কোচবিহারের ভেটাগুড়ি এলাকার শোলা গ্রামের শিল্পীরা তৈরি করেন বর-বউয়ের মুকুট, বিয়ের মালা, ঠাকুরের মালা, নানান দেবতার মূর্তি। একটা সময় এইসব জিনিসের ব্যাপক চাহিদা ছিল। ঠাকুর সাজানো থেকে শুরু করে বিয়ের বর-কনের সাজ, সবেতেই লাগত শিল্পীদের তৈরি এইসব সুন্দর সুন্দর সামগ্রী। তবে এখন প্লাস্টিক আর অন্য সমস্ত জিনিসের দাপটে দিন গিয়েছে এই শোলা শিল্পীদের। একসময় এই শিল্পের প্রধান উপকরণ শোলা আসত অসম থেকে। কিন্তু অসম থেকে আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন কোচবিহারের শোলা গ্রামের শিল্পীরা পুরোপুরি কলকাতার উপর নির্ভর করেন।
advertisement
আরও পড়ুন: স্বাস্থ্য কেন্দ্রেই পানীয় জলের সমস্যা! 'দিদির কবচ' নিয়ে বেরিয়ে সমাধানের আশ্বাস মন্ত্রীর
এই গ্রামেরই এক বাসিন্দা ধীরেন্দ্র নাথ মালাকার জানান, "এই গ্রামে মোট ৫০ থেকে ৬০ টি পরিবার বসবাস করে। এরা মূলত এই শোলার জিনিসপত্র বানিয়েই নিজেদের জীবন যাপন করছে। তবে যত দিন যাচ্ছে ততই মানুষ শোলার তৈরি জিনিসপত্রের ব্যবহার কমিয়ে দিচ্ছে।"
বর্তমানে শোলা শিল্পীরা যেটুকু যা কাজ করেন সেটাও ভাল হাটে বিক্রি করতে তাঁদের নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই গ্রামের বাসিন্দারা উত্তরবঙ্গের প্রাচীন রীতিনীতি বজায় রেখে শোলা দিয়ে বিভিন্ন ঠাকুর দেবতার মূর্তি তৈরি করেন। রাজবংশী সমাজে এই ধরনের শোলার মূর্তি দিয়ে পুজোপার্বণ করার রীতি রয়েছে। তাই এখনও পর্যন্ত এই শোলার ঠাকুর কিছুটা হলেও বিক্রি হয় কোচবিহারের বিভিন্ন গ্রামে।
ধুঁকতে ধুঁকতেই নিজেদের এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন শিল্পীরা। কিন্তু তাঁরা সরকারিভাবে শিল্পীর স্বীকৃতি পাননি। এদিকে সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য তাঁরা রাজনৈতিক দল থেকে প্রশাসন, সর্বস্তরেই বিশেষ সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন। শোলা গ্রামের বাসিন্দাদের বক্তব্য, বর্তমানে যা পরিস্থিতি তাতে সরকার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে না দিলে তাঁরা আর বেশিদিন এই পেশায় থাকতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে এমন এক বিরল শিল্প সম্পূর্ণভাবে বাংলার বুক থেকে হারিয়ে যেতে পারে।
সার্থক পণ্ডিত