কোচবিহারের রাজাদের সময় থেকেই এই মনসা পুজোর প্রচলন। যা আজও আগের মতই চলে আসছে। শ্রাবণ মাসের সংক্রান্তিতে এই মনসা পুজোর আসর বসে। তবে এই পুজো কোচবিহারে বিষহরি পুজো নামেই বেশি প্রচলিত। প্রথমে কোচ রাজবাড়িতে পুজো হতো। পরবর্তীতে বিষহরি পুজো স্থানান্তরিত হয় রাজবাড়ি লাগোয়া ডাঙরাই মন্দির ও রাজমাতা মন্দিরে। পরে মদনমোহনের বাড়ি বা মন্দির স্থাপনের পর থেকে এই পুজো স্থানান্তরিত হয় সেখানে। কোচ রাজারা বংশ পরম্পরায় দেবী মনসাকে বিষহরি রূপে পুজো করতেন। সেই প্রথা আজও বজায় আছে। এই মনসা পুজোকে ঘিরে বসে বিষহরি পালাগানের আসর।
advertisement
আরও পড়ুন: যাদবপুরের এক মৃত্যুতে আঁধার কত পরিবারে! ছেলে জেলে, চিন্তায় ঘুম উড়েছে অভাবী মা-বাবার
রাজ পুরোহিত হিরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য জানান, এই পুজোতে মন্দিরের মালি অমর কুমার দেব চাঁদ সওদাগর রূপে বংশ পরম্পরায় বাঁ হাতে দেবী মনসাকে পুজো দিয়ে আসছেন। রাজ আমল থেকে এই প্রথা চলে আসছে। মূলত রাজবংশী মানুষেরা এই পালাগানগুলি করে থাকেন। চারদিন ধরে মদনমোহন মন্দির চত্বরে বিষহরি পালা গানের আসর চলবে।
কোচবিহারের ভেটাগুড়ির শোলা শিল্পী ধীরেন্দ্র মালাকার জানান, কোচবিহারের মনসা পুজো বহু বছরের পুরনো। মদনমোহন মন্দির তৈরি হওয়ার আগে এই পুজো ডাঙরাই মন্দিরে হতো। তাঁর পরিবার বংশপরম্পরায় এই বিষহরি পুজোর শোলার কাঠামো তৈরি করে আসছে।। সুউচ্চ এই শোলার কাঠামোর মধ্যে চাঁদ সওদাগর, বেহুলা-লখিন্দরের কাহিনী-সহ আরও বিভিন্ন ছবি তুলে ধরা হয়।
মদনমোহন বাড়িতে মনসা পুজো দিতে আসা ভক্ত সাথী বসাক, রাখী সাহারা জানান, পুজোর সময় মন্দিরের মধ্যে ভক্তদের ভির উপচে পড়ে। মদনমোহন বাড়ির কাঠামিয়া মন্দিরের মধ্যে এই পুজোর আয়োজন করা হয়। উত্তরবঙ্গের লুপ্তপ্রায় বিষহরি পাল গান শোনার জন্য দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসে মানুষ। সব মিলিয়ে রাজ আমলের ঐতিহ্য ও রীতি মেনেই এখনও জমজমাটভাবেই মদনমোহন বাড়িতে বিষহরি পুজোর আয়োজন করা হয়।
সার্থক পণ্ডিত