সংসারে চরম অভাব অনটন। বাবা পান বরজের কর্মী। প্রত্যন্ত গ্রামে বসবাস। বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটারেরও বেশি দূরে স্কুল। আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় সব বিষয়ে টিউশনিও জোটেনি। এক কথায় লড়াইটা সহজ ছিল না। এর পরেও প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর জেদকে সম্বল করে যাবতীয় প্রতিকূলতাকে হেলায় হারিয়েছে উচ্চমাধ্যমিকে রাজ্যে নবম মালদহের টিনা। ভালুকা রাইমোহন মোহিনীমোহন বিদ্যাপীঠের কলা বিভাগের ছাত্রী টিনার প্রাপ্ত নম্বর ৪৯০। উচ্চমাধ্যমিকে রাজ্য সেরার তালিকায় স্থান দখল করে সকলকে চমকে দিয়েছে মেধাবী টিনা। উচ্চমাধ্যমিকের পড়াশোনা হয়তো সম্ভবই হতো না, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সাহায্য না পেলে। মাধ্যমিকের পর স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ, মোবাইল কেনার জন্য সরকারি প্রকল্পের টাকা, আর কন্যাশ্রী প্রকল্পের আর্থিক অনুদান পড়াশোনার কাজে অত্যন্ত সাহায্য করেছে টিনাকে। দারিদ্র আর অনটনের কথা মনে করে খুশির দিনেও ক্যামেরার সামনে কথা বলতে গিয়ে যেন গলা ধরে আসে টিনার। গল্পের বই পড়া, বেড়ানো, এসব তাঁর বরাবরের পছন্দ। আর প্রিয় বিষয় ইংরেজি। উচ্চমাধ্যমিকের পর অন্যান্য মেধাবীদের মতো ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা সরকারি আমলা নয় বরং ভবিষ্যতে ইংরেজি অনার্স নিয়ে পড়ে বিমান সেবিকা হয়ে আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখে টিনা।
advertisement
আরও পড়ুন: উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম দশে ২৭২ জন! সবার সেরা দিনহাটার অদিশা, জানুন বিস্তারিত...
মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম ফতেপুরের বাসিন্দা টিনা। ছোটখাটো দালান বাড়িতে এখনও প্লাস্টার বা রঙের প্রলেপ পড়েনি। ঘরের সব দরজা-জানলাও অসম্পূর্ণ। ছোটবেলা থেকেই বহু কষ্টে মেয়েকে পড়িয়েছেন পান বরজের কর্মী বাবা নারুগোপাল থোকদার। মা রাসেশ্বরী দেবী গৃহবধূ। দুই ভাইবোনের মধ্যে বড় টিনা। এত দিন কোনও রকমে মেয়েকে পড়িয়েছেন। কিন্তু, এমন মেধাবী মেয়েকে উচ্চশিক্ষা দেবেন কী ভাবে? ক্যামেরার সামনে কেঁদে ফেলেন বাবা। সরকারি বা কোনও সহৃদয় ব্যক্তির সাহায্য না পেলে ভবিষ্যতে মেয়ের পড়াশোনা চালানো হয়তো সম্ভব হবে না, বলছেন অসহায় বাবা।
টিনার সাফল্যে উচ্ছ্বসিত তাঁর স্কুল। গরিব পরিবারের মেয়ে অবশেষে প্রতিকূলতা কাটিয়ে প্রাপ্য ফল পেয়েছে। ভবিষ্যৎ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারি সাহায্য দেওয়া হোক অভাবী মেধাবী টিনাকে, সরকারের কাছে এমনই আর্জি জানিয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক।
Sebak DebSarma
