এই উদ্যোগ গড়ে তুলেছেন কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকা, যারা সারাদিনের কাজ শেষ করে নিঃস্বার্থভাবে সন্ধ্যাবেলায় শিক্ষার আলো বিলিয়ে দিচ্ছেন। চুরপুনি পশ্চিম পাড়ার অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফিরোজ শেখ বলেন, “আমি দেখেছি বিদ্যালয়ের কিছু পড়ুয়া লম্বা সময় ধরে অনুপস্থিত থাকে। খোঁজ নিয়ে দেখা যায় কেউ বাইরে কাজে গিয়েছে, আবার কেউ পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে। তাই এভাবে সমাজের একটা শ্রেণী পিছিয়ে গেলে সমাজও পিছিয়ে যাবে। সেকারণে আমি এবং আমার মিসেস বছর তিনেক আগে থেকে আরও কিছু শিক্ষকদের নিয়ে এই প্রয়াস শুরু করেছি।”
advertisement
“আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন”
এই তিন বছরে একটু একটু করে গড়ে উঠেছে ‘আমাদের পাঠশালা’। যে সব ছাত্র-ছাত্রী পারিবারিক অভাবের কারণে কেরল বা ব্যাঙ্গালুরুতে নির্মাণ শ্রমিকের কাজে গিয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিল, তাদের অনেকেই আজ এই পাঠশালায় ফিরে এসেছে। পাঠশালাটি এখন রাজুয়া গ্রামের মানুষের আশা ও আস্থার প্রতীক। মাজিগ্রাম বিশ্বেশ্বরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত কুমার সাহা বলেন, “অর্জুন হেমব্রম নামে একটা ছেলে একবছর পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিল। তাকে এবং তার অভিভাবকদের বুঝিয়ে যখন আবার পড়াশোনায় ফিরিয়ে আনলাম, দেখলাম খুব ভাল পড়াশোনা করছে। সামনের বছর মাধ্যমিক দেবে, এখন সে খুব ভাল ছেলে।”
দিনকে দিন স্কুলছুটের সংখ্যা বাড়ছে। দারিদ্রতা, অভাবই প্রধান কারণ। অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রীও পড়াশোনার খরচ বহন করতে না পেরে বাইরে কাজে চলে যাচ্ছে। এই বাস্তবতা উপলব্ধি করে কয়েকজন শিক্ষক মিলে বিনামূল্যে শিক্ষাদানের উদ্যোগ নেন। রাজুয়া গ্রামে এক শিক্ষকের বাড়িতেই শুরু হয় ‘আমাদের পাঠশালা’। অভিভাবক স্বপন শেখ বলেন, “আমি টোটোচালক, বেশি অর্থ দিয়ে টিউশন পড়ান সম্ভব নয়। তাই আমার সন্তানকে এখানেই পড়াই। এখানে খুব ভাল ভাবে পড়াশোনা করান হয়, আমাদের কোনও টাকা দিতে হয়না।”আজ অভিভাবকরাও খুশি। কারণ প্রাইভেট টিউশনের মোটা টাকা খরচ করার সামর্থ্য নেই অনেকের। তাঁদের কথায়, আমাদের পাঠশালা এখন তাঁদের সন্তানের ভবিষ্যতের আলো।
বনোয়ারীলাল চৌধুরী