করোনা ভাইরাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে হইচই শুরু হয়েছিল চলতি বছরের প্রথম থেকেই। কিন্তু আমাদের দেশে আম জনতার মধ্যে করোনার তেমন সচেতনতা ছিল না সেই সময়। তাই বিপদ না বুঝে অনেকেই পূর্ব সূচি অনুযায়ী চলে গেছিলেন বিদেশে। অনেকেই ফিরে আসেন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। আবার অনেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন। তা সত্ত্বেও সুস্থ ব্যক্তিদের যেতে হয়েছে কোয়ারেন্টাইনে। এই কারণেই দিল্লিতে কোয়ারান্টিনে দিন কাটাচ্ছেন বাগুইআটির গুপ্ত দম্পতি।
advertisement
ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে সিঙ্গাপুরে থাকা তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের কর্মী ছেলের কাছে গিয়েছিলেন তাঁরা। সেখানে দেড় মাসের ওপর কাটিয়ে গত রবিবার দেশে ফেরেন। সিঙ্গাপুর থেকে দিল্লি হয়ে তাঁদের কলকাতায় ফেরার টিকিট ছিল। কিন্তু ২২ তারিখ দিল্লি বিমানবন্দরে অবতরণ করে কলকাতার কানেক্টিং বিমান ধরার কথা ছিল তাঁদের। ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাঁদের প্রায় বেলা ১২টা হয়ে যায়। কিন্তু সেখান থেকেই তাঁদের পাঠানো হয় বিমানবন্দরের বাইরে করোনা ভাইরাসের জন্য অস্থায়ী ভাবে তৈরি করা মেডিকেল সেন্টারে। গুপ্ত বাবু বলেন, 'আমাদের মতো অনেকেই ছিলেন যাদের কানেক্টিং বিমান ধরার টিকিট ছিল। কিন্তু কাউকেই ধরতে দেওয়া হয়নি।'
হাজার হাজার যাত্রীর সঙ্গে গুপ্ত দম্পতি সেই অস্থায়ী ক্যাম্পের বাইরে বেলা ১২টা নাগাদ চেকআপের জন্য লাইনে দাঁড়ান । প্রায় ১৩ ঘন্টা পর রাত একটা নাগাদ চেকআপ প্রক্রিয়া শেষ হয়। যদিও তাদের দুজনের শরীরের করোনা ভাইরাসের কোনও উপসর্গ দেখা যায়নি। তবুও তাদের কোয়ারেন্টাইনে যেতে বলা হয়। সেখানেই পাসপোর্টও জমা রাখা হয়। কোয়ারেন্টাইনের জন্য তাদের দুটি বিকল্পের কথা বলা হয়। প্রথমটি হল সরকারী ব্যবস্থাপনা আর দ্বিতীয়টি কোনও বেসরকারি হোটেল যেটি এয়ারপোর্ট অথরিটি কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র তৈরি করেছে। তবে হোটেলে থাকলে তার খরচ সরকার বহন করবে না। গুপ্ত দম্পতি সরকারী ব্যবস্থাপনায় থাকার সিদ্ধান্ত নেন। রাত দুটো নাগাদ বাসে করে তাঁদের পৌঁছে দেওয়া হয় দ্বারকার পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে। সেখানে তাঁদের জন্য একটি ঘর বরাদ্দ করা হয়। গুপ্ত বাবু বলেন, 'এখানকার ব্যবস্থাপনা যথেষ্টই ভালো। খাওয়া দাওয়ার কোনও রকম অসুবিধা নেই। সকলকেই একটি করে থার্মোমিটার দেওয়া হয়েছে। প্রতি ঘন্টায় শরীরের তাপমাত্রা মেপে লিখে রাখতে বলা হয়েছে। দিনে তিনবার ডাক্তার আসছেন। তারা দেখে যাচ্ছেন। অনেক রকম শারীরিক পরীক্ষা হচ্ছে।'
পাশাপাশি যদি কারোর অন্য কিছু প্রয়োজন হচ্ছে সেটিও বাইরে থেকে এনে দেওয়া হচ্ছে।
গুপ্ত বাবু দীর্ঘদিন ধরে অন্যান্য শারীরিক অসুবিধার জন্য ওষুধ খান। সেটিও তাকে এনে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এসবের পরও দুশ্চিন্তার মেঘ ঘনিয়েছে তাদের মনে। ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন শেষ হবে ৫ এপ্রিল। দেশজুড়ে লকডাউন তারপরও চলবে বেশ কয়েক দিন। তখন তাঁরা কী করবেন? গুপ্ত বাবু বলেন, 'কোয়ারেন্টাইনের ১৪ দিন শেষ হলে আমাদের এই আস্তানা ছেড়ে দিতে হবে। তখনও লকডাউন শেষ হবে না। এখান থেকে বেরিয়ে কোথায় যাব? কলকাতা ফেরার কোনও রকম যানবাহন পাব কি না বুঝে উঠতে পারছিনা।'
Soujan Mondal
