#কলকাতা: 'দেশে জুডিশিয়ারি আছে। বিচার পাবেন। সবাই আছে আপনার পাশে। দেখুন না ২দিনেই আপনার বদলির বন্দোবস্ত করে দেবো।' হাই কোর্টের ১৭ নং এজলাসে কথা গুলো বলা শেষ হওয়ার কয়েক মুহূর্ত পরেই নির্দেশ লেখায় হাত দিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
হাইকোর্ট বারের একাংশের অসহযোগিতা। রাজ্য সরকারের প্যানেলভুক্ত আইনজীবীদের গরহাজিরা। প্রতিকূল পরিবেশে কার্যত একাই ১০০ করে দেখালেন বুধবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এদিন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় শুধু মামলাকারীর মুখ থেকে সওয়াল শোনেন। আর মামলার সমস্ত নথি খুঁটিয়ে নিজে পরীক্ষা করে দেখেন। তারপর নির্দেশ। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে উলুবেড়িয়ার স্কুলকে নো-অবজেকশন শংসাপত্র তুলে দিতে নির্দেশ।
advertisement
৮ মাসের অপেক্ষা শেষ শিক্ষিকার। সুবিচার পাওয়া শুরু। বর্ধমান চাণ্ডুল বাসিন্দা সংস্কৃত শিক্ষিকা স্নিগ্ধা দত্ত(বসু)। তাঁর অসুস্থতা রয়েছে ২০১৫ থেকে। ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ জয়েন করেন স্কুলে। চাকরি উলুবেড়িয়া জয়পুরে। জয়পুর সুরঙ্গময়ী গার্লস হাইস্কুলের শিক্ষিকা তিনি। ১৩ অগাস্ট ২০২১ বদলির প্রথম আবেদন করেন। চতুর্থ বার বদলির আবেদন ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১। অসুস্থতার জন্য হাওড়া জেলা হাসপাতালের বোর্ড তাঁর শারীরিক পরীক্ষা করে। বোর্ড জানায় ২৮৪ কিমি যাতায়াত করে কাজ করা শিক্ষিকার পক্ষে সম্ভব নয়। এরপরেও শিক্ষিকার বদলির আবেদন মঞ্জুর করা হয়নি স্কুল থেকে।
বুধবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর পর্যবেক্ষণে জানায়, একটি সরকারি হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের ডাক্তারদের সুনির্দিষ্ট পরামর্শ মেনে একজন মহিলা শিক্ষককে ১৪২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত স্কুলে যেতে বাধ্য করা যায় না। যাতায়াতের পথ ২৮৪ কিলোমিটার। এমনকি যদি আবেদনকারী স্কুলের কাছাকাছি একটি থাকার ব্যবস্থা করেন, তবে কি তিনি স্কুল এলাকার ভাড়া বাড়ি থেকে তার শ্বশুর বাড়িতে বা তার বাবার বাসভবনে আসবেন না; একই সঙ্গে মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের পরামর্শের বিরুদ্ধে যাওয়া মানে তার জীবনের ঝুঁকি নেওয়া। জয়পুরের স্কুলের নেওয়া সিদ্ধান্ত বাতিল করে দিয়েছে একক বেঞ্চ। ২৯ এপ্রিল দুপুর দুটোর মধ্যে নো-অবজেকশন দিতে নির্দেশ স্কুলকে।
১২ মে মধ্যে এসএসসি'র কাছে বদলির বিষয়টি পাঠাবেন হাওড়া ডিআই। ১৯ মে মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবে স্কুল সার্ভিস কমিশন। তারপরে বাড়ির কাছাকাছি স্কুলে বদলির জন্য সিদ্ধান্ত নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে। উল্লেখ্য, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, রাজ্য, এসএসসি, স্কুলের তরফে কোনও আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না শুনানিতে। শুধু মামলাকারী আর বিচারপতি। অসম পরিবেশে বিচারের কাজ চালু রাখার জন্য অভিনব পথ নেন বিচারপতি।
আরও পড়ুন : খোদ কলকাতায় তথ্য লুকিয়ে ফাঁপড়ে স্কুল, পুলিশ পাঠিয়ে কড়া নির্দেশ হাই কোর্টের!
এজলাসে উপস্থিত আইনজীবীদের সাহায্য নেন তিনি। আইনজীবী এক্রামূল বারি, আইনজীবী ফিরদৌস শামিম তাঁদের সাধ্যমতন আদালতকে সহযোগিতা করেন। বিচারপতির পর্যবেক্ষণে জানান, ৫ বছরের কিছু কম সার্ভিসের কারণে এই বদলির আবেদন অগ্রাহ্য করা যায় না। সরকারি হাসপাতালের বোর্ড জানাচ্ছে ২৮৪ কিলোমিটার যাতায়াত শিক্ষিকার জন্য ঝুঁকির।কলকাতা থেকে দীঘা বা তালসারি দূরন্ত থেকেও যা বেশি।