যেখানে সরকারি প্রাথমিক স্কুলে ছাত্রের অভাবে স্কুল বন্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটছে এ রাজ্যে, আবার সে রাজ্যে সরকারি এক প্রাথমিক স্কুলে এমন ঘটনা দেখে রীতিমতো সাড়া পড়েছে। ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রতি বছর বৃদ্ধি কী ভাবে, প্রশ্নের উত্তরে স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা এক মতে জানিয়েছেন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রথমত তারা জানান, স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা তাদের সন্তান সমতুল্য স্নেহ করেন ছাত্র-ছাত্রীদের, যেমন নিশ্চিদ্র পঠনপাঠন।
advertisement
স্বাভাবিকভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের বেশি পছন্দের বাইরের জগৎ, ক্লাসরুম বা স্কুলে টানা কয়েক ঘন্টা আবদ্ধ থাকাটা অনেকাংশেই বহু ছাত্রের সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়, তাদের বাইরের জগৎটাই বেশি প্রিয়। সেই সমস্ত ছাত্রকে স্কুলে ফেরাতে বা স্কুলমুখী করতে স্কুলের পরিবেশ কেও তাদের মনের মত তৈরি করতে চেয়েছেন শিক্ষক। স্কুলের দেওয়াল লাগোয়া ফুলের মত শিশুদের আকৃষ্ট করতে লাগানো, করবি গোলাপ-সহ নানা ফুলের গাছ, দেয়ালে নানা রঙিন ছবি, খেলার জন্য অনুকূল পরিবেশ, জ্ঞান-বিজ্ঞান ইতিহাস নানা বিষয়ের ছবি ও মডেল যা পাঠ্য বইয়ের বাইরের জিনিসকেও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যে সমস্ত কিছু খেলার ছলে শিক্ষা পাবে একে ওপরের মধ্য দিয়েও ছাত্রছাত্রীরা।
আরও পড়ুন: বাথরুমে বসে শ্রদ্ধাকে টুকরো করার ফাঁকে বিয়ার-সিগারেট খায় আফতাব, অর্ডার দেয় মুখরোচক খাবার!
স্কুলের মধ্যে রয়েছে ম্যাগাজিন ডেস্ক সেখানে গল্পের বই ও ছেলে মেয়েদের পছন্দের কার্টুনের বই। স্কুলের মধ্যেই প্রায় ৪০ হাজার লিটারে জল ধরবে এমন জল ধরো জল ভরো কর্মসূচিকে বাস্তবায়ন করতে বিশাল আকার ট্যাংক তৈরি ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ হয়েছে। সেই সঙ্গে ছাত্রদের নিরাপত্তা দিক ভেবে লাগানো হয়েছে একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা পাশাপাশি শিক্ষকদের যাতে কোনভাবে খামতি না থাকে স্কুলে বসানো হয়েছে বায়োমেট্রিক যন্ত্র। স্কুলের ফাঁকা অংশে কিচেন গার্ডেন, আবার চাষ আবাদের জন্য জৈব সার নিজেরাই তৈরি করছে।
আরও পড়ুন: ব্যবসায়ীকে লক্ষ্য করে গুলি, কুপিয়ে খুনের চেষ্টা! মালদহে চাঞ্চল্যকর কাণ্ড
চাষের জমির পাশেই রয়েছে জৈব সার তৈরির ট্যাংক যেখানে প্রতিদিন ছাত্র-ছাত্রীদের অবশিষ্ট খাবার আনাজের খোসা ও জল মিশছে। প্রতিদিন মিড ডে মিল খেয়ে হাত ধোয়া বেসিনের জল সরাসরি প্রবেশ করছে সেই সার তৈরির ট্যাংকে। প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পঠন পাঠন চলে, নিচের তলা ও এক তলা মিলিয়ে দ্বিতলে রয়েছে ডাইনিং রুম যেখানে একসাথে প্রায় ৬০ জন ছাত্রছাত্রী বসে খাবার সুযোগ থাকে, পাশাপাশি বিদ্যালয়ে রয়েছে সিক রুম, শিশুদের কোনরকম সমস্যায় যাতে অভিভাবকেরা চায়ের লাইনে যোগাযোগ করতে পারে সেজন্য স্কুলের মধ্যেই লাগানো রয়েছে চাইল্ড লাইনের যোগাযোগ নাম্বার, স্কুলের মেন গেটের সামনেই রয়েছে কমপ্লেন বক্স।
স্কুল সূত্রে জানা যায়, ছাত্র-ছাত্রীদের প্রকৃত শিক্ষা দিতে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে যেমন শিক্ষক-শিক্ষিকার সুসম্পর্ক প্রয়োজন সেই সঙ্গে অভিভাবকদের সঙ্গেও সম্পর্ক থাকা আবশ্যিক, এ প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক জানান, মাঝেমধ্যেই স্কুলছুট হওয়ার ঘটনা ঘটে পরপর কিছুদিন উপস্থিতি নেই স্কুলে, এমন ঘটনা দেখলে। আমরা নিজেরাই শিক্ষক শিক্ষিকা মিলে পৌঁছে যাই সেই ছাত্রছাত্রীর বাড়িতে। এভাবেই ধীরে ধীরে অভিভাবকদের সঙ্গে স্কুলের একটা নিবিড় সম্পর্ক গড়া ওঠা, এতে ছাত্র-ছাত্রীদের পাশাপাশি যে সমস্ত অভিভাবক সামাজিক জ্ঞান সম্পর্কে বিশেষ অবগত নয় তাদেরকেও অবগত করা সম্ভব হয়েছে। ফলে বিদ্যালয়ে স্কুলছুট হওয়ার বা স্কুল বিমুখ হবার ঘটনা কমেছে এবং বছরে বছরে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে পীর সারেঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়।
রাকেশ মাইতি