যাতে পরীক্ষকের পড়তে সুবিধে হয়। অতিরিক্ত পাতা নেওয়ার পরে প্রতি ক্ষেত্রে নাম লিখতে না পারলেও যেন প্রতি পৃষ্ঠায় রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও এডমিট কার্ড নম্বর লেখা হয়। অতিরিক্ত পৃষ্টা নিলে সেগুলি ভালোভাবে গুছিয়ে নেওয়া জরুরি যাতে এলোমেলো না হয়ে যায়।