যেহেতু রাখী মণ্ডল বিশ্বাস নামে ওই মহিলা করোনা আক্রান্ত ছিলেন, তাই প্রসূতি ওয়ার্ডের নির্দিষ্ট অপারেশন থিয়েটারে তাঁকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি৷ সুপার স্পেশ্যালিটি বিল্ডিং-এর ভিতরেই অস্থায়ী অপারেশন থিয়েটার তৈরি করে অস্ত্রোপচার সারেন চিকিৎসকরা৷ করোনা অতিমারির মধ্যে চার দিক থেকে ভেসে আসা দুঃসংবাদের মধ্যে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকদের এই সাফল্য যেন এক ঝলক টাটকা বাতাসের মতো৷
advertisement
উত্তর ২৪ পরগণার বনগাঁর বাসিন্দা ৩৩ বছরের রাখী মণ্ডল বিশ্বাস। করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ১২ জুন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। সেই সময় রাখী ৩৩ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। যদিও তাঁর শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক ছিল। রাখী দেবীর একটি সন্তান আছে। তাঁর রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা অনেক কমে যাওয়ায় সেই সময় মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা প্রথমে সন্তান প্রসবের ঝুঁকি নিতে চাননি। যদিও শারীরিক অবস্থা একটু স্থিতিশীল হওয়ায় হাসপাতালের তরফে পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। কিন্তু রবিবার হঠাৎ করেই রাখী দেবীর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। তাকে ভেন্টিলেশনে দিতে হয়। তাঁর রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ৬০ থেকে ৬২-র মধ্যে ঘোরাফেরা করছিল। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য দপ্তরের বিশেষ নির্দেশে আজ, সোমবার সকালে রাখীদেবীর অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেয় মেডিক্যাল বোর্ড।
সংক্রমণের ভয়ে মেডিক্যাল কলেজের প্রসূতি বিভাগের অপারেশন থিয়েটারে এই অস্ত্রোপচার করা সম্ভব ছিল না। করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা যেখানে চলছে, সেই সুপার স্পেশ্যালিটি বিল্ডিং-এ অস্থায়ী অপারেশন থিয়েটার তৈরি করে সেখানেই রাখী দেবীর অস্ত্রোপচার করা হয়। বেলা বারোটা পাঁচ নাগাদ চিকিৎসকরা অসাধ্য সাধন করেন। ভেন্টিলেটরে থাকা রাখীদেবী কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। আনন্দে অপারেশন থিয়েটারে উপস্থিত চিকিৎসকদের চোখেও জল এসে যায়। যদিও প্রিম্যাচিওর বা সময়ের আগেই জন্ম নেওয়ায় এই কন্যাসন্তানকেও ভেন্টিলেটর সাপোর্টে দিতে হয়। অন্যদিকে অস্ত্রোপচারের পর রাখী দেবীর রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ৮৪-তে ওঠে।
মেডিক্যাল কলেজে অসাধ্য সাধন করা চিকিৎসক দলের অন্যতম চিকিৎসক পূজা বন্দ্যোপাধ্যায় ভৌমিক জানান, 'এই অপারেশন আমাদের কাছে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের ছিল। তবে আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে সবকিছু ভালোভাবে শেষ করতে পারব। যখন আমরা ওই প্রসূতির গর্ভ থেকে সন্তান বার করি তখন সত্যিই আমাদের চোখেও জল এসে গিয়েছিল। এখন মা এবং শিশুকে বাঁচিয়ে রাখা আমাদের কাছে আরেকটা বড় চ্যালেঞ্জ।'
অন্যদিকে রাখীদেবীর পরিবার এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না যে এরকম ঘটনাও ঘটতে পারে। তাঁদের কাছে মেডিক্যাল কলেজের এই চিকিৎসকরা এখন ঈশ্বরের এক অন্যরূপ।
