৫০ বছর আগেই থেমে গিয়েছিল জীবন। স্বাভাবিক জীবন। তবু বেঁচে আছেন, বলা ভাল বেঁচে থাকতে হয় এমন মানুষদের। নিউ আলিপুরের প্রদীপ গোস্বামীর জীবনে ওঠা-নামাই রোজনামচা। কাজ করতেন ছাপাখানায়। সময় কালটা তখন ১৯৭০। ট্রেন দুর্ঘটনায় ডান পা কাটা যায়। তবে মনের জোর অসম্ভব। খোঁড়া পা নিয়ে উঠে দাঁড়াতে পারতেন না। স্ক্রাচে ভর দিয়ে কাটিয়ে দিলেন জীবনের অধিকাংশ সময়।
advertisement
লকডাউনে বন্দি খাকার পর ধীরে ধীরে ছন্দে ফেরার চেষ্টা করছে শহর কলকাতা৷ আনলক হওয়ার প্রথম পর্যায়ের ধীরে ধীরে সচল হচ্ছে সবকিছুই৷ গত পঞ্চাশ বছর ধরে কার্যত গৃহবন্দি থাকা প্রদীপবাবুকে অবশ্য মাসের একটি দিন 'আনলক' হতেই হয়৷ আর তখন তাঁর ভরসা কলকাতা পুলিশ৷ দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর ধরে এভাবেই চলছে৷
করোনা, লকডাউন, আনলক ওয়ান এই সময় পথে বেরিয়েছেন কেন? প্রদীপ গোস্বামীর উত্তর, "মাসে একটা দিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতেই হয়। নিউ আলিপুর ব্যাংক থেকে এই দিনটায় টাকা তুলি। ৪০০০ টাকা তুলি, এতেই সারা মাসের সংসার চলে। পা নেই, খুঁড়িয়ে এভাবে আসতে কষ্ট হয় কিন্তু কোনও উপায় নেই।"
ট্রাফিক পুলিশ কর্মী এবার একজন বাইক চালককে ধরে অনুরোধ রাখলেন, দুর্গাপুর ব্রিজের ওপারে প্রদীপ গোস্বামীর বাড়িতে তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। প্রথমটা কিন্তু কিন্তু করলেও পুলিশের অনুরোধে পরে রাজি হয়ে গেলেন বাইক চালক। বাঁ হাতে দু'টি স্ক্রাচ ও ডান হাতে বাইক শক্ত করে ধরলেন প্রদীপ বাবু। যাওয়ার আগে জানিয়ে গেলেন, কলকাতা পুলিশ কর্মীরাই তাঁর হাত, তাঁর পা। ৫০ বছর কলকাতা পুলিশের এমন পরিষেবায় তিনি মুগ্ধ। লকডাউন, আনলক-১ ও সাধারণ দিনের মধ্যে কোন পার্থক্য তিনি অন্তত খুঁজে পান না।
ARNAB HAZRA
