ইসলামপুর ব্লকের শিয়ালতোর গ্রামের বাসিন্দা আশুতোষ বিশ্বাস। স্ত্রী দিপালী বিশ্বাস এবং তার দুই প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে সংসার। ভ্যান রিক্সা চালিয়ে কোনক্রমে দিন গুজরান করতেন। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সারা রাজ্যে কড়া বিধিনিষেধ ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে ভ্যান রিক্সার কাজও প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। সংসার চালাতে বাধ্য হয়েই আশুতোষবাবু দৈনিক মজুরের কাজ বেছে নেন।
advertisement
দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারে দুই দুজন সন্তান প্রতিবন্ধী। নিজেদের খাওয়ার জোগাতে যখন হিমশিম খেতে হচ্ছে তখন এই প্রতিবন্ধী সন্তানদের ভরণপোষণ তাদের পক্ষে চরম কষ্টকর হয়ে পড়ছে। প্রতিবেশী দুই যুবক তাদের হাতে সপ্তাহে দশকেজি চাল, আলু সহ বেশী খাদ্য সামগ্রী তুলে দিচ্ছেন। এভাবেই চলছে তাদের সংসার। বিশ্বাস পরিবার দুই প্রতিবন্দী সন্তানকে নিয়ে অনাহার অর্ধাহারে কোনক্রমে দিন কাটছিল।
সন্তানরা সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে জন্ম নিলেও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা বিকলাঙ্গ হয়ে পড়েন। প্রতিবন্দী দুই যুবক উজ্বল এবং উৎপলের মা দিপালী দেবী জানান, বিষয়টি নজরে আসার পরই ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলেও অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি।এক সময় তারা দুইজনে বসে পড়লে তাদের চিকিৎসা করা ছেড়েই দিয়েছেন। প্রতিবেশী অনেকেই বলেছেন ভেলোরে চিকিৎসা করালে তারা দুইজনেই সুস্থ হয়ে উঠবেন। নিজেদের পেটে যখন ভাত জোটানোই কষ্টকর হয়ে পড়ছে সেখানে তাদের চিকিৎসা করা এটা তারা ভাবতেই পারেন না। তবে দুই ছেলের প্রতিবন্দী সংশাপত্র শিলিগুড়ির উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে করাতে পেরেছেন।
স্ত্রী ও দুই ছেলের জন্য বিভিন্ন জায়গায় লড়াই করলেই প্রায় হতাশ হয়ে পড়েছেন আশুতোষবাবু। এই সংবাদ গত ১৩ জুন নিউজ ১৮ বাংলা ফেসবুক পেজে দেখে 'আবেগ' নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তাদের পাশে দাঁড়াবার সিদ্ধান্ত নেন। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের হাতে একমাসের চাল, ডাল,তেল, নূন সহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তাদের হাতে তুলে দেন। সংস্থার সদস্য রানা প্রতাপ ঝাঁ নিউজ ১৮ বাংলার প্রতিনিধিদের ধন্যবাদ জানান।
রানা প্রতাপ বাবু জানান, নিউজ ১৮ বাংলা এই সংবাদ না করলে তারা এই দুঃস্থ অসহায় পরিবারের কথা জানতেই পারতেন না।সংবাদ দেখার পর তারা আশুতোষবাবুর বাড়িতে এসে খাদ্য সামগ্রী তুলে দিলেন। পরবর্তীতে তাদের কোন প্রয়োজন হলে তারা পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।
একমাসের খাদ্য সামগ্রী এটা তাদের কাছে অলৌকিক। এই বিপুল পরিমান খাদ্য সামগ্রী পেয়ে খুশী বিশ্বাস পরিবার।আশুতোষ বাবু জানান, অভাবের সংসার এই সামগ্রী তাঁর খুবই উপকারে লাগবে। ইসলামপুর পঞ্চায়েত সমিতি দুই প্রতিবন্ধী কিশোরের মানবিক ভাতা চালুর প্রতিশ্রুতি দিলেও আজ পর্যন্ত সেই ভাতা চালু না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন পরিবারটি। তবে ইসলামপুর বিডিওর কাছ থেকে কিছু খাদ্য সামিগ্রী পেয়েছেন তাঁরা। সেই সামগ্রী দিয়েই চলছে তাঁদের পরিবার।