বিদেশ থেকে আসা বিভিন্ন মানুষ সরকারি নিয়মকে তোয়াক্কা না করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন যত্রতত্র। আর তার ফল ভোগ করতে হচ্ছে অসংখ্য মানুষকে। বিশ্বজুড়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। ভারতেও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এমনকি মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের। পশ্চিমবঙ্গে করোনা আক্রান্ত দু'জন। তবে দুই করোনা আক্রান্তের বিরুদ্ধেই উঠল চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার অভিযোগ। লন্ডন ফেরত দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা ১৮ বছর বয়সী এক তরুণ। তিনি প্রথম করোনা আক্রান্ত হন। তার ক্ষেত্রে এবং তার পরিবারের ক্ষেত্রেও প্রচুর দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের অভিযোগ ওঠে। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের উচ্চপদস্থ আমলা মা এবং চিকিৎসক বাবার একমাত্র সন্তান 'home quarantine' বা গৃহ পর্যবেক্ষণে থাকার নিয়ম না মেনে অনেক জায়গাতেই ঘুরে বেরিয়েছিল। ফলে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল সর্বত্রই।
advertisement
আর এবার দ্বিতীয় করোনা আক্রান্ত যুবকের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটল না। দক্ষিণ কলকাতার পণ্ডিতিয়া রোডের এক অভিজাত আবাসনের বাসিন্দা ইংল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয় পাঠরত ২২ বছর বয়সী এই যুবক ১৩ মার্চ কলকাতা ফেরেন। ইংল্যান্ডের হিথরো বিমানবন্দর, দিল্লি বিমানবন্দর এবং কলকাতা বিমানবন্দরের থার্মাল স্ক্রিনিংয়ে ধরা পড়েনি যুবকের শরীরের তাপমাত্রা বেশি। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে তাঁকে নির্দেশ দেওয়া হয় গৃহ পর্যবেক্ষণে থাকার। কিন্তু কে শোনে কার কথা! অভিযোগ, ওই যুবক বাড়িতে ফিরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়েই আবাসনের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ান। এমনকি তাঁর পরিবারও নিষেধ করেনি তাঁকে। এরপর বিকেলে গড়িয়াহাটের একটি রেস্তোরাঁয় খেতে যান তিনি। যুবকের বাবার স্যানিটারি ফিটিংসের দু'টি বড় দোকান রয়েছে। একটি কালীঘাটের এসপি মুখার্জি রোডে, অন্যটি ঈশ্বর গাঙ্গুলী স্ট্রীটে। শনিবার এই দুটি দোকানেই যান ওই যুবক। জানা গিয়েছে, দুটি দোকানে মোট ১৭ জন কর্মী রয়েছেন। তাদের সংস্পর্শে আসেন যুবক। পাশাপাশি, সেদিন দোকানে এসেছিলেন যারা তাঁদেরও সংস্পর্শে আসেন তিনি। শনিবার বিকেলে পার্কস্ট্রিটের একটি হোটেলেও যান। রবিবার সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে রবীন্দ্র সরোবর লেকে যান, তারপর সাউথ সিটি মল। সোম- মঙ্গল দু' দিনই বাবার দুটি দোকানে যান। সোমবার লেক মলে যান এই যুবক। মঙ্গলবার পার্ক স্ট্রীটের একটি রেস্তোরাঁয় খেতে যান। ফলে অসংখ্য মানুষের সংস্পর্শে আসেন এই যুবক।
বুধবার থেকে অবস্থার পরিবর্তন হয়। বুধবার ওই যুবক জানতে পারেন, যে ইংল্যান্ডে তার দুই সহপাঠী, একজন ছত্রিশগড়ের রায়পুরের বাসিন্দা, অপরজন চন্ডীগড়ের বাসিন্দা-দুজনেই দেশে ফেরার পর করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বুধবার সন্ধ্যা থেকে যুবকের কাশি হতে শুরু করে, সর্দি হয়। বৃহস্পতিবার সকালে পরিবারের লোকেদের সঙ্গে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে আসেন তিনি। ওই যুবককে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা শারীরিক অবস্থা দেখে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করে। এরপর তার লালারস পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় বেলেঘাটা নাইসেডে। বৃহস্পতিবার সকালে জানা যায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এই যুবক।
করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরই যেভাবে বিভিন্ন জায়গায় এই যুবক ঘুরে বেরিয়েছে, তাতে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্যদফতর। যুবক যে বিমানে করে এসেছিল, সেই বিমানে তার সহযাত্রীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। কলকাতায় যে সমস্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছিলেন এই যুবক, তাঁদের খোঁজ চলছে। প্রত্যেককে 'হোম কোয়ারান্টিন'-এ বা গৃহ পর্যবেক্ষণে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর যুবকের বাবা-মা ভাই এবং জেঠুকে গৃহ পর্যবেক্ষণে থাকতে বলেছে। যুবকের দাদু এবং দিদাকে বয়স জনিত কারণে রাজারহাটের কোয়ারান্টিন সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। যদিও যুবকের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ আরও বহু মানুষকে বিপদ সীমার মধ্যে ঠেলে দিল তা বলাই বাহুল্য।
AVIJIT CHANDA