শাস্ত্র মতে দেবতা আর অসুরের সমুদ্রমন্থন হয়েছিল এই শ্রাবণ মাসে। আর এই মন্থনেই উঠে আসা বিষ নিজ কণ্ঠে ধারণ করে সৃষ্টি কে বাঁচিয়েছিলেন। তারপরেই মহাদেব অপরনাম নীলকণ্ঠ হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকে।
শৈব তীর্থস্থানগুলোর অন্যতম দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার পতিরাম ধাম। মন্দিরের দায়িত্বে রয়েছেন হরিহরানন্দ গিরি জির কথায়, সারাবছরই এই মন্দিরে ভক্তদের ভিড় লেগেই থাকে। বিশেষ করে শ্রাবণ মাসে ভক্তদের সমাগম বেশি হয়। শ্রাবণ মাসের প্রতি সোমবার শিবের মাথায় জল ঢালতে অসংখ্য ভক্ত ভিড় করেন বাবার এই ধামে।
advertisement
এখানকার মন্দিরটি গম্বুজাকৃতির। মন্দিরের সামনে নাটমন্দির।আত্রেয়ী নদী থেকে স্নান করে ভেজা গায়ে দন্ডী কেটে বাবার মাথায় দুধ জল ঢালেন অনেক ভক্তবৃন্দ।এতে মনস্কামনা পূর্ণ হয় বলেভক্তদের বিশ্বাস। সেই কারণে বছরের বিশেষ তিথিতে অসংখ্য ভক্ত এই নদীতে স্নান করেন।
শ্রাবণ মাসের প্রথম রবিবার বিকেল থেকে পতিরামে ভক্তদের লাইন পড়ে যায়।দূর দূরান্ত থেকে আসা পূর্নার্থীরা কেউ হেঁটে তো কেউ গাড়ি করে বক্স, ডিজে বাজিয়ে নাচতে নাচতে সকালে এসে ধামে পৌঁছন। পুজোকে ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রচুর পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকও মোতায়েন করা হয়।
শ্রাবণ মাসের প্রথম সোমবার থেকে শেষ সোমবার পর্যন্ত এই জেলার পাশাপাশি পার্শবর্তী জেলা এমনকি ভিনরাজ্য থেকেও প্রায় লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম হয় এই মন্দিরে। ধাম সূত্রে জানা যায়, ৭৫ বছর আগে স্বামী সুদামা গিরি নামে এক শিব ভক্ত ছিলেন। তিনি আত্রেয়ী নদীতে স্নান করার সময় প্রতিদিনই কিছু একটায় ধাক্কা খেয়ে শব্দ শুনতে পেতেন। একদিন জল কমে যেতেই তিনি দেখেন সেখানে একটি শিবলিঙ্গ রয়েছে।
তা তুলে এনে পতিরাম হাটের কাছারি ঘরের পাশে স্থাপিত করেন। এরপর তিনি পতিরামের রানিহাট সংলগ্ন একটি জায়গা মন্দির তৈরির জন্য দান করেন। সেখানে ছোট করে মন্দির করে সেই শিবলিঙ্গ স্থাপন করে পুজো শুরু হয়। ধীরে ধীরে বাবা ভোলানাথের মহিমা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। তিনি কাশি ও বদ্রিনাথ থেকে আরও দু’টি শিবলিঙ্গ এনে মন্দিরে স্থাপন করে। বর্তমানে মন্দিরে তিনটি শিবলিঙ্গ রয়েছে।
আরও পড়ুন: North Dinajpur News: তেরঙ্গা মিষ্টি এবার বাজার কাঁপাচ্ছে! স্বাধীনতা দিবসের আগে ভিড় রাজীবের দোকানে
আত্রেয়ী নদী থেকে পাওয়া শিবলিঙ্গের নাম ট্যাংকেশ্বর। যেহেতু জলের নীচে টং টং শব্দ হতো, তাই এই নাম রাখা হয়েছে ট্যাংকেশ্বর। বাকি দু’টির বিশ্বনাথ ও বৈদ্যনাথ নাম দেওয়া হয়েছে। প্রতিবছর, শ্রাবণ মাসে এই ধামকে ঘিরে সড়কের উপর বসে বিরাট মেলা।যাকে ঘিরে এক উৎসব মুখর পরিবেশ তৈরি হয়।
সুস্মিতা গোস্বামী