মহারাষ্ট্রে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৩০ হাজার ৫৩৫ জন। যা একদিনে আক্রান্তের নিরিখে সব চেয়ে বেশি। যে ভাবে করোনা সংক্রমণ ছড়াচ্ছে তাতে একে সেকেন্ড ওয়েভ বা করোনার দ্বিতীয় ঝড় হিসেবে চিহ্নিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। সচেতনতা না থাকায় ও করোনাকে হালকা ভাবে নেওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি মানুষকে সচেতন থাকার বার্তাও দিচ্ছেন। তাঁর কথায়, আমি সকলের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, করোনাকে হালকা ভাবে নেবেন না। করোনা সচেতনতা মেনে চলুন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। মাস্ক পরুন ও স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। এটাই কিন্তু করোনা থেকে আমাদের বাঁচাতে পারে। আর কোভিশিল্ড ও কোভ্যাকসিন রয়েছে, যা এই দ্বিতীয় ঝড় কমাতে পারে।
advertisement
এর আগে বুধবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। বৈঠকে তিনি জানান, যদি আমরা এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি, তা হলে কিন্তু এটা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে। আমাদের তাই এখনই সংক্রমণ আটকাতে হবে।
এদিকে চিকিৎসকরা বলছেন, দ্বিতীয় ঝড়ে করোনার উপসর্গ কম থাকতে পারে। কিন্তু ছড়াবে অনেক বেশি। তাই এক্ষেত্রে মানুষের সহযোগিতা অত্যন্ত প্রয়োজন।
ফলে আগের মতো আবারও করোনাবিধি মেনে চলতে হবে। যেহেতু অফিস খুলেছে, স্কুল খুলেছে এবং সকলে বাইরে বের হচ্ছেন, তাই কিছু জিনিস মেনে চলতে হবে। এই পরিস্থিতিতে কী করবেন, কী করবেন না, দেখে নেওয়া যাক-
কী করবেন-
*স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে হবে। ২০ সেকন্ড অন্তর সাবান দিয়ে হাত ধোয়া জরুরি।
*বাইরে বের হলে সঙ্গে স্যানিটাইজার রাখুন।
*বাইরে বের হলে মাস্ক পরুন।
*হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু পেপার রাখুন মুখে, যদি এই দুই সঙ্গে না থাকে তবে মুখে হাত বা কনুই চাপা দিন।
*বাইরে বের হলে হাঁচি-কাশির সময়েও মাস্ক খুলবেন না।
*ব্যবহার করা টিস্যু পেপার ডাস্টবিনে ফেলুন, যত্রতত্র ফেলবেন না।
*মাস্ক, গ্লোভস ও PPE কিট যাতে পরিবেশবান্ধব হয়, তা মাথায় রাখুন। না হলে তা পরিবেশের ক্ষতি করবে। এটি থেকে সংক্রমণও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
*রাস্তাঘাটে, কোনও কিছুর লাইনে বা অফিসে সকলের সঙ্গে ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন।
*পারলে বাড়ি থেকেই কাজ করুন।
*যদি শরীর খারাপ থাকে, তাহলে বাড়িতেই থাকুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
কী কী করবেন না -
*নাক, চোখ, মুখে হাত লাগাবেন না।
*ভিড় জায়গা এড়িয়ে চলুন।
*শপিং মল, জিম, রেস্তোরাঁ এড়িয়ে চলুন। এই সব জায়গায় সামাজিক দূরত্ব মেনে চলুন।
*অকারণে ঘুরে বেড়াবেন না।
*যত্রতত্র থুতু ফেলবেন না।
এসবের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের তরফেও নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। যাতে বলা হয়েছে-
১) সরকারি সমস্ত দফতরে ও অফিসে ফের থার্মাল গানের ব্যবস্থা করতে হবে। ঢোকার আগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক। কারও জ্বরের উপসর্গ থাকলে, তাকে কোয়ারান্টিনে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
২) অফিসে বেশি লোকজনের আনাগোনা রুখতে হবে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। এর জন্য অনুমতি প্রয়োজন।
৩) যে কোনও বৈঠক অনলাইন করার ব্যবস্থা করা হবে। যেখানে অকারণে বেশি লোকজন থাকবে, তা কমানো হবে।
৪) সরকারি ক্ষেত্রেও প্রয়োজন না থাকলেও ট্রাভেল করা এড়িয়ে যেতে হবে।
৫) যতটা সম্ভব মেইলের মাধ্যমে সরকারি নথি পাঠাতে হবে। ফাইল বা হার্ড কপি পাঠানো এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
৬) যে কোনও জিনিসের ডেলিভারি এন্ট্রি পয়েন্টে দিয়ে দিতে হবে ও যে কোনও রকমের চালান সেখান থেকেই দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
৭) জিম, ক্রেশ ইত্যাদি বন্ধ করে দিতে হবে।
৮) কাজের জায়গা, বিভিন্ন অফিস প্রতি দিন যেন স্যানিটাইজড হয়, সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
৯) অফিসে যাতে সকলের কাছে প্রতিনিয়ত স্যানিটাইজার, সাবান ও জল পৌঁছায়, সে দিকে নজর দিতে হবে।
১০) যাঁদের রেসপিরেটরি কোনও সমস্যা হবে বা শরীর খারাপ হবে, তাঁদের প্রত্যেককে কাজের জায়গায় জানাতে হবে। এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রকের নির্দেশ অনুযায়ী কোয়ারান্টিনে থাকতে হবে।
১১) সকলকে আবেদন করা হচ্ছে, কোয়ারান্টিনে থাকাকালীন যেন ছুটি মঞ্জুর করা হয়।
১২) বয়স্ক, অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের প্রতি বাড়তি নজর দেওয়া জরকার। সামনের সারিতে কাজ করা সকলকেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে ও বিশেষ করে সচেতন থাকতে হবে।