গত কয়েকদিন আগেই রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর রীতিমত হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছে রাস্তায় বেরোনো প্রত্যেককে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। যে কোনও মূল্যে মুখ ঢাকা দিয়ে প্রত্যেককে রাস্তায় বেরোতেই হবে। কিন্তু কে শোনে, কার কথা! রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তেই মাস্ক না পরে অনেককেই রাস্তায় দেখতে পাওয়া যায়। রীতিমত নজরদারি করে পুলিশ প্রশাসনকে মানুষদের বাধ্য করা হয় মাস্ক পড়তে। সুমিত বিশ্বাস, কলকাতা শিয়ালদহ লেবুতলা পার্কের পাশে বাড়ি। বাবা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা অফিসার ছিলেন, বেশ কয়েক বছর আগে মারা যান। কিন্তু সুমিতকে শিক্ষা দিয়েছিলেন শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার। আর লক ডাউনের সময় সেই শিক্ষাকেই পাথেয় করে সুমিত নেমে পড়েছে এক অসম যুদ্ধে।
advertisement
বাড়িতে বৃদ্ধা মা আর আদরের পোষ্য কুকুর। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তনী সুমিত সকাল থেকে উঠে এই মাস্ক বানাতে বসেন। এই মাস্ক দেখলে আপনার লোভ লাগবে। হলুদ রঙের গেঞ্জি কাপড় পাইকারি দরে কিনে সেই কাপড় কেটে তার ওপর রং-তুলি নিয়ে সুমিতের সাধনা চলছে। কোন মাস্কের উপর লেখা, 'একদিন ঝড় থেমে যাবে, পৃথিবী আবার শান্ত হবে', কোনটায় আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে, আর তার সঙ্গে কোন মাস্কের ওপর লেখা 'চোখে চোখে কথা বল, মুখে কিছু বলো না'। কোনটাতে দুর্গা, কোনোটায় শিবের ছবি, আবার কোনও মাস্কের উপর রবীন্দ্রনাথের চিত্র আঁকা।
আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে সুমিত একের পর এক মাস্ক বানিয়ে চলেছেন। কিন্তু কোনটাই ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নয়। সকাল থেকে মাকে পাশে নিয়ে এই মাস্ক তৈরি করা আর তারপর চেনা-পরিচিত প্রত্যেককে এই মাস্ক বিলি করে সময় কেটে যাচ্ছে সুমিতের। লক ডাউনের সময় সবাই যাতে রাস্তায় বেরিয়ে মাস্ক পরে, তা নিয়েই বদ্ধপরিকর সুমিত। বিক্রি নয়, পয়সা উপার্জন নয়, সমাজের কাজে লাগবে তার এই সামান্য প্রচেষ্টা। সুমিতের বক্তব্য, প্রত্যেকে যদি কয়েকদিন একটু নিয়ম মেনে চলি, সরকার প্রশাসন যে নির্দেশ দিচ্ছে, তা যদি সবাই মেনে চলি, তাতে ক্ষতি কি! সরকার যে নির্দেশ দিচ্ছে, তা যদি আমরা কয়েক দিন পালন করি, তাতে আমাদের সবার লাভ। আগামী প্রজন্ম যাতে একটা সুন্দর পৃথিবী পায়, তার জন্যই আমার এই ছোট্ট প্রচেষ্টা।
ABHIJIT CHANDA