#কলকাতা: ভর্তি হওয়ার পর স্বাভাবিক থাকলেও করোনা ধরা পড়ার পর সব ওলট পালট। ঘুম ছুটে গিয়েছে একটা গোটা মেডিক্যাল কলেজের। এমনিতেই করোনা আক্রান্ত শয়ে শয়ে রোগীকে নিয়ে রীতিমতো নাজেহাল অবস্থা কলকাতা মেডিকেল কলেজের। তার উপর দোসর আপাত মানসিক ভারসাম্যহীন করোনা আক্রান্ত এক যুবক। দিন পাঁচেক আগে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে হাওড়া সাঁকরাইলের বাসিন্দা বছর পঁয়ত্রিশের এই যুবক ভর্তি হন। ভর্তি হওয়ার পর স্বাভাবিক অবস্থাতেই ছিলেন এই যুবক। এরপর করোনা উপসর্গ জ্বর, কাশি দেখা দেওয়ায় করোনা পরীক্ষা করানো হলে করোনা পজিটিভ হয়। এরপরই তাঁকে নবনির্মিত সুপার স্পেশালিটি ব্লকের সাততলায় স্থানান্তরিত করা হয়। এরপরই শুরু হয় আসল গন্ডগোল।
advertisement
শনিবার থেকেই করোনা আক্রান্ত এই যুবকের কার্যকলাপে অতিষ্ঠ হয়ে যায় চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে হাসপাতালের নিরাপত্তায় থাকা বউ বাজার থানার পুলিশকর্মীরা। এখানে আসার পর থেকেই অসংলগ্ন আচরণ করতে শুরু করেন এই যুবক। শনিবার দুপুরে হাসপাতালের কর্মীরা খাবার দিতে গেলে বালিশ তোশক নিয়ে তাঁদের দিকে ছুড়ে মারেন এই যুবক। এরপর খাটের তলায় কখনও লুকিয়ে পড়ছেন, কখনো বা ওয়ার্ড থেকে বাইরে পালাবার চেষ্টা করছেন। ওয়ার্ডের দরজা আটকেও নিস্তার নেই। কাচের জানলা খুলে বাইরে ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। সে এক ভয়াবহ কান্ড! চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রত্যেকেই হতবাক হয়ে যান যুবকের কার্যকলাপে।
রবিবার বিকেলের পর থেকে করোনা আক্রান্ত এই যুবক কালঘাম ছুটিয়ে দেন গোটা হাসপাতালের। সন্ধ্যার পরই তিনি হঠাৎই দৌড়ে দশ তলার ছাদে চলে যান। পিপিই পড়ে হাসপাতাল কর্মীরা তাঁকে ধরতে গেলে কোনও সময় ভেংচি কেটে, কখনও বা ছাদ থেকে ঝাঁপ দেওয়ার হুমকি দেন তিনি। সেই অবস্থায় কর্মীরা তাঁকে ধরতে গেলে লাফ দিয়ে ছাদের কার্নিশে দাঁড়িয়ে পড়েন। অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে তাঁকে ওয়ার্ডে নিয়ে গেলেও শেষ রক্ষা হয় না। রাতের দিকে আবার ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে সাত তলা থেকে এক তলায় নেমে আসেন ওই যুবক । আবার তাঁকে ধরতে গেলে নীচে লাফিয়ে পড়েন । তাতে হালকা আঘাত লাগে করোনা আক্রান্ত এই যুবকের। আবারও তাঁকে বেডে নিয়ে এসে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়।
সারারাত ঘুমানোর পর সকালবেলা এই যুবকের পের শুরু হয় হম্বিতম্বি! এরপর শুরু হয় ওটা ওয়ার্ড ঘুরে ঘুরে তাঁর বেসুরো গান। অন্যান্য করোনা আক্রান্ত রোগীরা এই যুবকের কাজকর্মে হাসবেন না কাঁদবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না । তবে দুপুরের পর থেকে যুবক অনেকটাই নিস্তেজ হয়ে যান । বাকি সময় আর সে রকম জ্বালাতন করেননি কাউকে।মেডিক্যাল কলেজের কোভিড হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা এক নার্স ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নার্স বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তির মানসিক অসুস্থতা রয়েছে। এ ধরনের রোগীদের সম্পূর্ণ আলাদা রাখা প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের এখানে মানসিক ব্যক্তি কোভিড আক্রান্ত হলে, তাঁদের আলাদা করে রাখার কোনও ব্যবস্থা নেই। তাই তাঁকে সকলের সঙ্গেই রাখতে হচ্ছে। আমাদের অবস্থা হয়েছে ভয়াবহ। করোনা আক্রান্ত অন্য রোগীদের সামলাবো, না কি এই যুবককে? ভালয় ভালয় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান উনি, এটাই চাই।’’